স্থানীয় এমপি ও সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদের উন্নয়ন ব্যর্থতার খেসারত দিতে হলো বকশীগঞ্জে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে। ২৭ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাচনে বকশীগঞ্জ উপজেলায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবু জাফরের শোচনীয় পরাজয় হয়। নির্বাচনে জয়লাভ করে বিএনপি প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুর রৌফ তালুকদার।
স্থানীয় তৃণমূল পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও এলাকার বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত ৫ বছরে এই এলাকা থেকে নির্বাচিত এমপি সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদের প্রতি মানুষের যে প্রত্যাশা ছিল তার কোনোটাই পূরণ হয়নি। এলাকায় দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন নেই।
দলীয় ত্যাগী নেতাকর্মীদের দূরে ঠেলে দিয়ে ক্ষমতার ৫ বছরে তিনি তার নিজস্ব লোক দিয়ে সব কাজ করেছেন। টিআর,কাবিখাসহ এলাকায় যা কিছু হয়েছে সবই নিয়ন্ত্রণ করেছে এমপির রাজনৈতিক এপিএস ইসমাইল হোসেনের মাধ্যমে। মন্ত্রী থাকাকালীন তার ধারে-কাছে ঘেঁষতে পারেননি দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। মন্ত্রীর ক্ষমতার দাপটে উপজেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যন্ত সকল স্তরের নেতাকর্মীদের নিষ্ক্রিয় করে দিয়ে আবুল কালাম আজাদ নব্য আওয়ামী লীগার ও তার নিজস্ব লোকদের দিয়ে চালিয়েছেন সব কর্মকাণ্ড। তৃণমূল পর্যায়ে দলকে শক্তিশালী না করে নিজের লোকদের নিয়েই চলেছেন তিনি।
চাপা ক্ষোভ, হতাশা আর ভোটারদের কাছে জবাবদিহিতার ভয়ে উপজেলা নির্বাচনে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা মাঠে নামতে পারেনি।
সাবেক এই মন্ত্রীর নিজস্ব লোকদের তদবির ও নিয়োগ বাণিজ্যে শুধু দলীয় নেতাকর্মী নয়, ক্ষুব্দ হয়েছেন সাধারণ ভোটারারাও। টাকার বিনিময়ে মন্ত্রীর নিজস্ব লোক হিসেবে পরিচিত হাসমত আলী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বিজয়ের মাধ্যমে বকশীগঞ্জ উপজেলায় ১৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম প্রহরী পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বিএনপি জামাত পন্থীদের। ক্ষমতার ৫ বছরে দুটি মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী থাকলেও এলাকার উন্নয়ন চিত্র হতাশাজনক। বকশীগঞ্জ থেকে সদরে আসার একমাত্র রাস্তাটিরও সংস্কার করতে পারেননি তিনি।
অনেক ব্রিজ-কালভার্ট হয়নি। স্থানীয় যোগাযোগের ক্ষেত্রেও উল্লেখ করার মতো কোন উন্নয়ন নেই। সাবেক এই মন্ত্রীর প্রতি মানুষের যে আশা আকাঙ্ক্ষা ছিল তার কোনোটাই পূরণ হয়নি। ফলে ভোটারদের মধ্যে জমে থাকা দীর্ঘদিনের চাপা ক্ষোভ আর হতাশার বহির্প্রকাশ ঘটেছে উপজেলা নির্বাচনে।
৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন জাতীয় নির্বাচনে প্রায় 'অখ্যাত' প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্ধিতা করে কোনোরকমে টিকে গেলেও সাবেক এই মন্ত্রীর প্রতি মানুষের ক্ষোভের কোপ পড়েছে উপজেলা নির্বাচনে।
সাবেক এই মন্ত্রীর প্রতি মানুষের ক্ষোভের তীব্রতা এতো বেশি যে উপজেলা নির্বাচনে তার নিজ কেন্দ্রেই বিএনপি প্রার্থীর চেয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবু জাফর ভোট পেয়েছে অনেক কম। এছাড়া সাবেক এই মন্ত্রীর নিজস্ব লোক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বিজয়সহ মন্ত্রীর কাছের লোকজনের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নিকট থেকে টাকা নিয়ে দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার অভিযোগও করেছেন অনেক স্থানীয় নেতাকর্মী।
সাবেক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদের নিজ কেন্দ্র খেওয়ার চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিএনপি প্রার্থী আব্দুর রৌফ তালুকদার যেখানে পেয়েছেন ৮০২ ভোট সেখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবু জাফর পেয়েছেন তার অর্ধেক ৪৭৯ ভোট। নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী আব্দুর রৌফ তালুকদার নির্বাচিত হয়েছেন ৩৪ হাজার ৫৭২ ভোট পেয়ে। আর নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবু জাফর ভোট পেয়েছেন তার চেয়ে ১২ হাজার ৫৭৫ ভোট কম।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবু জাফরের প্রাপ্ত ভোট মাত্র ২১ হাজার ৯৯৭। এই উপজেলা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এমদাদুল হক পেয়েছেন ২১ হাজার ৪১১ ভোট আর বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী মানিক সওদাগর পেয়েছেন ৭ হাজার ৯১১ ভোট। নির্বাচনে আ.লীগের ছিল একক প্রার্থী।
অন্যদিকে বিএনপির দুজন ছাড়াও ছিল একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী। স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা বলছেন বিএনপির দুজন আর একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকার পরও আ.লীগ প্রার্থী হেরেছেন ১২হাজার ৫৭৫ ভোটের ব্যবধানে।
আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রায় সম সংখ্যক ভোট পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এমদাদুল হক। বিএনপির দুজন আর স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকলে এই হার হতো আরো লজ্জাজনকভাবে বড় ভোটের ব্যবধানে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।