বরিশাল-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরণ (৫৭) আর নেই। গতকাল সকাল ৭টায় রাজধানীর এ্যাপোলো হাসপাতালে তিনি মারা যান (ইন্নালিল্লাহি... রাজিউন)। ১৯ দিন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা হিরণ কয়েক দিন ধরেই এই হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সকাল ৭টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
সাবেক সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরণের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীসহ মন্ত্রীবর্গ শোক প্রকাশ করেন। সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরণের মৃত্যুতে গতকাল সংসদে শোক প্রস্তাব গ্রহণ ও সংসদ মুলতবি করা হয়। বিকালে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশ নেন।
গত ২২ মার্চ রাতে বরিশাল ক্লাবে থাকা অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মেঝেতে পড়ে মাথায় আঘাত পান হিরণ।
তাৎক্ষণিক তাকে শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে ঢাকায় পাঠানোর পরামর্শ দেন। রাতেই তাকে ঢাকায় এ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৩ মার্চ এ্যাপোলো হাসপাতালে হিরণের মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয়। পরের দিনই তাকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরিয়ে এ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তখন থেকেই তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক জানিয়েছেন, জানাজা শেষে হিরণের মরদেহ হিমঘরে রাখা হবে। আজ হেলিকপ্টার যোগে বরিশাল নেওয়ার পরে সেখানে তার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। কাল শুক্রবার বাদ জুমা মুসলিম কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজায় অন্যদের মধ্যে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, সংসদের হুইপ আতিকুর রহমান আতিক, জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, ড. আবদুর রাজ্জাক, ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাবেক এফবিসিসিআই সভাপতি আনিসুল হকসহ সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা অংশ নেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে শেখ হাসিনা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী সাহারা খাতুন। পরে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার ডা. ফজলে রাব্বী মিয়া শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল আবুল হোসেন। এদিকে হিরণের মৃত্যুর খবরে বরিশালের রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে।
ঢাকায় থাকা দলীয় নেতা-কর্মীসহ আত্দীয়স্বজন ও সতীর্থরা হিরণকে শেষবারের জন্য দেখতে এ্যাপোলো হাসপাতালে ভিড় জমান। বরিশালের হিরণ পয়েন্টে ভিড় করে নিকটাত্দীয়, দলীয় নেতা-কর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। সকালেই তার নিজ বাস ভবনে শুরু হয় কোরআনখানি। দলীয় কার্যালয়ে কোরআনখানি ছাড়াও মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কালো ব্যাজ ধারণ, দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন, দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণসহ ৭ দিনব্যাপী শোক কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম। এ ছাড়া বরিশাল সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষও ৩ দিনের শোক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
১৯৫৬ সালে বরিশালে জন্মগ্রহণকারী হিরণ বরিশাল-৫ আসনে ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ২০১২ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ২০০৩ সালে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে তিনি বরিশালের মেয়র নির্বাচিত হন।
২০১৩ সালে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও পরাজিত হন তিনি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)-এর মাধ্যমে ছাত্রজীবনেই হিরণের রাজনীতিতে প্রবেশ। এরপর জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। ১৯৮৮ সালে বরিশালে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি।
শোক বাণী : এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, তার মৃত্যুতে দেশ একজন দেশপ্রেমিক ও নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিককে হারাল।
বরিশালের উন্নয়নে হিরণের ভূমিকা ছিল অতুলনীয়। বরিশালের মানুষের জন্য তার ভালোবাসা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। পৃথক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, হিরণের মৃত্যুতে বরিশালের মানুষ একজন নিবেদিত রাজনীতিবিদ ও উন্নয়নের স্থপতিকে হারাল। তার মৃত্যুতে আওয়ামী লীগ একজন শক্তিশালী সংগঠক এবং রাষ্ট্র একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিককে হারিয়েছে। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, শওকত হোসেন হিরণ ছিলেন দেশ ও জাতির একজন সূর্যসন্তান।
তিনি আমৃত্যু মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, এলজিআরডিমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলু, বরিশাল সিটি মেয়র আহসান হাবিব কামাল, বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক তালুকদার ইউনুসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।