বোকারা ভাবে তারা চালাক, চালাকরা ভাবে তারা চালাক। আসলে সবাই বোকা। বোকার রাজ্যে আমাদের বসবাস
আমি ছোটবেলা থেকে খুব চঞ্চল প্রকৃতির ছেলে, তবে আমার কোন বায়না নেই। শুধু একটু চুজি, খুঁতখুঁতে। তাই বলে আমি যে কোন কিছুর জন্য জেদ ধরে থাকি এমন নয়।
একটু বুঝিয়ে বলি। ধরুন জামা-কাপড়ের কথা। হয়ত ঈদের জামাটাই আমার পছন্দ হল না, তাই বলে আমি মুখ গোঁজ করে বসে থাকতাম না। আমি পুরনো যে কোন জামা গায়ে দিয়ে হাসি মুখে ঈদগায়ে গিয়ে নামাজ পড়ে আসতাম, বন্ধুদের সাথে খেলায় মেতে উঠতাম। শুধু ঐ জামা, যা আমার পছন্দ হয় নাই, তা পড়তে বললেই আমি বেঁকে বসতাম।
একই ব্যাপার আমার খাবারের ব্যাপারেও; প্রয়োজনে না খেয়ে আরামে থাকতে পারি, কিন্তু খাবার আমার মনমত না হলে খেতে পারবো না। তো এই আমি বর্তমানে এক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কাজ করছি। আজ সন্ধ্যায় আমি মা-বাবা’কে এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করে বাসায় এলাম, তারা আমার ছোট আপু, যে ইতালিতে থাকে, তার কাছে মাস তিনেকের জন্য বেড়াতে গিয়েছিলেন।
মা বাসায় এসে প্রথমেই যে কথাটি বললেন, “কিরে তুইতো শুঁকিয়ে কাঠ হয়ে গেছিস...”
মা-বাবা ইতালি যাওয়ার পর থেকে আমি বাসায় একা ছিলাম। রান্না-বান্না তো দুরের কথা, আমি চা পর্যন্ত রাঁধতে পারি না।
ছোট খালা কয়েকদিন খাবার পাঠিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু আমি অনেক বুঝিয়ে নিষেধ করেছি, গত আড়াই মাসের বেশী সময় ধরে আমি রাতে টোষ্ট অথবা পাউরুটি সাথে সালাদ খেয়ে কাটিয়েছি, দুপুরে হালকা লাঞ্চ। মা দেশে থাকা কালে রোজ হটপট করে একগাদা খাবার দিয়ে দিতো লাঞ্চের জন্য। আমি বরাবরই ভোজন-রসিক মানুষ। ফলে নব্বই কেজি ছুঁই ছুঁই ওজন, সাথে সেমি-বিশাল ভুঁড়ি।
মা দেশে না থাকায় ভাবলাম এই ফাঁকে একটু ফিটনেস এর চেষ্টা করা যাক। চুজি আমি নিজেকে বদলেছি, ফলাফল পঁচাশি কেজি ওজনের আমি আড়াই মাসে পাঁচ কেজি ওজন কমিয়েছি। টার্গেট সত্তর কিলো; এন্ড আই ডিটারমাইন্ড দ্যাট আই ক্যান ডু ইট”
“কই? তুমি অনেকদিন পরে দেখছো তাই এমন লাগছে। বরং তুমি অনেক মুটিয়েছো” আমি হাসতে হাসতে আমার রুমে চলে গেলাম
এরপর কয়েকদিন রাতে খেতে বসে মা অবাক হয়ে দেখলেন আমি কৌটো থেকে বিস্কিট নিয়ে খেতে বসলাম। পঞ্চম দিন মা জিজ্ঞাসা করলেন “সমস্যা কি?” আমি বললাম কিছু না, ওজন কন্ট্রোল করছি।
পরেরদিন রাতে খেতে বসে দেখি ঘরে কোন রুটি-বিস্কিট নেই। কাল রাতেও প্রায় অর্ধেক কৌটো বিস্কিট ছিল, গেল কোথায়? মা’র দিকে চাইতেই দেখি মুচকি হাসছে, আমি দেখছি খেয়াল করে গম্ভীর হয়ে গেলেন। বুঝলাম মা’র কাজ, সব তিনি সরিয়েছেন। শেষে বললেন, “ঘরে কিছু নাই যখন আয় আজ ভাত খেয়ে নে”। কিছু না বলে অল্প একটু ভাত নিয়ে বসলাম।
মনে মনে খুব রাগ করলাম।
পরদিন দুপুরে এক কলিগের জন্মদিন উপলক্ষ্যে এক রেস্টুরেন্টে পার্টি দিল। আমি অনেক অমত করা সত্তেও আমাকে ঐ পার্টিতে যেতে হল। ঢাকার নাম করা রেস্টুরেন্টের লোভনীয় খাবার-দাবার সব। খাবো না খাবো না করেও অনেক খেলাম।
খাওয়ার পর কেমন হাঁসফাঁশ লাগছিলো। রাতে বাসায় এলাম, হাতে রুটি-বিস্কিটের প্যাকেট। মা তা দেখে মুখ কালো করে ফেলল। খাবার টেবিলে এসে দেখি গোমরা মুখে বাবার সাথে কথা বলছে। আমি রুটির প্যাকেট টেবিলে রেখে বসতেই মুখ আরও কুঁচকে গোমড়া হয়ে বসলো।
তার এই কালো মুখ দেখে খুব মায়া হল। রুটির প্যাকেট পাশে সরিয়ে রেখে ভাতের প্লেট আগে বাড়িয়ে নিলাম। মা’কে বললাম, “আজ দেখি খাসীর ভূণা? ওয়াও”।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।