চলমান উপজেলা নির্বাচনে দল সমর্থিত প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করতে বিদ্রোহীদের ব্যাপারে হার্ডলাইন নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলীয় পদে রয়েছেন এমন কেউ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হলে তাকে এবং তার সমর্থকদের দল থেকে বহিষ্কারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইতোমধ্যে তৃতীয় ধাপে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী বেশ কয়েকজন বিদ্রোহী প্রার্থীকে দলের সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে যাতে কেউ প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ না নেন সে জন্য সংশ্লিষ্টদের হুঁশিয়ারিও করা হচ্ছে। গোপন মনিটরিংয়ের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে তৃণমূল নেতাদের নির্বাচনী কর্মকাণ্ড।
চতুর্থ উপজেলা পরিষদের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বের নির্বাচনে আশানুরূপ ফলাফল না হওয়ায় অসন্তুষ্ট আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড। এ জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদের দায়ী করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বিদ্রোহীদের নিষ্ক্রিয় করতে ব্যর্থ হওয়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা, এলাকার মন্ত্রী, এমপি ও জেলা নেতাদেরও দুষছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তী চার পর্বের নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোকে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, সংগঠনের সিদ্ধান্তের বাইরে যিনি যাবেন তিনি এলাকার যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করবেন ভবিষ্যতে দলের পদ-পদবি প্রদানের ক্ষেত্রেও তাদের সেসব কর্মকাণ্ড বিবেচনায় আনা হবে।
দলীয় স্বার্থ, সিদ্ধান্ত, শৃঙ্খলা ও ভাবমূর্তির বিরুদ্ধে গিয়ে দলের প্রার্থীর বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী বিদ্রোহী প্রার্থীর জন্য আওয়ামী লীগের দরজা চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া হবে। জানা গেছে, বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে হার্ডলাইনের পাশাপাশি দলীয় সমর্থনের নামে যোগ্য প্রার্থীদের বঞ্চিত করে প্রভাবশালী নেতা, মন্ত্রী-এমপিরা যাতে পকেট প্রার্থী না দেন সে বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। শনিবার দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন। অন্যদিকে সন্ধ্যায় আরেকটি বৈঠক হয় সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয়েও। পৃথক দুটি বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দলের নীতিনির্ধারণী মহল নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, উপজেলাগুলোতে একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে সর্বাত্দক চেষ্টা চালানোরও নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় প্রধান। এ লক্ষ্যে প্রথমে সমঝোতার ভিত্তিতে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিষ্ক্রিয় করানোর চেষ্টা করতে বলা হয়েছে। এ জন্য প্রয়োজনে তাদের ইতোমধ্যে ব্যয়িত নির্বাচনী খরচও দেওয়া হবে। আলাপ-আলোচনায় কাজ না হলে নির্বাচনের আগেই বিদ্রোহী প্রার্থীকে দল থেকে বহিষ্কার করে ভোটারদের কাছে সে খবর প্রচার করা হবে। তাদের সমর্থন করায় সহযোগীদেরও বহিষ্কারসহ দ্রত সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
আগামী ১৫ মার্চ তৃতীয় পর্বে ৮৩ উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জানা গেছে, এ নির্বাচনে অন্তত ৫০টি উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। এ সংখ্যা ঢাকা বিভাগে সর্বাধিক। ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকজন বিদ্রোহী প্রার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই বাকিদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
দ্বিতীয় ধাপে ১১৭ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ছিল ৫৪ জন এবং প্রথম ধাপে ৯৮ উপজেলায় ছিল ৫২ জন। আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতার মতে, তৃণমূলে কোন্দল ও একটু কৌশলী হলে তৃতীয় পর্বেই বিরোধী জোট বিএনপি-জামায়াতকে টপকানো সম্ভব হবে। এ জন্য প্রতিটি উপজেলায় একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে হবে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ১ম ও ২য় পর্বের চেয়ে পরবর্তী পর্বগুলোতে আওয়ামী লীগ আরও ভালো করবে। কারণ হিসেবে বলেন, দলের সমর্থন না পাওয়া বিদ্রোহী প্রার্থীরা ইতোমধ্যেই বুঝে গেছে, দলের সমর্থন না থাকলে নির্বাচনে জয়ী হওয়া সহজ নয়।
দল থেকে বিদ্রোহী দমনে আবার নতুন দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারা এ নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন। এতে সুফলও আসছে। দলের উপজেলা নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তৃতীয় ধাপ থেকে সারা দেশে আওয়ামী লীগ যে কোনো মূল্যে একক প্রার্থী নিশ্চিত করবে। প্রয়োজনে নির্বাচনী এলাকায় যাচাই করে জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকেই দলীয় সমর্থন দেওয়া হবে।
কোনোভাবেই বিদ্রোহী বা দলের একাধিক প্রার্থী রাখা হবে না। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, দুই দফা নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অনেক ক্ষেত্রে বিদ্রোহী প্রার্থীর থাকার কারণেই নিজ দলীয় প্রার্থীদের পরাজয় হয়েছে। সেসব দিক বিবেচনায় মাথায় রেখেই এখন কৌশলী হয়েই পা বাড়াবে আওয়ামী লীগ। একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে যা যা করা দরকার তাই করা হবে। বিভাগীয় দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা বলেন, দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকেই অনেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন।
টাকাও খরচ করেছেন। আমরা সেসব এলাকায় দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীকে এক টেবিলে বসিয়ে মিটমাট করার চেষ্টা করেছি। কয়েক জায়গায় সফলও হয়েছি। এই ফর্মুলা ধরে আরও এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। বিদ্রোহী প্রার্থীরা আমাদের কথা না শুনলে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।