আমাদের সমাজে উঠতি বয়সী ছেলে-মেয়েদের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনের সাথে সাথে তাদের মনের খোরাক যোগাবার মত প্রয়োজনীয় বিনোদন ব্যবস্থার অভাব রয়েছে। এই অভাব মেটাতেই উঠতি বয়সী ছেলে মেয়েরা, বিশেষ করে ছেলেরা সস্তা বিনোদন হিসেবে অনেক খারাপ জিনিসকে বেছে নেয়। এই ধরনের বিনোদনগুলোর সাথে তারা নিজেদের এমন ভাবে মানিয়ে নেয় যাতে এক সময় খুব খারাপ জিনিসটিকেও তাদের কাছে ভাল লাগে। পরিবারের অভিভাবকদের তাদের উঠতি বয়সী ছেলেদের উপর অগাধ আত্মবিশ্বাসও অনেক সময় তাদের বখে যেতে সাহায্য করে। ছেলে মেয়েদের যখন শাররীক ও মানসিক বিকাশ ঘটতে শুরু করে তখন তারাই অনেক সময় নিজেদের নিয়ে বিচলিত হয়ে পরে।
সে জন্য এই সময়টাতে পরিবারের বয়স্ক লোকজনদের তাদের প্রতি খেয়াল রাখা জরুরী। কেউ যদি এ বয়সীদের আগের মতই শিশু ভাবে তাহলে ভুল করবে। তাদের চালচলনে অতি সন্দেহ নয় বরং সতর্কতা অবলম্বন করাটা এখানে জরুরী। অনেক বাবা মা ভাবেন তাদের ছেলেটা বা মেয়েটা এত খারাপ কাজ করতেই পারেনা। অথচ খুব বিশ্বস্ত সূত্রে ছেলেটি কিংবা মেয়েটির ব্যপারে খারাপ খবর আসছে।
আর তারা ছেলেমেয়েদের মিথ্যে অজুহাত সত্য বলে মেনে নিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিন পর সে সব অভিভাবককেই শেকল হাতে সন্তানকে বন্দী করবার জন্য পিছু পিছু ছুটতে বাধ্য হয়। আবার অনেকেরই যথেষ্ট পরিমাণ বিনোদন ব্যবস্থা থাকবার পরেও তাদের বখে যেতে দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে পরিবারের বয়স্কদের উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত বিনোদনটি তাদের সামনে তুলে ধরার ভুলটিই চোখে পরে।
অনেক অভিভাবকই তাদের সন্তানদের ঘরের বাইরে খেলতে দিতে চাননা।
এক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি সবচাইতে বেশি প্রাধান্য পায়। দিনকে দিন নিরাপত্তা ব্যবস্থার অবনতি হচ্ছে। অনেক সময় ছেলেরা বাইরে খেলতে যাবার নাম করে আড্ডাবাজি করে। খারাপ কাজে লিপ্ত হয়। খেলার মাঠে মারামারির ব্যপারটিও অনেকের শঙ্কার কারণ।
কিন্তু এমনও দেখা যায় ঘরের খুব নিকটে খেলার মাঠে অনেক বাবা মা তাদের ছেলেদের খেলতে যেতে দেননা। তারা ক্রিকেট কিংবা ফুটবল খেলাকে নোংরামো মনে করেন। মাঠে আসলেও ছেলেটিকে কড়া শাসন করে বাড়িতে নিয়ে যেয়ে পড়তে বসান। এ অবস্থায় ভালর চাইতে খারাপটাই বেশি পাওয়া যায়। কারণ বন্দী পাখির উড়বার আনন্দ মুক্ত পাখির চাইতে অনেক বেশি।
বিনোদন থেকে বঞ্চিত হওয়া ছেলেটি যখন কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে মুক্ত পরিবেশ পাবে তখন সে একটু বেশি আনন্দ করতে চাইবেই। তার কাছে ভাল মন্দের বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই। আর এতেই বিপদ হবে। তাই অনেক স্কুল জীবনের ক্লাশসেরা ছাত্রটিকে কলেজ জীবনে খুঁজেও পাওয়া যায়না। অতি ভদ্র ছেলেটিকে মাস কয়েকের মধ্যেই অপরিচিত মনে হয়।
বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েদের অপরাধ প্রবণতা বেড়েই চলেছে। এ অবস্থার পরিবর্তনের জন্য পরিকল্পনা মাফিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রয়োজন। কোন কোন কাজে ছেলে মেয়েরা জড়িয়ে পড়লে খারাপ হয়ে যেতে পাড়ে সে সম্বন্ধে শুধু উঠতি বয়সীদেরই নয়, তাদের অভিভাবকদেরকেও সচেতন করবার ব্যবস্থা করতে হবে। ধারনা পাল্টাতে হবে তাদের বিনোদন ব্যবস্থার জন্যেও। উপযুক্ত বিনোদন উপযুক্ত সময়ে তাদের সামনে তুলে ধরতে হবে।
এই উপযুক্ততার ঘাটতি এলেই, উপযুক্ত সময়ে ছেলের হাতে ক্রিকেট ব্যাট (অর্থাৎ উপযুক্ত বিনোদন) তুলে না দিতে পারলেই সে নিজেই গাঁজার কল্কী নিজের হাতে নিবে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।