আমি একজন ভাল ছেলে ।
বিদ্যুৎ একটি বহুল ব্যবহারের সেবাপণ্য। এ পণ্যের দাম বারবার বাড়িয়ে এরই মধ্যে গ্রাহকদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছানো হয়েছে। এরপরও আবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে বলে খবরে প্রকাশ। যদি তা-ই করা হয়, তবে শুধু গ্রাহক দুর্ভোগই আরো বাড়বে না, সাথে সাথে এর উৎপাদন খরচও বাড়বে।
এর ফলে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
উল্লেখ্য, দ্বিতীয় দফায় দায়িত্ব নেয়ার এক মাসের মাথায় বর্তমান সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। গত মেয়াদের প্রথম চার বছরে ছয়বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। ষষ্ঠবারের মতো দাম বাড়ানো হয় ২০১২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। এখন নতুন করে দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সব বিতরণকারী কোম্পানিকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সেই প্রস্তাব পর্যালোচনা করে মূল্য বাড়ানোর হার আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে পাঠানো হবে। বিইআরসি শুনানি শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। ভর্তুকি বিবেচনায় নিয়ে ১০ থেকে ১২ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করা হতে পারে এবং তা আগামী ১ মার্চ থেকে কার্যকর হতে পারে।
প্রসঙ্গত ‘বিদ্যুৎ দেয়ার ক্ষমতা নেই, দাম বাড়ানোর বেলায় ষোল আনা’ এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানান, মাদারটেকের বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ।
নূর মোহাম্মদের মতো আরো অনেকেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর খবরে গভীর ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, বিদ্যুতের অভাবে সবচেয়ে বেশি ধুঁকছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কারখানাগুলো। বড় কারখানাগুলো বিকল্প হিসেবে জেনারেটরের মাধ্যমে পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দিলেও যাদের নিজস¦ বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা নেই, তারা সবচেয়ে বেশি দুরবস্থার শিকার। ছোট তৈরি পোশাক কারখানায়ও বিদ্যুতের অভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রেখে কর্মীদের বেতন দিতে হচ্ছে।
মূলত, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে- এ খবরে সাধারণ মানুষ, শিল্প-কারখানার মালিক ও উদ্যোক্তারা উদ্বিগ্ন। গ্রাহকরা বলছেন, বিতরণ ব্যবস্থার নানা ত্রুটি, ভুতুড়ে বিল, সিস্টেম লস, মিটার টেম্পারিং ও সøাব ব্যবস্থার কারণে এমনিতেই বিদ্যুৎ বিল বেশি আসছে।
এরই মধ্যে নতুন করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে তা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাবে। শিল্প গ্রাহকরা বলছেন, নতুন করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে তার প্রভাবে উৎপাদিত শিল্পপণ্যের দাম বেড়ে যাবে। বাড়বে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। এতে অন্যান্য দেশের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতায় পড়তে হবে তাদের। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশী শিল্প-গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
নতুন প্রস্তাবে পিডিবি গ্রাহকদের বিলপ্রতি ইউনিটে ৭৯ পয়সা বাড়বে। ডিপিডিসি গ্রাহকদের বাড়বে ইউনিট প্রতি ১ টাকা ১০ পয়সা। ডেসকো গ্রাহকদের ৮৪ পয়সা, ওজোপাডিকো গ্রাহকদের ৭৭ পয়সা আর গ্রামের মানুষ অর্থাৎ পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকদের দাম বাড়বে ইউনিট প্রতি ৬৯ পয়সা।
