টিএসসি থেকে শাহবাগ, দোয়েল চত্বর থেকে বাংলা একাডেমির প্রবেশদ্বার আর স্বাধীনতার স্মৃতিবিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলায় প্রবেশের ফটক। সর্বত্রই লোকে লোকারণ্য। হাতে হাতে ফুল। অবয়বে ফুটে উঠেছে ভালোবাসার আনন্দের ঝিলিক। অধীর ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে যেন ভালোবাসা ও বইয়ের সঙ্গে সেতুবন্ধনের চেষ্টা।
ভবিষ্যতের জীবনসাথীর হাতে প্রিয় লেখকের পছন্দের বইটি তুলে দেওয়ার জন্য গ্রন্থমেলার প্রতিটি স্টলের সামনেই ছিল ভালোবাসায় উদ্দীপ্ত তারুণ্যের ভিড়। ফাগুনের আগুনলাগা সন্ধ্যায় ভালোবাসার আবির মেখে বইয়ের দুর্নিবার আকর্ষণে সমগ্র মেলাপ্রাঙ্গণে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে উচ্ছল তারুণ্য। শুধু ঘুরতে আসাতেই সীমাবদ্ধ থাকেননি ] ভালোবাসার দিনের দর্শনার্থীরা। বই কিনে তবেই বাড়ি ফিরেছেন। বিশেষ করে প্রায় সবার হাতেই ছিল রোমান্টিক উপন্যাস।
এদিন সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে উপন্যাস। তবে কবিতার বইও বিক্রি হয়েছে অন্যদিনের তুলনায় অনেক বেশি। সব শ্রেণীর দর্শনার্থী চতুর্দশতম দিনে মেলায় এসেছেন। এর মধ্যে অনেকেই এসেছেন সপরিবারে। ভালোবাসার দিনে একুশের চেতনাকেও শানিত করেছেন মেলায় আগতরা।
দর্শনার্থীদের হাতে হাতে বই দেখে মনে হয়েছিল মেলা তার সার্থকতা ফিরে পেয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে এবারের গ্রন্থমেলা গতবারের তুলনায় অনেক বেশি সফলতা পাবে এমন আশায় বুক বেঁধে আছেন প্রকাশকরা। রাজধানীর মিরপুর থেকে মেলায় ঘুরতে এসেছেন মিরপুর বিসিআইসি কলেজের উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্রী মাহফুজা তানহা। সঙ্গে ছিলেন তার সঙ্গী আলভী চৌধুরী। কথা প্রসঙ্গে তারা দুজন জানান, ভালোবাসায় সিক্ত গ্রন্থমেলায় এসে খুবই ভালো লাগছে।
কার বই বেশি পছন্দ_ এমন প্রশ্নের উত্তরে তারা জানান, হুমায়ূন আহমেদই তাদের প্রথম পছন্দ। শুধু হুমায়ূন আহমেদের বই কেনার জন্যই তারা মেলায় এসেছেন বলে জানান। হুমায়ূন আহমেদের আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তার রেশ পাওয়া গেছে অন্যপ্রকাশের স্টলের সামনে। গতকাল মেলার বিক্রি নিয়ে সব প্রকাশকই ছিলেন প্রফুল্ল। আবিষ্কার এবং আগামীর সামনেও দেখা গেছে প্রচুর ভিড়।
প্রত্যাশার চেয়েও গতকাল বেশি সাড়া পেয়েছেন প্রকাশকরা। তথ্যপ্রযুক্তির এই সময়ে বইপ্রেমীরা যেভাবে বই কিনছেন তাতে প্রকাশকরাও এ শিল্পকে নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন। সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় গতকাল শুক্রবার মেলা শুরু হয় সকাল ৯টায়। সকালে অমর একুশে উদযাপন উপলক্ষে শিশু-কিশোরদের সংগীত প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে গতকাল মেলার আয়োজন শুরু হয়। সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় আজও মেলা শুরু হবে সকাল ১০টায়।
