দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রথম ধাপে ৯৭ উপজেলায় ভোট আজ। স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও এটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও সংসদের বাইরে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। অস্তিত্বের লড়াইয়ের এ নির্বাচনকে উভয় দলই ব্যাপক গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটর করবে। ইতিমধ্যে স্থানীয়ভাবে দল-সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় সব চেষ্টাই চালানো হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ছাড়াও দুই দলের কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তবে দল-সমর্থিত প্রার্থীরা অংশ নিলেও অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট নিয়ে চরম শঙ্কায় বিএনপি। নিজেদের এ আশঙ্কার কথা গতকাল নির্বাচন কমিশনকেও লিখিতভাবে জানিয়েছে দলটি। আজ থেকে ছয় ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হচ্ছে। ৪৮৭ উপজেলার মধ্যে প্রথম দফায় ৯৭ উপজেলায় ১৯ ফেব্রুয়ারি, দ্বিতীয় দফায় ১১৭ উপজেলায় ২৭ ফেব্রুয়ারি এবং তৃতীয় দফায় ৮৩ উপজেলায় ১৫ মার্চ ভোটের দিন ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা নির্বাচনে কেন্দ্রীয়ভাবে কড়া নজরদারি রাখবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আজ সকাল থেকেই সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয়ে দলের সিনিয়র নেতারা সারা দেশে নির্বাচনী খোঁজখবর নেবেন। সাত বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সংশ্লিষ্ট জেলা নেতাদের সঙ্গে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে যোগাযোগ রক্ষা করবেন। এ ছাড়া দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির একটি প্রতিনিধি দলও ফলাফল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত ইসি কার্যালয়ে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করবে। সূত্রমতে, জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত অংশ না নেওয়ায় আওয়ামী লীগ অনেকটা ফাঁকা মাঠে গোল দিয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত অংশ নেওয়ায় এবার জনপ্রিয়তার প্রমাণ দেখানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে বিএনপির হাইকমান্ড গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে উপজেলা নির্বাচনকে। আজকের প্রথম দফা নির্বাচনকে এসিড টেস্ট হিসেবে দেখছেন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা। কারণ পাঁচ শতাধিক উপজেলায় কোন দলের প্রার্থী জয়লাভ করবেন এর নমুনা পাওয়া যাবে আজকের ফলাফলে। সকাল থেকেই আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, ওবায়দুল কাদের, নূহ-উল আলম লেনিন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, ডা. দীপু মনি, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা নির্বাচনের পরিস্থিতির ওপর নজরদারি করবেন। সাত বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা এতে সমন্বয় করবেন।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করা আমাদের প্রথম কাজ। যে কারণে ঢাকায় বসে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা তা নজরদারি করবেন।'
যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, 'আমরা সকাল থেকেই ধানমন্ডির অফিসে বসে সারা দেশে উপজেলা নির্বাচনের খোঁজখবর রাখব। জাতীয় নির্বাচনের পর উপজেলা নির্বাচনে বিএনপিসহ তাদের সহযোগীরা পরাজয়ের ভয়ে অহেতুক গোলযোগ সৃষ্টি করতে পারে। সে জন্য আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতা-কর্মীর প্রতি নির্দেশনা থাকবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দল-সমর্থিত প্রার্থীদের বিজয়ী করে আনার।'
আওয়ামী লীগের সূত্রমতে, সারা দেশে যাতে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সে লক্ষ্যে প্রয়োজনে প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য কেন্দ্র থেকে দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত সারাক্ষণ একটি পর্যবেক্ষণ টিম কাজ করবে। কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেলে কেন্দ্র থেকেই তৃণমূল নেতাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র। বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে অযথাই সহিংসতার পথ বেছে নিতে পারে, এমন আশঙ্কা নিয়েও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে দলীয় নেতা-কর্মীদের। এসব দিক বিবেচনায় রেখে আওয়ামী লীগও আজ সতর্ক দৃষ্টি রাখবে সারা দেশে। প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক সাংগঠনিক পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারেও আজ দলীয় প্রস্তুতি রয়েছে। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সকাল থেকেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি কমিটি আজ উপজেলা নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি মনিটর করবে। উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরেই কাজ করছেন তারা। কমিটির অন্য সদস্যের মধ্যে রয়েছেন দলের যুগ্ম-মহাসচিব মো. শাহজাহান, বরকতউল্লাহ বুলু, সালাহউদ্দিন আহমেদ, রুহুল কবীর রিজভী ও প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক কাজী আসাদুজ্জামান আসাদ। একক প্রার্থী দেওয়ার জন্য শেষ চেষ্টা চালিয়ে গেছেন তারা। জানা গেছে, এ কমিটিই আজ নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বসে উপজেলা নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। কোথাও কোনো অনিয়ম হলে তা নিয়ে ব্রিফও করবে তারা। এ কমিটি উপজেলা পর্যায়ে নানা দিকনির্দেশনাও দেবে। এ ছাড়া নানা অভিযোগ নিয়ে স্থানীয়ভাবে পুলিশ প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে নালিশ করার পাশাপাশি ঢাকায়ও ইসি সচিবালয়ে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখবে বিএনপি। অনিয়ম নিয়ে মাঠপর্যায় থেকে লিখিত অভিযোগ নির্বাচন কমিশনে পাঠানোর নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। দল সূত্র জানায়, হামলা-মামলা, গুম-খুনে বিপর্যস্ত বিএনপি ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় নিয়ে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে চায় দলটি। তবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণ নিয়ে ঘোর শঙ্কা রয়েছে তাদের। দলের তৃণমূল পর্যায় থেকে প্রতিদিন কেন্দ্রে র্যাব, পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসনসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দ্বারা প্রচার-প্রচারণায় নানাভাবে বাধার অভিযোগ আসছে। বিভিন্ন এলাকায় নেতাদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, ভয়ভীতি দেখানোসহ নানা হুমকির খবর পাওয়া গেছে। তবে উপজেলায় সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জাতীয় নির্বাচনের পর উপজেলা নির্বাচনেও সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে ইসি ব্যর্থ হয়েছে। এ নির্বাচনের প্রাক্কালে যৌথ বাহিনীর অভিযানের নামে বিরোধী দল সমর্থিত প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারে বাধা দেওয়া হচ্ছে। নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হচ্ছে। এ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। এদিকে গতকাল উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু না হওয়ার আশঙ্কা করে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ অভিযোগ করা হয়। দুপুরে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব সিরাজুল ইসলামের কাছে চিঠিটি পেঁৗছে দেন দলের যুগ্ম-মহাসচিব বরকতউল্লাহ বুলু ও রুহুল কবির রিজভী। পরে রিজভী আহমেদ সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে সরকারদলীয় প্রার্থীরা বিরোধীদলীয় প্রার্থীদের বাড়িঘরে হামলা করছেন। নারী-শিশুদের ওপর অত্যাচার করছেন। বিরোধীদলীয় প্রার্থীদের হয়রানি করতে মামলা দায়ের হচ্ছে। কমিশনের কাজ নির্বাচন যেন সুষ্ঠু হয় এর ব্যবস্থা করা। কিন্তু কমিশন নির্লিপ্ত। তারা নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে না। নির্বাচন যেন অবাধ ও সুষ্ঠু হয় এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।