আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কর্পোরেট বেনিয়া আর বুদ্ধিজীবীরাই প্রকৃত ধর্ষণে উদ্বুদ্ধকারী,শাস্তি তাদেরই হওয়া উচিত

“‘স্বাধীনতা’ শুধুই একটা শব্দ নয়। এর অন্তর্নিহিত অর্থ অনেক তাৎপর্যপূর্ণ। শুধুমাত্র মুক্ত স্বাধীন জীবনযাপনের মাধ্যমেই স্বাধীনতার পূর্ণাঙ্গ রূপ বোঝা সম্ভব নয়। সমাজ জীবনের সকল ক্ষেত্রে তথা আমাদের চিন্তার স্বাধীনতা, কথা বলার স্বাধীনতা, রাষ্ট্র-পরিচালকদের কাজের সমালোচনার ক্ষমতা, নিজের ইচ্ছামত জীবনযাপনের স্বাধীনতা সবকিছুতেই আমরা স্বাধীনতা চাই। ” প্রতিবছর মার্চ আর ডিসেম্বর মাস আসলেই আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীগণ এ ধরণের কথার ফুলঝুরি ছোটাতে থাকেন।

স্বাধীনতারও যে কিছু নির্দিষ্ট সীমা থাকে আর মন চাইলেই মানুষ যে সবকিছু করতে পারে না, তা এইসকল বুদ্ধিজীবীদের মুখ থেকে কখনোই বের হবে না। কারণ তরুণদের আদর্শগুলোই তো সবখানে বলে বেড়ায়, নারী-পুরুষ অবাধে মেলামেশা করার জন্য। ধর্মের ভয় করে লাভ কি? যদি সব রকম মানুষের সাথে মেলামেশা নাই করতে পারলেন, যদি ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের মাংস নাই খেতে পারলেন, তাহলে কি লাভ আপনার অপার স্বাধীনতার? নানা রকম গবেষণা আর পরিসংখ্যানে বলা হয় সমাজে ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার কারণ হচ্ছে নারীর তুলনায় পুরুষের অনুপাত বেড়ে যাওয়া, শিক্ষিত নারীদের বেশি বয়সে বিয়ে করার প্রবণতা আর নারীদের শালীনভাবে চলাফেরা কমে যাওয়া প্রভৃতি কারণে। অর্থাৎ সব ক্ষেত্রেই নারীকেই দোষারোপ করা হচ্ছে তার নিজের সম্ভ্রমহানির জন্য। কিন্তু আসল কারণগুলো কেউ বলতে চায় না।

নারীকে এরকম মুক্ত স্বাধীন আচরণ করতে তো আমাদের কর্পোরেট সমাজব্যবস্থাই অনুপ্রাণিত করে। তারাই মেয়েদের বডি লোশন মেখে যত কম কাপড় পরে বাইরে ঘুরে বেড়াতে বলে। কারণ মেয়েরা যত কম কাপড় পরবে, ততই তাদের সৌন্দর্য আরও বিকশিত হবে। এই বেনিয়াদের নারী-মাংসের লালসা এতটাই বেশি যে একটি মেয়েকে বিকিনি পরিয়ে দাদার বয়সী একজন অর্ধনগ্ন লোকের প্রতি যৌন কামনা প্রকাশ করাতেও তাদের রুচিতে বাধেনা। সবাই বলে নারীকে বারবার পণ্য হিসেবেই কেন উপস্থাপন করা হয়? কিন্তু আসল কথা হচ্ছে, নারীকে পণ্য হিসেবে নয় বরং পুরুষের লালসা মেটানোর একমাত্র মাধ্যম হিসেবে যুগ যুগ ধরে উপস্থাপন করা হচ্ছে।

প্রাচীনকালে রাজা-বাদশারা তাদের হেরেমে রক্ষিতা হিসেবে শত শত নারী রাখত, আর বর্তমানকালে ব্যাপারটা একটু ভিন্ন। নারী স্বাধীনতা, নারীর স্বপ্নকে নতুন রূপ দেওয়া, আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন প্রভৃতি হৃদয়ভোলানো কথা বলে লাস্যময়ী তরুণীদের আকৃষ্ট করে আধুনিক কর্পোরেট বেনিয়ারা সুন্দরী প্রতিযোগিতার নামে তাদের মনমতো নারী পছন্দ করে আর বদলে তাদের এক লক্ষ থেকে দশ লক্ষ টাকা হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়। এখানেও কথা আছে,শুধুমাত্র দুএকজনের একবার দুইবার মনোরঞ্জন করলেই সবকিছু হয়ে গেল না। প্রতিযোগিতার ক্যামেরাম্যান থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট চ্যানেলের কর্তাব্যক্তির লালসা মেটানোর মাধ্যমেই একজন প্রতিযোগী ধীরে ধীরে সেরা সুন্দরী হওয়ার দিকে এগিয়ে যান। কোন প্রতিযোগী যদি সংকোচ বোধ করেন, তাতেও সমস্যা নেই।

