বগুড়ার আদমদীঘিতে সুড়ঙ্গ খনন করে সোনালী ব্যাংকের লুট করে নিয়ে যাওয়া টাকা উদ্ধার হয়নি। খোয়া যাওয়া টাকার পরিমাণ এখন দাঁড়িয়েছে ৩০ লাখ ৭৯ হাজার ৮০০। সোনালী ব্যাংক বগুড়ার জোনাল অফিসের ডিজিএম আবদুস সামাদ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি মামলা করেছেন। এ ঘটনায় পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ব্যাংকের শাখা ম্যানেজার ও ক্যাশিয়ারকে বগুড়ায় বদলি করা হয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক রয়েছে ১২ জন। এদিকে গতকাল রাজশাহী রেঞ্জের পুলিশের অ্যাডিশনাল ডিআইজি খোরশেদ আলমসহ ঊর্ধ্বতন ব্যাংক, পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ঘটনায় ব্যাংক ম্যানেজার শামসুদ্দিন শরীফ ও ক্যাশিয়ার আজাহারুল ইসলামকে বগুড়ায় বদলি করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে ফার্নিচার দোকানের মালিক আশরাফুল ইসলাম, কর্মচারী শহীদ, নজরুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম, মৃদুল, আবদুল ওয়াহেদ, ব্যাংকের নিরাপত্তা রক্ষী মিলন, পূর্ণ দেব, সাবেক নিরাপত্তা রক্ষী রুহুল আমিন, স্থানীয় ওয়েল্ডিং শ্রমিক আবদুল লতিফ, পলাশ ও নূরে আলম।
বগুড়া সোনালী ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজার আবদুস সামাদ জানান, সোনালী ব্যাংক রাজশাহী অঞ্চলের জিএম আফজাল হোসেনকে প্রধান করে ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সোনালী ব্যাংক রাজশাহী বিভাগের জিএম সুবল চন্দ্র, নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহজাহান, রফিকুল ইসলাম এবং বগুড়া অফিসের এজিএম তৈয়মুর রহমান। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মুর্তজা আলীর নেতৃত্বে ৩ সদস্যবিশিষ্ট আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। চুরি হয়ে যাওয়া ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৯৮৪ টাকার মধ্য থেকে সুড়ঙ্গ থেকে ১ লাখ ৭২ হাজার ১৮৪ টাকা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় সোনালী ব্যাংক আদমদীঘি শাখার ম্যানেজার ও ক্যাশিয়ারকে বগুড়ায় বদলি করা হয়েছে। বগুড়ার অতিরিক্তি পুলিশ সুপার (পূর্ব) সৈয়দ আবু সায়েম জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে।
তদন্ত চলছে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে হাইড্রলিক জ্যাক, দুটি গ্যাস মিটার, ড্রিল মেশিন, দুটি গ্যাস সিলিন্ডার, একটি সেলাই রেঞ্জ, একটি কর্নি।
দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ : রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক বগুড়ার আমদীঘি শাখায় সুড়ঙ্গ খুঁড়ে টাকা লুটের ঘটনায় ব্যাংকের দায়িত্বরত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত দায়িত্বহীনতা ও অসচেতনতা রয়েছে বলে মনে করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট শাখার ব্যবস্থাপক, উপ-মহাব্যবস্থাপক ও মহাব্যবস্থাপককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে তদন্ত সাপেক্ষে দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া ও সোনালী ব্যাংকের সব শাখায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের জন্য ১০ দফা নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
ব্যাংকিং বিভাগের উপ-সচিব রিজওয়ানুল হুদা স্বাক্ষরিত এ ধরনের একটি নির্দেশনা গতকাল সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) বরাবরে পাঠানো হয়েছে। সুড়ঙ্গ খুঁড়ে টাকা লুটের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তা, নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা প্রহরীরা সমানভাবে দায়ী বলে মনে করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এজন্য সবার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর আগে ২৬ জানুয়ারি সোনালী ব্যাংকের কিশোরগঞ্জ শাখায় সুড়ঙ্গ খুঁড়ে টাকা লুটের ঘটনায় একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। এতে ভল্টের নিরাপত্তা বাড়ানো, সব শাখা কার্যালয় নিজস্ব ভবনে স্থানান্তর, সার্বিক কার্যক্রম শক্তিশালী সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা, আবাসিক ভবনে স্থাপিত শাখাগুলোয় পুলিশ পাহারা জোরদার এবং একই ভবনের ভাড়াটিয়াদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ সংবলিত একটি চিঠি সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের এমডিদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এদিকে আদমদীঘি শাখায় চুরির ঘটনায় একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। চিঠিতে সাপ্তাহিক ও অন্যান্য ছুটির দিনে ব্যাংকের শাখাগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে বলা হয়েছে।
চিঠির তথ্যমতে, সোনালী ব্যাংকের সব শাখার ভল্ট রুমগুলোর মেঝে ও দেয়ালগুলোকে আরসিসি ঢালাইযুক্ত করে স্টিল প্লেট যুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভল্ট রুমে অত্যাধুনিক বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা ও বৈদ্যুতিক অ্যালার্ম যুক্ত করতে বলা হয়েছে।
সব শাখাকে ভাড়া বাসা থেকে নিজস্ব ভবনে স্থানান্তর করার পরামর্শ দিয়েছে তদন্ত কমিটি। ভল্ট ক্যাপাসিটির অতিরিক্ত অর্থ দৈনন্দিন বাংলাদেশ ব্যাংকে স্থানান্তর করতে বলা হয়েছে। ভল্ট রুমে কোনো জানালা ও ভেন্টিলেটর না রাখতে পরামর্শ দিয়েছে কমিটি।
উল্লেখ্য, ২৬ জানুয়ারি সোনালী ব্যাংক কিশোরগঞ্জ শাখায় সুড়ঙ্গ খুঁড়ে ১৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা চুরি হয়। আর গত শনিবার বগুড়ার আমদীঘি শাখা থেকে একই কায়দায় ৩২ লাখ ৫১ হাজার টাকা লুট করেছে দুর্বৃত্তরা।
এ ঘটনায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, সোনালী ব্যাংকের এসব লুটের ঘটনা ঠেকাতে ব্যাংকটির অবকাঠামোগত উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা জোরদারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।