খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী লিয়াকত আলী। দুর্নীতির দায়ে একাধিক মামলা হলেও বর্তমান সরকারের আমলে তিনি বহাল হন চাকরিতে। করপোরেশনের কর্মকর্তা হয়েও বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগ-সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থীর পক্ষে বিভিন্ন নাগরিক সভা-সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন।
এ ছাড়া শেষ মুহূর্তে অস্থায়ী হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ৪১ কর্মচারীও আওয়ামী লীগ-সমর্থক মেয়র পদপ্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের পক্ষে কাজ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে সিটি করপোরেশন বলছে, শেষ মুহূর্তে ৪১ জন নয়, ১৮ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খালেকের নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১১ মে খুলনার উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরিতে একটি বৈঠক হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ এনায়েত আলী। ওই সভায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহাম্মদ আলমগীর ও খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী লিয়াকত আলী উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন। এ খবর খুলনার সব আঞ্চলিক ও জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়। ওই সভাতেই সাবেক স্পিকার শেখ রাজ্জাক আলীকে প্রধান করে নাগরিক কমিটি গঠিত হয়।
স্থানীয় লোকজন জানান, নাগরিক কমিটির বৈঠক ছাড়াও তালুকদার খালেকের পক্ষে বিভিন্ন নির্বাচনী কার্যক্রমে প্রধান প্রকৌশলী অংশ নিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন স্থানে খালেকের উন্নয়ন কার্যক্রম তুলে ধরছেন। জানতে চাইলে খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী তপন কুমার ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, চাকরিবিধি ও আইন অনুযায়ী করপোরেশনের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী কারও পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারেন না। আর সেটি করলে তাঁরা চাকরি করবেন কী করে!
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লিয়াকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘নাগরিক কমিটি গঠনের প্রথম বৈঠকে আমি উপস্থিত থাকলেও পরে আর থাকিনি। আর যখন বৈঠকে ছিলাম, তখন তো মেয়র দায়িত্বে ছিলেন।
’ ওই বৈঠকে কি বক্তব্য দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক কোনো বক্তব্য দিইনি। তবে গত কয়েক বছরে তালুকদার খালেক যেসব উন্নয়নকাজ করেছেন সেগুলো বলেছি। ’
সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলীর নাগরিক কমিটির বৈঠকে যোগদান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব শাহ জাহাঙ্গীর আবেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথম বৈঠকে লিয়াকত আলী এসেছিলেন। কিন্তু কেউ তাঁকে আসতে বলেননি। তিনি সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা বলে আমরা তাঁকে কমিটিতে রাখিনি।
’
করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৯ সালে খুলনা পৌরসভায় সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দেন লিয়াকত আলী। ’৮৮ সালে সরকারি বিএল কলেজের ভিপি আনিসুর রহমান হত্যা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে পরে ওই মামলা থেকে খালাস পান তিনি। নানা সময়ে নানা অভিযোগ ওঠার কারণে তাঁকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়। ’৯৬ সালের ২২ জুন সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব নেন লিয়াকত।
২০০৭ সালে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির দুটিসহ মোট চারটি মামলা হয়। দুর্নীতির একটি মামলায় সিটি করপোরেশেনর সাড়ে ৪৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০০৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর তাঁকে আবার সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ছাড়া ৪৩ লাখ টাকা গাড়ি ক্রয়ের দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। ২০০৮ সালের ৬ এপ্রিল তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন তিনি।
সর্বশেষ তিনি গত সেপ্টেম্বরে আবার প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দেন।
দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে লিয়াকত আলী বলেন, ‘আদালতের রায়ের মাধ্যমেই আমি আবার চাকরিতে ফিরে এসেছি। ’ তাঁর বিরুদ্ধে কয়টি মামলা ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মনে নেই। ’ কত দিন কারাগারে ছিলেন জানতে চাইলে বলেন, ‘সেটিও সুনির্দিষ্টভাবে মনে নেই। ’ কবে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন জানতে চাইলে বলেন, ‘সঠিক তারিখ বলতে পারব না।
’
লিয়াকত আলীকে সিটি করপোরেশনে ফিরিয়ে আনার কারণ জানতে চাইলে সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, ‘আদালতের রায়ে তাঁকে নিতে বাধ্য হয়েছি। তবে তাঁর সঙ্গে আমার কোনো ঘনিষ্ঠতা নেই। ’
বিএনপি-সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধান প্রকৌশলী যে বিভিন্ন স্থানে মেয়রের পক্ষে কাজ করছেন, তা আমরাও জানি। আমরা চাই নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করুক। ’
আছেন দুই উপাচার্যও: রাজনীতিমুক্ত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহাম্মদ আলমগীরও আওয়ামী লীগ-সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
তাঁরা দুজনই নাগরিক কমিটির সদস্য। নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে তাঁদের সরাসরি সম্পৃক্ততা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফায়েক উজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, প্রচার-প্রচারণা নিষিদ্ধ। কিন্তু খুলনা শহরের বাসিন্দা হিসেবে আমি যেকোনো প্রার্থীকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানাতে পারি। এটা আমার অধিকার।
ব্যক্তিগত ভালো লাগা থেকেই তালুকদার আবদুল খালেককে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছি। ’
স্থানীয় লোকজন বলছেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠান। দুই প্রতিষ্ঠানেই প্রকাশ্যে কোনো রাজনীতি নেই। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগবিধিতে বলা আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিজেকে রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত বা রাজনৈতিক মতামত প্রচারে সম্পৃক্ত করতে পারবেন না। আর খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ৪৪-এর ৫ ধারায় বলা আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী তাঁর নিজের রাজনৈতিক মতামত প্রচার করতে পারবেন না এবং কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারবেন না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।