বলাবাহুল্য, গোঁজামিল দিয়েও ঘর সামলাতে পারছে না বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। সাতবার দাম বাড়ানোর পরও বিদ্যুৎ সরবরাহ নীরবচ্ছিন্ন ও নিয়মিত হচ্ছে না।
লোডশেডিং লেগেই আছে। গ্রীষ্মকাল আসেইনি, এখনই লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে গেছে। এতে শহরে ও গ্রামে-গঞ্জে জনদুর্ভোগ বেড়ে গেছে। ঢাকা শহরে দিনের বারো ঘণ্টার মধ্যে ছয় ঘণ্টাই লোডশেডিং থাকে। গ্রামের অবস্থা আরও করুণ; সেখানে ১২ ঘণ্টাও লোডশেডিং হয়ে থাকে।
লোডশেডিংয়ের কারণে শহরে যেমন ব্যবসা-বাণিজ্যে কেনা-বেচায়, শিল্প-কারখানায় উৎপাদনে, অফিস-আদালতে ও বাসা-বাড়িতে কাজে-কর্মে নানা অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে; তেমনি গ্রামে-গঞ্জে জমিতে সেচের কাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। প্রত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে- সাড়ে সাত হাজার উৎপাদন ক্ষমতা থাকলেও এ সময় বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে সর্বোচ্চ তিন হাজার ৯০০ মেগাওয়াট। আবার বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস দেয়ার কথা বলে বাসাবাড়ি-কলকারখানায় গ্যাসের সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে জ্বলছে না চুলা। উৎপাদন কমেছে শিল্পকারখানায়ও।
অপরদিকে গ্রামে কোথাও কোথাও ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। এ পরিস্থিতিতে মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হলেও পিডিবির হিসাবে লোডশেডিং নেই বললেই চলে। ব্যর্থতা ঢাকতে তাদের ওয়েবসাইটেও দেয়া হচ্ছে ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য।
সরকার কুইক রেন্টাল বিদ্যুতের ব্যবস্থা করায় খরচ বেশি পড়ে যায়, যে কারণে বিদ্যুতের দাম বারবার বাড়ানো হয়। বিশেষজ্ঞরা তখন বলেন, সরকারের উচিত- কুইক রেন্টাল ব্যবস্থা বাদ দিয়ে নিজেদের কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার ব্যবস্থা করা।
যে সব কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে সেসব কেন্দ্র মেরামত করে চালু করা। সরকার সে পথে যায়নি। কার স¦ার্থ রক্ষা করতে সরকার সে পথ মাড়ায়নি আমাদের বোধগম্য নয়। ফলে বিদ্যুতের যন্ত্রণা কমেনি; অথচ কমানোর নাম করে দফায় দফায় টাকা বাড়ানো হচ্ছে, সে টাকা লুটেপুটে খাওয়া হচ্ছে; খেসারত দিচ্ছে সাধারণ লোকেরা। আমরা জানতে পেরেছি, গ্যাস সংকটের দোহাই দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে আছে ঘোড়াশালের ম্যাক্স পাওয়ারের ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্রটি।
একই কারণে বন্ধ ঘোড়াশাল সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১৪০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট। সিদ্ধিরগঞ্জ এসটি ২১০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটি গত বছরের জানুয়ারি থেকে বন্ধ। রাওজান ৩৮০, শিকলবাহা ২৫০, খুলনা এসটি ১১০ ও এসটি ৬০ এবং বাঘাবাড়ি জিটি ৭১ মেগাওয়াটের সরকারি কেন্দ্রগুলো দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। বন্ধ ভোলার ৭৮ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটিও। সরকার যখনই টাকা চাইছে জনগণ সে টাকা দিচ্ছে।
একবার নয় চারবার বাড়তি টাকা প্রদান করা হয়েছে; অথচ সে অনুপাতে জনগণ সেবা পাচ্ছে না।
অবস্থাদৃষ্টে যে কেউ সঙ্গতকারণেই ধারণা করতে পারে, বিদ্যুৎ বিভাগে চরম দুর্নীতি গাফিলতি ও স্বার্থপরতা চলছে। এতে বিপত্তি ঘটায় খেসারত দিতে হচ্ছে জনগণকে। এটা চলতে পারে না। চলতে দেয়া যায় না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।