মিরপুর-১২ নম্বর সিএনজি স্ট্যান্ড। ব্যাংক কর্মকর্তা হাসান মুস্তাফিজ এক সিএনজি চালকের কাছে গিয়ে শাহবাগ বারডেম হাসপাতালে যেতে চাইলেন। চালকের উত্তর, 'চলেন, ভাড়া ৩০০ টাকা।' মুস্তাফিজ ভাড়া কমানোর জন্য অনুরোধ করলেও চালক তাতে রাজি হননি। অগত্যা অসুস্থ বাবাকে নিয়ে দ্বিগুণের বেশি ভাড়ায় যেতে বাধ্য হলেন তিনি।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সজীবের মিডটার্ম পরীক্ষা চলছে। দীর্ঘক্ষণ বাসের অপেক্ষা করে যখন নিশ্চিত হলেন আর দেরি করলে পরীক্ষা দেওয়া হবে না তখন শ্যাওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে সিএনজি অটোরিকশায় ধানমন্ডি ১৫ নম্বরে তার ক্যাম্পাসে যেতে চান তিনি। এক সিএনজি চালক গন্তব্যে যেতে রাজি হয়ে বললেন, 'মিটার থেকে ৫০ টাকা বাড়ায়ে দিলে যামু।' আরও একটি শর্ত দিলেন চালক। বললেন, যদি ট্রাফিক পুলিশ জানতে চায়, তাহলে বলতে হবে মিটারে যাচ্ছি। পরীক্ষার জন্য সজীবকে বাড়তি টাকা দেওয়ার পাশাপাশি মিথ্যা বলার জন্যেও সিএনজি চালককে আশ্বস্ত করতে হল। মোস্তাফিজ ও সজীবদের মতো প্রতিদিনই সিএনজি চালকদের কাছে অসহায় আত্দসমর্পণ করতে হচ্ছে নগরীর যাত্রীদের। সিএনজিগুলোতে এখন কার্যকর মিটার আছে। যাত্রী উঠানোর পর সেগুলো চালুও করেন চালকরা। কিন্তু গন্তব্যে গিয়ে যাত্রীকে ভাড়া মিটারে নয় ভাড়া দিতে হয় আগে রফা করা চুক্তি অনুযায়ী। চুক্তির বাইরে এখন আর সিএনজি অটোরিকশায় চড়ার কথা ভাবাই যায় না। আর যে সব চালক চুক্তিতে নয়, মিটারেই গন্তব্যে যেতে চান তারা মিটার থেকে যাত্রীদের কাছ থেকে ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেশি আদায় করেন। মামলার ঝামেলা এড়াতে তারা যাত্রীদের পুলিশের কাছে মিথ্যা বলারও আবদার করেন। রাজধানীতে চলাচলকারী সিএনজি অটোরিকশায় সারা দিনের জন্য (সকাল ৫টা থেকে রাত ১২টা) মালিককে ৮০০ টাকা জমা দিতে হয়। আর অনেক মালিক এ সময়ে দুই শিফটে দুজন চালককে সিএনজি ভাড়া দিয়ে ১ হাজার ২০০ টাকা জমা আদায় করেন। এই বাড়তি জমার কারণে বেশি ভাড়া আদায় করেন বলে জানান চালকরা। মিরপুরে এক সিএনজি চালক বলেন, 'মিটারে চালিয়ে যে টাকা পাই তা দিয়ে জমার টাকাই উঠে না। পুলিশের রেকারে ধরা পড়লে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়।'
ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. হানিফ (খোকন) বলেন, মালিকদের অতিরিক্ত জমার কারণে চালকরা বেশি ভাড়া দাবি করেন। এখন ক্ষেত্রবিশেষে ৮০০ থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪০০ টাকা জমা নেন মালিকরা। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের জন্য আমরা বিআরটিএ'র কাছে প্রায় ১ হাজার ৩০০টি গ্যারেজের বিরুদ্ধে গত আড়াই বছরে অভিযোগ করলেও এর মধ্যে মাত্র ৬টি গ্যারেজ সিলগালা করা হয়েছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।