অজ্ঞ সমর্থকের চেয়ে বিজ্ঞ প্রতিপক্ষ ভাল।
সেদিন একজন জিগ্যেস করল, যে আমরা সবাই জানি সূর্য তাঁর নিজের জায়গায় অবস্থান করছে। পৃথিবী তাঁর চারপাশে ঘুরছে। কিন্তু কোরআন এর বিরুদ্ধে কেন?
আমি বললাম: প্রথমত বলা উচিত, সূর্য তাঁর নিজের জায়গায় অবস্থান করছে না। বরং সূর্য তাঁর নিজ অক্ষে ঘুরছে এবং নিজস্ব কক্ষপথে গ্যালাক্সীর চারদিকেও আবর্তন করছে।
এরিস্টটলের মতে, পৃথিবী স্থির এবং সূর্য তাঁর চারপাশে ঘুরছে। আবার নিকোলাস কোপার্নিকাস এর মতে, সূর্য স্থির এবং পৃথিবী তাঁর চারপাশে ঘুরছে। সম্প্রতি দেখা গেছে সূর্য মোট ২৫ দিনে নিজ অক্ষে একবার ঘুরা সম্পন্ন করে। তা ছাড়া সেকেন্ডে ২৫১ কিলোমিটার গতিবেগে স্পেসের মধ্য দিয়ে ২২৫-২৫০ মিলিয়ন বছরে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সীর কেন্দ্রের চারদিকে আবর্তিত হয়।
দ্বিতীয়ত, পবিত্র কোরআনের কোথাও বলা হয়নি, যে সূর্য পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছে।
এটা তাই একেবারেই অজ্ঞতা প্রসূত একটা প্রশ্ন।
সূরা ইয়াসিনে বলা হয়েছে (৩৮) সূর্য তাঁর নির্ধারিত সুনির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে আবর্তন করে। এটা হচ্ছে মহাপরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহ’তায়ালারই সুনির্ধারিত। (৩৯) চাঁদ, তাঁর জন্য আমি বিভিন্ন কক্ষ নির্ধারিণ করেছি। (কক্ষ পরিক্রমণের সময় ছোট হতে হতে) এমন হয়ে পড়ে, যেন তা পুরোনো খেজুরের একটা ডাল।
(৪০) সূর্যের এই ক্ষমতা নেই, যে সে চাঁদকে নাগালের মধ্যে পাবে। না রাত দিনকে ডিঙিয়ে আগে চলে যেতে পারবে। এঁরা প্রত্যেকেই শূণ্যলোকে সাঁতার কেটে চলছে।
এখানে সমস্যাটা কোথায়?
বরং বিস্ময়কর লাগে, বলা হয়েছে চাঁদের জন্য বিভিন্ন কক্ষপথ নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে। আর আমরা জেনেছি, যে চাঁদের কক্ষপথ আঁকাবাঁকা।
পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে চাঁদের কেন্দ্রের গড় দূরত্ব ৩৮৪৪০৩ কিলোমিটার। তবে, সেটা কখনো সর্বনিম্ন ৩৬৩১০৪ কিলোমিটার থেকে সর্বোচ্ছ ৪০৬৬৯৬ কিলোমিটার পর্যন্ত হয়ে যায়।
বলা হয়ে থাকে, যে ৪০ নম্বর আয়াত দিয়ে সূর্য ও চাঁদের একটি মাত্র কক্ষপথ নির্দেশ করা হয়েছে। যেহেতু বলা হয়েছে সূর্যের ক্ষমতা নেই চাঁদের নাগাল পাবার। যদি এর ব্যাখ্যা এটাই ধরে নেয়া হয়, তাহলে ৩৮ ও ৩৯ নাম্বার আয়াত সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা বলে।
কারণ সেখানে বলা হয়েছে, সূর্যের জন্য নির্ধারিত করা হয়েছে সুনির্দিষ্ট আবর্তন গন্ডি। আবার চাঁদের জন্য আঁকাবাঁকা কক্ষপথ। তাহলে দুটো এক হয় কী করে?
সূরা আম্বিয়ায় বলা হয়েছে (২৯) তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং চন্দ্র ও সূর্য। প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।
এই আয়াতে ব্যবহার করা হয়েছে ‘ইয়াসবাহুন’ শব্দটি।
যেটি এসেছে ‘সাবাহা’ থেকে। এটি যদি কোনো মানুষের চলার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, তাহলে বুঝতে হবে সে হাটছে বা দৌঁড়াচ্ছে। যদি পানিতে থাকা কোনো মানুষের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, তাহলে বুঝতে হবে সে সাঁতার কাটছে বা ভেসে চলছে। আর যদি কোনো মহাজাগতিক বস্তুর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, তাহলে বুঝতে হবে সেটা নিজ অক্ষে ঘুরছে এবং কোনো কিছুকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে।
আয়াতটিতে বলা হয়েছে প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে বিরচণ করে।
আপনি কী একে শুধু চন্দ্র এবং সূর্যের ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করবেন?
আমরা জেনেছি, যে মিল্কিওয়ে ছায়াপথ তাঁর নক্ষত্রগুলো নিয়ে মহাকাশের বুকে ঘন্টায় ১০০ মিলিয়ন কিলোমিটার গতিবেগে ছুটছে। আর এটি মহাকাশের বিলিয়ন বিলিয়ন ছায়াপথের মধ্যে মাত্র একটি ছায়াপথ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।