বাংলাদেশের নির্বাচনের আগেই তিস্তার জল গড়াক, চাইছে নয়াদিল্লি। সে জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে পাশে পাওয়ার একটা শেষ চেষ্টা করতে চলেছে তারা। বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ ১৬ ফেব্রুয়ারি দু’দিনের ঢাকা সফরে যাচ্ছেন। তার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে গোটা বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবেন খুরশিদ। তাঁর কথায়, “পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সম্মতি না-নিয়ে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তির পথে এগোবো না।
মমতা আমার পুরনো বন্ধু। তাঁর সঙ্গে বিশদে এই চুক্তি নিয়ে আলোচনা করে, তবেই আমি ঢাকা যাব। ”
বিদেশ মন্ত্রকের কৌশল, হইচই না-করে অত্যন্ত ‘সন্তর্পনে এবং চুপচাপ’ রাজ্য সরকারের সঙ্গে দৌত্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। সাউথ ব্লক ভাল করেই জানে, সময় অল্প। আগামী বছরই বাংলাদেশে ভোট।
তার আগে চুক্তিটি সম্পন্ন করার জন্য ঢাকার তরফ থেকে প্রবল চাপ রয়েছে। বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী দীপু মণির কথায়, “আমরা অত্যন্ত আশাবাদী। তিস্তা এবং স্থলসীমান্ত চুক্তি দু’টি নিয়েই ভারত সরকারের যথেষ্ট সদিচ্ছা রয়েছে। স্থলসীমান্ত চুক্তি তো দু’দেশের মধ্যে হয়েই রয়েছে। আশা করি ভারত সংসদে এটা পাশ করিয়ে নেবে।
” এই ‘সদিচ্ছা’কে বাস্তবে রূপদান করতে আগামী মাসেই মমতার সঙ্গে সমঝোতায় আসতে একটা মরিয়া চেষ্টা শুরু করা হবে দিল্লির পক্ষে। অন্য দিকে রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় আজ জানিয়েছেন, আগামী মাসে তিস্তা নিয়ে তিনি নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। সারা বছরের জলপ্রবাহ নিয়ে কল্যাণবাবুর রিপোর্ট হাতে পেলে মমতাও একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারবেন বলে মনে করছে দিল্লি।
খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের সিদ্ধান্তের জেরে মনমোহন সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলে নিয়েছে তৃণমূল। তার পর ক্রমশই বেড়েছে কংগ্রেস-তৃণমূল সংঘাত।
তার মধ্যেও কী ভাবে মমতার সঙ্গে তিস্তা-দৌত্য সম্পন্ন করা যায়, আপাতত তারই কৌশল রচনায় ব্যস্ত সাউথ ব্লক এবং কংগ্রেস নেতৃত্ব।
প্রতিবেশীদের মধ্যে গত চার বছরে বাংলাদেশই একমাত্র স্বস্তি দিতে পেরেছে দিল্লিকে।
ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ সারন সম্প্রতি বলেছেন, “সীমান্তে অনুপ্রবেশ এবং ভারত-বিরোধী জঙ্গি ডেরাগুলি বন্ধ করার প্রশ্নে ঢাকার এই সরকার অভূতপূর্ব সাহায্য করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার অস্থির এবং সন্ত্রাসপূর্ণ প্রেক্ষাপটে এই পদক্ষেপ খুবই জরুরি ছিল। ”
প্রশাসনিক স্তরে এই প্রশ্নও উঠেছে, যে চুক্তি জাতীয় স্বার্থে এত জরুরি, তা বাস্তবায়নের জন্য কেন্দ্র কেন আরও মরিয়া হবে না? রাজ্যের অমত অগ্রাহ্য করেই তিস্তা চুক্তির পথে কেন এগিয়ে যাওয়া হবে না?
উত্তরে খুরশিদ জানাচ্ছেন, “বিদেশনীতির প্রশ্নে রাজ্যের মতামত নেওয়াটা বাধ্যতামূলক নয়।
কিন্তু এ ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গকে বাদ দিয়ে তো এই চুক্তি বাস্তবায়নই করা যাবে না। ”
আজ জাতীয় জলসম্পদ পরিষদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের সেচমন্ত্রী রাজ্য সরকারের বর্তমান অবস্থানের কথাই উল্লেখ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, “কোনও একটি রাজ্যের স্বার্থকে উপেক্ষা করে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা যায় না। ” তাঁর দাবি, প্রধানমন্ত্রীও বৈঠকে আশ্বাস দিয়েছেন, রাজ্যের মত নিয়ে তবেই পরবর্তী পা ফেলা হবে।
সুত্র ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।