আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পরিবর্তন নেই আওয়ামী লীগে, ঢিলেঢালা ভাব

সরকারের শুরুতেই দল গোছানো ও প্রশাসন নিয়ে বাস্তবমুখী কর্মতৎপরতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মসূচি এখনো শুরু হয়নি। গত ৫ বছর সংগঠন নিয়ে যে ঢিলেঢালা মনোভাব ছিল তা এখনো অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে প্রশাসনকে গতিশীল করার বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নেই। গাছাড়া ভাব নিয়েই নতুন সরকারের যাত্রা।

পরিবর্তন নেই আওয়ামী লীগে। জানা গেছে, সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় এলজিআরডিতে এমপি ও নেতারা কাউকে খুঁজে পান না। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাতীয় পার্টির। স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব এখনো প্রতিমন্ত্রীকে দেওয়া হয়নি। তেমনিভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এখনো পূর্ণ মন্ত্রী নেই।

এমনকি স্বরাষ্ট্রও একই অবস্থা। গত ৫ বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ইতিবাচক অবস্থানে ছিল না। এই কারণে সবার ধারণা ছিল পররাষ্ট্রকেই সরকার বেশি গুরুত্ব দেবে। সম্পর্ক উন্নত করবে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় দেশগুলোসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে। কিন্তু বাস্তবে এর প্রতিফলন তেমন দেখা যাচ্ছে না।

এ ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে ক্যারিশমেটিক নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানতে চাইলে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, যখন দুটি দেশের মধ্যে রাজনৈতিক আলোচনা হয় তা মন্ত্রী পর্যায়েই হয়ে থাকে। কূটনীতিক পর্যায়ে সাধারণত হয় না। আবার মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক বা সফর আয়োজনও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। মন্ত্রীর অনুপস্থিতি থাকলে অনেক ক্ষেত্রেই প্রটোকল বা রাষ্ট্রাচার রক্ষা করা সম্ভব হয় না। তখন বৈঠকও হয় না।

ফলে একটি সুযোগ নষ্ট হয়। তাছাড়া যেহেতু বিশ্বের নানান দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে তাই এখানে একজন বলিষ্ঠ নেতৃত্ব থাকা প্রয়োজন। বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় কোনো ক্যারিশমেটিক নেতা যদি আলোচনা করতে যান তাহলে তার গ্রহণযোগ্যতাই অন্যরকম হয়। ড. ইমতিয়াজের মতে, সরকারের সামনে যেহেতু বৈদেশিক সম্পর্ক একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে, সেহেতু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বলিষ্ঠ ও যোগ্য নেতৃত্ব রাখার কোনো বিকল্প নেই।

অন্যদিকে গত এক বছর সহিংস রাজনীতির কারণে দেশের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

দেশের ২৪টি জেলার ৫৮টি এলাকা প্রশাসনিকভাবে সরকারের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। এ কারণে সবার ধারণা ছিল স্বরাষ্ট্রে গতিশীল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসবে। কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি। স্বরাষ্ট্রে এখন একজন প্রতিমন্ত্রী আছেন দায়িত্বে।

সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উপদেষ্টা থেকে কর্মকর্তা পর্যায়ে কোনো পরিবর্তন আসেনি।

সব কিছু আগের মতোই রয়েছে। গত ৫ বছরে সরকারের যে দফতরগুলো অদক্ষ ছিল এবং সাংগঠনিক দক্ষতা দেখাতে পারেনি এখনো তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যা দীর্ঘ মেয়াদি সরকার পরিচালনা ইতিবাচক নয় বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। তাদের মতে, গত ৫ বছরের মতো সব কিছু ঢিলেঢালাভাবে চালানো যাবে মনে করলে তা হবে আত্দঘাতী। সাময়িক থমকে থাকা অবস্থান কোনদিকে যাবে তা অনুধাবন করা কঠিন।

