সহজ আলোয় দেখা...
কোরিয়ান এক ভদ্রলোক বেশ কিছুদিন আমাদের হাউসমেট হিসেবে ছিলেন। সে কারণে কোরিয়ানদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানার সুযোগ হয়ে ছিলো সে কয়েকদিন।
ভদ্রলোকের নাম জর্জ। বয়েস সত্তুরের কোঠায়। একটা মেরিন প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন।
অন্যান্য কোরিয়ানদের মতো ইনিও প্রচন্ড পরশ্রমী। প্রতিদিন খুব সকালে উঠে হালকা ব্যায়াম ও নাস্তা করে কাজে বেরিয়ে যেতেন। ফিরতেন গভীর রাতে। এতো দীর্ঘ সময় কাজ করলেও চেহারায় ক্লান্তির ছাপ দেখা যেত না। বরং প্রায়শঃই সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে হাসি হাসি মুখে অফিসে চলে যেতে দেখা যেত তাকে।
সত্তুর বয়েসেও এই পরিমাণ এনার্জি দেখে আমাদের বিস্ময়ের সীমা ছিল না।
কিছুদিন পর দেখা গেল, চাচা স্টাইল করে চুল কাটিয়েছেন, চুলে গাঢ় করে কালো কলপ করছেন, মুখে ক্রীম লাগাচ্ছেন। দীর্ঘসময় ধরে ব্যায়াম করছেন। উনার রূপ ও শরীর চর্চা দেখে আমাদের দেশের এক প্রাক্তন রাস্ট্রপতির কথা মনে পড়ে গেল। এই বয়েসে চাচা কোন মেয়েবন্ধু জোগাড় করে ফেললেন কি না, আমাদের এই সন্দেহ বেশী দূর যেতে পারলো না।
এক সন্ধ্যায় ব্যাগ এন্ড ব্যাগেজ নিয়ে চাচী হাজির!
এই বয়েসেও চাচা-চাচীর গলায় গলায় প্রেম না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। তাদের দেখলে মনে হবে নতুন বিয়ে হয়েছে। সারাদিনই নিজেদের ঘরে থাকবেন। শুধু খাবার সময় চাচী লাজুক লাজুক মুখে বের হয়ে কয়েক মিনিটের ভেতর অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে রান্না করবেন। দু'জন একসাথে খাওয়া-দাওয়া শেষে আবার দরজা বন্ধ।
ছুটির দিনগুলোতে চাচাকে আর অফিসে যেতে দেখা যায় না। বউকে নিয়ে সুখী সুখী মুখে, হাত ধরাধরি করে শহর সিঙ্গাপুর ঘুরে দেখেন। কোন দিন শপিং-এ, কোন দিন আবার চিড়িয়াখানায়। আবার আমরা কোথাও ঘুরতে গেলে বলেন জায়গাটা সুন্দর বা ইন্টারেস্টিং হলে তাদের জানাতে।
এর ভেতর একদিন চাচীকে দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে চাচা দেশ ছেড়ে অফিসের কাজে গেলেন কয়েক সপ্তাহের জন্যে।
সঙ্গী হারা পাখীর মতো একা একা ঘুরে বেড়ান চাচী। বাসায় থাকলে নানা ধরণের রান্না করেন। এবং মাঝে মাঝেই তার রান্না আলাদা করে খেতে দিতেন আমাদের। দু-একবার সেই রান্না মুখে দেবার পর আমাদের বাঙ্গালী জিহ্বা পুরোপুরি বিদ্রোহ করে বসলো। সমস্যা হলো আগ্রহ করে কেউ কিছু দিলে আমার স্ত্রী ফিরিয়ে দিতে পারে না।
সুতরাং প্রতিবারই আমাদেরকে দেয়া চাচীর রান্না করা খাবার কোন রকমের মনুষ্য স্পর্শ ছাড়াই তার অগোচরে বিসর্জিত হতো।
কোরিয়ানদের ইংরেজী জ্ঞান জাপানীদের চাইতে কিছুটা উন্নত। তবে সেই ভান্ডার সাকুল্যে দশ বারোটা ইংরেজী শব্দের বেশী না। আমি কাজে গেলে আমার স্ত্রীর সাথে চাচী গল্প করার চেস্টা করেন, কিন্তু ভাষার ব্যবধানের জন্যে সেই গল্প বেশিদূর আগায় না। তবু চাচী হাল ছাড়েন না।
প্রতিদিন নিষ্ঠার সাথে ইংরেজী শেখায় লেগে থাকেন বই নিয়ে। কয়েক দিনের মধ্যে সত্যি সত্যি চাচীর ইংরেজী জ্ঞান খানিকটা ইশারার সাহায্য নিয়ে কথা চালানোর পর্যায়ে উন্নত হয়। জানা গেল, চাচীর ছেলে-মেয়েরা সব বড় হয়ে গিয়েছে, যার যার সংসার হয়ে গেছে। নাতি-নাতনিরাও স্কুল-কলেজে পড়ে। বুড়ো বয়েসে এটাই হলো মিল-মহব্বতের এতো রহস্য!
কিছুদিন পর দেখা গেল, চাচী স্টাইল করে চুল কাটিয়েছেন, চুলে গাঢ় করে কালো কলপ করছেন, মুখে ক্রীম লাগাচ্ছেন।
চাচী মুখে না বললেও আমরা বুঝতে পারি চাচার বাড়ী ফেরার দেরী নেই! চাচীর মতো আমরাও অপেক্ষা করি দুই কপোত-কপোতীকে এক সাথে দেখার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।