আমাদের জীবনটা কত বেশি আবেগ নির্ভর ও কল্পনাপ্রবণ হয়ে উঠেছে যে আমরা অনেক ক্ষেত্রে বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছি। বাস্তব জগতে প্রতিদিন কত মানুষ মারা যায়, কত মানুষ আহত হয়, কত মানুষ অসুস্থ হয়, কত মানুষ সামান্য সাহায্য পাওয়ার আশায় মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায় আমরা কয়জনে তার খবর নিই, আর খবর নিলেও কতটুকু নিই। আমাদের চারপাশে আমাদেরই চেনা জানা অসহায় মানুষ গুলোর জন্য আমাদের হৃদয় কতটা পোড়ে?
অথচ ভার্চুয়াল জগতে কারো মৃত্যুর সংবাদ, কারো আহত হওয়ার খবর শুনলে আমরা নিজেরাই অনেক বেশি আহত হয়ে যাই। গত শুক্রবার কোন এক তাহমিনা জান্নাতের মৃত্যুতে ফেসবুকের অনেক সেলেব্রেটিকে যেভাবে শোক প্রকাশ করতে দেখি এতটা শোক বাস্তব মানুষের জন্যও প্রকাশ করা হয় কিনা সন্দেহ আছে।
এখানে কারো আবেগ অনুভূতি গুলোকে খাটো করে দেখানো কিংবা কারো আবেগ অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া আমার উদ্দেশ্য নয়, একজন মানুষের মৃত্যু সংবাদ শুনলে তার জন্য দোয়া করা কিংবা তার রুহের মাগফিরাত কামনা করার বিরোধিতাও আমি করছি না। আমি শুধু এটুকুই বলতে চাইছি যে, যে মানুষটার প্রতিচ্ছবি আমার কল্পনায় আঁকা, যাকে আমি বাস্তবে কোনদিন দেখিনি, জানিনি, যার বাস্তব অস্তিত্ব সম্পর্কেও নিশ্চিত নয়, কারো মতে সে কথা বলতে পারতো না, কারো মতে পারতো এমন একজন অদৃশ্য স্বত্ত্বার মৃত্যুতে আমরা যেভাবে মাত্রাতিরিক্ত আবেগাপ্লুত হয়ে শোক প্রকাশ করলাম তেমনটা অনুভূতি যদি আমাদের চারপাশের বাস্তব অসহায় মানুষ গুলোর জন্য হতো তাহলে হয়তো অনেক মানুষই আমাদের দ্বারা উপকৃত হতে পারতো, খোদা তায়ালার সৃষ্ট এক জীবের উপকার করার প্রতিদান আমরা তার কাছেও পেতে পারতাম।
যে চলে গেছে সে তো গেছেই, তার জন্যতো আমাদের আর কিছুই করার নেই, কিন্তু তার মতো আরো যারা পৃথিবীতে এখনো বেঁচে আছে, অনাহারে অনাদরে পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়ার প্রহর গুনছে তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমরা কি প্রদক্ষেপ নিচ্ছি? ফেসবুকে তো আমরা একজন একজনের জন্য খুবই সহানুভূতি সহমর্মিতা দেখাতে পারি, কিন্তু ফেসবুকের বাইরে যে মানুষটা ধুঁকে ধুঁকে দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার অপেক্ষায় আছে, সে মানুষ গুলোতো আমাদের চারপাশেই আছে, আমরা কয়জনে তাদের খোঁজ খবর নিয়েছি, তাদের দিকে আমাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছি?
অথচ যাদের জন্য আমরা এত সহানুভূতি সহমর্মিতা প্রকাশ করি তাদের জন্য আমাদের সেই সহানুভূতি সহমর্মিতা খুব একটা দরকার ছিলো না, বরং তা অনেক বেশি দরকার ছিলো আমার বাড়ির পাশের অসহায় মানুষটির জন্য যাকে আমি কাছ থেকে চিনি। কিন্তু আফসোস সেইসব ক্ষেত্রে আমাদের বেশিরভাগ লোকেরই আবেগ অনুভূতি আর সহানুভূতির পারদ নিম্নমুখী। কারণ আমরা সবাই শুধু ফেসবুক তথা ভার্চুয়াল জগতের হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হতে চাই, বাস্তব জগতের নয়।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।