উপজেলা নির্বাচনের শুরুটা ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে যায়নি। জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত প্রার্থী ব্যাপক উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ সরকারের জন্য সতর্ক বার্তা বলে অনেকে মনে করেন। অন্যদিকে বিএনপিরও ব্যাপক জয় তাদের চাঙ্গা করে দিচ্ছে। বাকি নির্বাচনগুলোতে ফলাফল একই রকম হলে রাষ্ট্র চালানোর ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলকে সমস্যা পোহাতে হবে।

এদিকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক তৎপরতাও বাড়েনি।

গত ৫ বছর প্রভাবশালী অনেক মন্ত্রী ও নেতারা তাদের এলাকায় যাননি। অংশ নেননি সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে। যে কারণে তাদের গভীর সংকটে পড়তে হয়েছিল গত ডিসেম্বরে। সেই সময় অনেককে র্যাব পুলিশের পাহারা নিয়ে এলাকায় যেতে হয়েছিল। এখনো অনেকেই পুরনো আতঙ্কে এলাকায় যান না।

উপজেলা নির্বাচনে প্রভাবশালীরা এলাকায় ধরা খেয়েছেন। তবে সাংগঠনিক পর্যায়ে পরিবর্তন না আনলে এই সংকট বাড়তে থাকবে। প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে দল ও সরকার পরিচালনার পরিস্থিতি আগামীতে নেই বলে অনেকে মনে করেন।

সরকারে গতিশীলতা আনতে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই মন্ত্রণালয়ে রদবদল আনা হবে জানিয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বেশ কয়েকটি আসনে এখনো নির্বাচন হয়নি। তাছাড়া সংরক্ষিত নারী আসনেও এমপি নেওয়া হবে।

এ কাজগুলো সম্পন্ন করা হলেই মন্ত্রণালয়ে রদবদল করা হবে। দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা স্বীকার করে তিনি বলেন, সাংগঠনিক দুর্বলতা আছে। তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। উপজেলা নির্বাচনের পর সম্মেলনের মাধ্যমে সংগঠনকে আরও বেশি গতিশীল করা হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, আগামীর পথটা আমাদের জন্য সহজ নয়।

বিশ্বের শক্তিশালী ও দাতা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন মোকাবিলা করেই সরকারকে টিকে থাকতে হবে। যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে দক্ষ মন্ত্রী বসানো প্রয়োজন। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই তা করা হবে। সংগঠনকে গতিশীল করতে দলের নেতা-কর্মীদের মাঠে যেতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন আর বসে থাকলে চলবে না। ঢাকায় বসে টিভিতে চেহারা দেখিয়ে লাভ হবে না।

তৃণমূলে সংগঠনকে গতিশীল করতে হবে। সরকারের সাফল্যগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে।

দলীয় সূত্রমতে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর সাংগঠনিক স্থবিরতা কাটিয়ে উঠতে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। নেওয়া হয়েছে বেশ কিছু উদ্যোগও। উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে সারা দেশে সাতটি সাংগঠনিক টিম সফর করেছেন।

তবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্থানীয় এমপিদের প্রভাব বেশি থাকায় সেখানে কেন্দ্রীয় নেতারা তৃণমূলের সংকট নিরসন করতে অনেকটা ব্যর্থ হয়েছেন। অনেক উপজেলায় দলসমর্থিত প্রার্থী জয়লাভ করায় সেখানকার নেতা-কর্মীরা চাঙ্গা হয়েছেন। এটাও একটি ইতিবাচক দিক বলে মনে করেন ওই নেতারা। উপজেলা নির্বাচনে প্রথম দফা ফলাফল বিশ্লেষণ করে ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটতে দেবে না শাসক দলটি।

দলীয় সূত্র আরও জানায়, আগামীতে উপজেলা নির্বাচনের পরই দলকে গতিশীল করতে জেলা সম্মেলন করা হবে।

জেলা ও উপজেলা সম্মেলনের পাশাপাশি দলের সহযোগী যেসব সংগঠনের কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে সেগুলোরও দ্রুত সম্মেলন করতে প্রয়োজনী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.