বিচারকেরা তাদের উদ্বুদ্ধ করেন আরও বেশি খোলামেলা হতে। নাহলে বাদ দেওয়ার সংকেতও দিয়ে থাকেন। তখন একূল-ওকূল দুকূল যাওয়ার ভয়ে তরুণীরা স্বেচ্ছায় নিজেদের দেহ প্রদর্শন করে থাকেন। আর টিভিতে এসব সল্পবসনা বাঙালি নারীকে দেখে দূর গাঁয়ের রায়বাবুর ছেলে স্বপনেরও যৌবনজ্বালা উথলে ওঠে। আর তা মেটানোর জন্যই মাঝরাতে পাশের বাড়ির সলিম শেখের মেয়ে জরিনাকে জাপটে ধরে উত্থিত অংশকে শান্ত করে।

কিন্তু এই ঘটনাটাই পরবর্তীতে ছাপা হয় যে দীর্ঘদিন ধরে উত্যক্ত করার পরে সাড়া না পেয়ে অবশেষে মেয়েটিকে ধর্ষণ করল পাশের বাড়ির ছেলেটি। আড়ালের ঘটনা আড়ালেই থেকে যায়। আর মাঝখান থেকে নারীকে স্বাবলম্বী করার দায়িত্ব নিয়ে প্রতিবছর নতুন নতুন ফুলের স্বাদ আস্বাদন করে নেয় কর্পোরেট দুনিয়ার তথাকথিত গুণীজনেরা। আর সমাজের ভাল চাওয়া, সমাজকে প্রগতিশীল পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য যারা দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা মাথা খাটিয়ে নিজের মূল্যবান চিন্তাগুলো অকাতরে সমাজের জন্য বিলিয়ে দিচ্ছেন,তারা তো ধর্ষণকে পরোক্ষভাবে উসকিয়ে দিয়েই যাচ্ছেন। নারীপুরুষের অবাধ মেলামেশাকে তারা শুধু পবিত্র করার মধ্যে নিজেদের দায়িত্বকে সীমাবদ্ধ রাখেননি, বিয়ে নামক সামাজিক বন্ধনকেও তারা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলেছেন।

তাদের মতে, নারী- পুরুষের মেলামেশা অবাধ হওয়া উচিত। বিয়ে নামক ক্ষুদ্র একটি বন্ধনে বেঁধে ফেলে মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করা নিষ্প্রয়োজন। তরুণীদের পশ্চিমা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক পোশাকে অভ্যস্ত হতে প্রায় প্রতিদিনই এনারা দিস্তা দিস্তা কাগজ শেষ করেন। তারাই বা কি আর করবে, তারাই বা আর কি করবে? সুশীল সমাজের অন্তর্ভুক্ত হলেও তারাও তো পুরুষ মানুষ। কচি কচি মাংস দেখলে তাদের জিপারও তো ছিঁড়ে যেতে চায়।

তাই সমাজ সংস্কার আর নৈতিকতার কথা বলে দিনের বেলা মাথায় হাত বুলালেও অন্ধকারে ওই একই তরুণীর বুকের সুঘ্রাণ নিতে কুণ্ঠাবোধ হয়না। আরেক ধাপ এগিয়ে আমাদের জনাব ইকবাল পারলে তার মেয়ের জন্য ৩৬৫ দিনে ৩৬৫ টা ছেলেকে তার মেয়ের সাথে সেটআপ করান। শুধু পুরুষদের একতরফা দোষ দিয়েও লাভ নাই। আজকের সমাজ ব্যবস্থায় নারীই নারীর শত্রু হয়ে গিয়েছে। ধর্ষণ বিষয়ক মহিলা বুদ্ধিজীবীদের অবস্থান দিয়ে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি যার নাম মনে পড়ছে, তিনি হলেন ‘মহাশ্বেতা দেবী’।

কলকাতার এ যাবতকালের চাঞ্চল্যকর হেতাল পারেখ ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে যখন ধনঞ্জয় চ্যাটার্জিকে ফাঁসির হুকুম দেওয়া হয় তখন তিনি এর বিরোধিতা করে বলেছিলেন, “ধর্ষককে ফাঁসি নয়,বরং প্রথমবার ভুলের জন্য ক্ষমা করে দিন, তাকে শুধরানোর সুযোগ দিন”। এইসব আগাছা বুদ্ধিজীবীদের জন্যই আমাদের তরুণীরা প্রতিদিন একটু একটু করে শরীরকে অনাবৃত করছে মানে ধর্ষিত হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। একসময় রাশিয়াকে বলা হত মগজধোলাইয়ের কারখানা। আর এখন আমাদের চারপাশের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ আধুনিকতার নামে প্রতিনিয়ত যে মগজ ধোলাই করে যাচ্ছে তা যেন কার চোখেই পড়ছে না, বা পড়লেও বাস্তব জীবনে প্রতিবাদ করার মত সাহসটুকুও সঞ্চারণ করতে পারছে না। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৯ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.