আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হার্ডলাইনে সরকার

নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট বিতর্ক চাপা দিয়ে সুশাসন নিশ্চিত এবং উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে অনিয়ম-দুর্র্নীতি ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে হার্ডলাইনে সরকার। ক্ষমতাসীন দলের বর্তমান, সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালী নেতারাও এ ক্ষেত্রে ছাড় পাবেন না। আগের মেয়াদের একাধিক মন্ত্রী ও এমপির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে এরই মধ্যে সরকারের কঠোর মনোভাবের আভাস মিলেছে।

সূত্রমতে, রাষ্ট্র পরিচালনায় জনমত ইতিবাচকভাবে ধরে রাখতে সরকার শুধু বর্তমান নয়, গত সরকার এবং তার আগে আওয়ামী লীগের শাসনামলে অনিয়ম করে যারা পার পেয়েছিলেন, তাদেরও আইনের আওতায় আনবে। দীর্ঘ দিন ধরে ঝুলে থাকা মামলাগুলো সচল করা হবে।

অনিয়ম-দুর্নীতির পাশাপাশি জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধেও সরকারের অবস্থান জিরো টলারেন্সে। এসবের পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মহাজোট সরকারের মেয়াদে ২০১৩ সালের শেষ ছয় মাসে বিভিন্ন জেলায় সহিংসতা, ট্রেনসহ গণপরিবহনে হামলা, সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে আক্রমণ, অগি্নসংযোগ ও নির্যাতনের ঘটনার বিচার করা হবে দ্রুত সময়ে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এসব ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থান খুবই কঠোর।

সূত্র জানায়, ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশে যে বিতর্ক আছে, আইনের শাসন নিশ্চিতের মধ্য দিয়ে তার অবসান ঘটাতে চায় সরকার।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন এ সরকার সুশাসনের পাশাপাশি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও বিগত সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতাও ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর। এরই অংশ হিসেবে নতুন সরকার গঠনের পর পরই আগের মেয়াদে যেসব মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়। সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান, বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্য আসলামুল হক, বদিউজ্জামান বদি, এনামুল হক এবং মহাজোট সরকারের শরিক জাতীয় পার্টির আবদুল জব্বারের সম্পদসংক্রান্ত নথিপত্র তলব করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের এরই মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদকের তদন্ত দল। নির্বাচনী হলফনামা অনুযায়ীই তাদের বিপুল সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়, যা অবৈধভাবে অর্জনের অভিযোগ ওঠে।

অভিযোগ রয়েছে সম্পদের তথ্য গোপনেরও। দুদক একাধিক সচিবকেও তলব ও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তাদের কার কোথায়, কী কী সম্পদ আছে, তার হিসাব নেওয়া হচ্ছে।

নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, এই প্রথম কোনো সরকার নিজ দলের নেতাদের বিরুদ্ধেই আইনি ব্যবস্থা নিল। প্রধানমন্ত্রী এ পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছেন।

এখন যারা ক্ষমতায় তাদের কারও বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও আমলাদের দায়ভার সরকার নিতে চায় না। তাদের বিচারের মুখোমুখি না করলে দায় সরকারকেই বহন করতে হবে। তা ছাড়া যেহেতু নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশে বিতর্ক আছে, তাই সুশাসন ও উন্নয়নে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। জানা গেছে, সরকার একে একে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় (১৯৯৬) শেয়ার কেলেঙ্কারির হোতাদেরও আইনের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ ক্ষেত্রে অপরাধী যত বড়ই হোক না কেন, ছাড় দেওয়া হবে না। একইভাবে বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে যে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের উত্থান হয়, তা নির্মূলে সেই সময়কার এ-সংক্রান্ত সব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে এসব মামলা বিচারাধীন। সম্প্রতি একটি মামলায় হাজিরা দিতে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে ময়মনসিংহ নেওয়ার পথে পুলিশের প্রিজন ভ্যান থেকে তিন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। তাই এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির পদক্ষেপ নিতে আইনমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার বিচারও দ্রুত শেষ করার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। ওই হামলায় সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা আহত হন। মামলাটি প্রায় ১০ বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি। সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার দুর্নীতি, অনিয়ম ও অপরাধ দমনে শুরু থেকেই কঠোর অবস্থানে।

ফলে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগের ছয় মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে যে সহিংস তাণ্ডব চালানো হয়, নির্বাচনের পর পরই তা বন্ধ হয়ে যায়। সহিংসতা হওয়া জেলাগুলোয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সক্রিয় করে তোলার পর থেকেই অপরাধপ্রবণতা কমে আসে। তবে অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জোর তৎপরতা অব্যাহত থাকবে। বিগত নির্বাচনের আগের দিনগুলোয় বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা ১৯টি জেলার অর্ধশতাধিক উপজেলা ও এলাকায় তাণ্ডব চালান। রাস্তার গাছপালা কাটা, রেললাইন উপড়ে ফেলা, ট্রেনে অগি্নসংযোগ ও নাশকতা সৃষ্টি, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা এবং নারী-পুরুষ ও শিশুদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়।

সেসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। সরকার জনমত গঠনেও কাজ করবে। এ ক্ষেত্রে মাঠ প্রশাসনের পাশাপাশি, জনপ্রতিনিধি ও দলীয় নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ত করা হবে।

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।