যথারীতি চলবে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। এ ছাড়া সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত শিশুকর্নারে থাকবে শিশুপ্রহর।
নতুন বই ও মোড়ক উন্মোচন : গতকাল মেলার চতুর্দশতম দিনে নতুন বই এসেছে ১৯৬টি। এ ছাড়া উন্মোচিত হয়েছে ১০টি বইয়ের মোড়ক। প্রকাশিত বিষয়ভিত্তিক বইগুলোর মধ্যে রয়েছে গল্পের ৩৪, উপন্যাস ৪৫, প্রবন্ধ ১২, কবিতা ৪৫, গবেষণা ৩, ছড়া ৬, শিশুতোষ ২, জীবনী ৭, রচনাবলি ১, মুক্তিযুদ্ধ ১, নাটক ৪, বিজ্ঞান ৩, ভ্রমণ ৩, ইতিহাস ২, রাজনীতি ২, রম্য/ধাঁধা ৬, ধর্মীয় ১, অভিধান ১, সায়েন্স ফিকশন ১ এবং অন্যান্য ১৭টি।
গতকাল প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ রাইটার্স গিল্ড থেকে প্রকাশিত সরল সন্ন্যাসীর কাব্যগ্রন্থ 'মধ্যরাতের সূর্য'। বইটি পাওয়া যাচ্ছে বাংলা একাডেমি লিটলম্যাগ চত্বরের সাদা কাগজের স্টলে। অনুপাত এনেছে আবদুল আউয়াল মিন্টুর 'রাজনীতি ও রাজনৈতিক অর্থনীতি', নবরাগ এনেছে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর গল্পগ্রন্থ 'দরজাটা খোলো', প্রেস ইনস্টিটিউট এনেছে মোহাম্মদ শাহ আলমগীরের 'সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু', কাকলী এনেছে সুমন্ত আসলামের 'শত্রুর কবলে পাঁচ গোয়েন্দা', বিজয় প্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে বাংলা একাডেমিতে কর্মরত মীর তারিকুল ইসলাম সজীবের কাব্যগ্রন্থ 'আবার কবে হবে দেখা' ইত্যাদি।
মূল মঞ্চের আয়োজন : বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় 'হাজী মুহাম্মদ মুহসিন' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপিত হয়।
'মেকলে, মুহসিন ও তার এনাডাওমেন্ট ফান্ড' এবং 'হাজী মুহাম্মদ মহসিন : একটি অন্বেষণ' শীর্ষক পৃথক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যথাক্রমে আমজাদ হোসেন ও পার্থ সেনগুপ্ত। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অধ্যাপক ওয়াকিল আহমদ, শান্তনু কায়সার ও আবদুল বাছির। সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দলীয় সংগীত পরিবেশন করে বাংলাদেশ আওয়ামী শিল্পী গোষ্ঠী। একক সংগীত পরিবেশন করেন খুরশিদ আলম, মহিউজ্জামান চৌধুরী, খায়রুল আনাম শাকিল, নাসিমা শাহীন ফেন্সী, নবীন কিশোর, রোকসানা হোসেন, জয় শাহরিয়ার ও তানজিনা করিম স্বরলিপি।
'কলম লিখেছে কবিতা আমি তার প্রথম শ্রোতা'
চিত্রকর কবি খালিদ আহসানের 'কলম লিখেছে কবিতা আমি তার প্রথম শ্রোতা' বইমেলায় এসেছে। ব্রেইন চাইল্ড প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থটির প্রচ্ছদশিল্পী পূর্ণেন্দু পত্রী। পূর্ণেন্দুর অাঁকা ছয়টি ছবি খালিদের অষ্টম কাব্যগ্রন্থটির কবিতাসমগ্রকে শিল্প-কাব্যের মোহনায় বাঙময় করেছে। দাম ১৫০ টাকা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।