Set sail, ye hearts~ into the sea of hope..
ছোটবেলায় একটা ধাঁধা আমাকে প্রায়ই জিজ্ঞেস করা হতো। “ধরো, চার রাস্তার সংযোগে চারটি গাড়ি এসে দাঁড়ালো। একটা গাড়ীতে প্রেসিডেন্ট, একটা গাড়ীতে সেনাপ্রধান, একটা গাড়ীতে স্কুল বাস আর প্যাঁ প্যাঁ করা একটা অ্যাম্বুলেন্স। আর তুমি হচ্ছো সেই মোড়ের ট্রাফিক। তুমি কাকে আগে বের হওয়ার সিগনাল দেবে?”
আমি মাথা চুলকে একটু চিন্তা ভাবনা করে বলতাম, “আগে বের করবো প্রেসিডেন্টকে, তারপর সেনাপ্রধানকে।
এরপর বাকী দুইটাকে একসাথে বের করে দিবো। ”
এই নিয়ে বোনের সাথে তুমুল তর্কের পর বাবার কাছে গেলে তিনি আমাকে বোঝাতেন, “অ্যাম্বুলেন্স রুগী বহন করে, সেই রুগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াটা সবচেয়ে জরুরী। তাই প্রথমে তাকে বের করে দিতে হবে। এরপর আসবে সেনাপ্রধান, কারণ যুদ্ধের মতো জরুরি পরিস্থিতিতে তার কমান্ড সময়মত না পৌঁছালে সমস্যা। এরপর বের করতে হবে স্কুল বাসকে, কারণ শিশুরা হচ্ছে দেশের ভবিষ্যৎ, তাদের স্কুলে সময়মত পৌঁছানো জরুরি।
আর সবার শেষে যাবেন প্রেসিডেন্ট। ”
এর আগেও একটা লেখায় বলেছিলাম, অনেক বিষয়ই আমরা আসলে পিচ্চিকালে খুব ভালো জানতাম। বড় হয়ে কঠিন সব পড়াশুনা শিখতে গিয়ে সেসব সহজ সরল সমীকরণ ভুলে গিয়েছি। যাহোক, উপরের এই ধাঁধা, আর তার প্রসঙ্গে এতক্ষণ ধরে এইসব কথা কেন আওড়ালাম তার কৈফিয়তটা এবার দিচ্ছি। তার আগে একটা গল্প শুনুন।
না! কোনো রূপকথার বই থেকে না, কিছুক্ষণ আগে একটা পত্রিকাতে পড়লাম গল্পটা।
স্কুল পড়ুয়া এক কিশোর, নাম নাহিদ। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান, তার বাবা চাকরী করে এক স্টুডিওতে। সে তার মামার সাথে বেড়াতে এসেছিলো সংসদ ভবন এলাকায়। সম্ভবত স্যুট বুট পরে হোমরা চোমরা জনপ্রতিনিধিরা সংসদে গিয়ে কিভাবে আইন বানায় সেটা দেখার শখ হয়েছিলো তার, কিংবা হয়তো ব্যস্ত শহরে পড়াশুনার ফাঁকে একটু হাওয়া খেতেই মামাকে সাথে নিয়ে ঘুরতে এসেছিলো চন্দ্রিমা উদ্যানে।
কিন্তু উদ্যানের গাছপালা, লেকের পাশে বসে থাকা কপোত-কপোতী, ফুচকা-চটপটি-হাওয়াই মিঠাই..সব কিছু বাদ দিয়ে কেন যে তার চোখ গিয়ে পড়লো চন্দ্রিমা উদ্যানের টলটলে পানির দিকে! লোভ সামলাতে না পেরে শেষ পর্যন্ত সে নেমেই পড়লো পানিতে। তাও আবার ধারে কাছে না, লেকটা যেখানে সবচেয়ে গভীর একেবারে সেখানে চলে গেলো ছেলেটা। আর যতই সামনের দিকে এগোতে লাগলো, ততই তলিয়ে যেতে শুরু করলো অথৈ পানির গভীরে।
এই ঘটনার ঠিক কিছুক্ষণ পরের ঘটনা, ঘড়িতে ঘণ্টার কাঁটা তিনের ঘর ছুঁই ছুঁই করছে। শেরেবাংলা নগরের পরিকল্পনা কমিশন থেকে বৈঠক করে ঠিক এই সময়ে গণভবনে ফেরার কথা প্রধানমন্ত্রীর।
পুলিশ একেবারে এলার্ট হয়ে গেছে, কোনো ধরণের নিরাপত্তা ঝুঁকি নেয়া চলবে না এখন! দায়িত্ব রত অফিসার দেখলেন, চন্দ্রিমা উদ্যানের চারপাশে কিসের এক জটলা লেগেছে। শুনলেন, কোন এক ছেলে নাকি গোসল করতে লেকের পানিতে নেমেছিলো, এখন ডুবে যাচ্ছে, তুমুল চিৎকার চেঁচামেচি করছে। আর আশেপাশের লোকজন চেষ্টা করছে তাকে উদ্ধার করতে। অফিসার বিরক্ত মুখে ঘড়ি দেখলেন, তার ডিউটি আসলেই কেন সবসময় একটা করে ঝামেলা হয়!! এই ছেলে সাঁতার জানে না তাহলে পানিতে নামলো ক্যান!! পরিস্থিতিটা এমন, ডিউটিতে থাকা পুলিশরাও ইতস্তত করছে কি করা যায়, কি করা যায়..
ঠিক কিছুক্ষণ পরের ঘটনা। প্রধানমন্ত্রী নিরাপদে গণভবনে পৌঁছেছেন।
নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অফিসাররা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তাদের দায়িত্ব শেষ করে আবার যার যার স্বাভাবিক কাজে ফেরত গেছেন। আর ডুবুরি হুমায়ুন কবীরও নিথর নাহিদের দেহ কাঁধে বহন করে পৌঁছে দিয়েছেন তার বাবা মায়ের কোলে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে আমার পিচ্চিকালে দেয়া উত্তরটাই ঠিক ছিলো! কিছুদিন আগেও বলেছিলাম, কিছু কিছু ব্যাপার আছে যেগুলা আমরা পিচ্চিকালেই ঠিকভাবে বুঝি , যত বড় হই তত গুলিয়ে ফেলি। এখানে পার করতে হবে প্রটোকল অনুযায়ী, সবার আগে প্রেসিডেন্ট, তারপর সেনাপ্রধান, এরপর আমজনতা। মানবতার উছিলায় কোনো এক মাথামোটা দার্শনিক ভুল নীতিবাক্য দিয়ে করে আমাদেরকে বিভ্রান্ত করে এসেছে এতদিন!
তাই বলি, যারা এই ধাঁধাটা এতদিন শুনেছেন এবং বিভ্রান্ত হয়েছেন, তারা উত্তরের ভুলটা শুধরে নিন।
নাহলে পরে দেখা যাবে পস্তাতে হচ্ছে।
(একটা কথা বলে শেষ করি, আমি সত্যিই বিশ্বাস করি শুধু প্রধানমন্ত্রী কেন, ওই আসনে আসীন হওয়া কোনো রাজনীতিবিদই জেনেশুনে মানুষের জীবনের উপরে নিজের প্রটোকলকে প্রাধান্য দিবেন না। কিন্তু সমস্যা হলো, তারপরও দেশটা এভাবেই চলে। তাই পুরনো নীতিকথা বাদ দিয়ে বাস্তবতাটা মেনে নেয়াই মনেহয় আমাদের নাগরিকদের জন্যে নিরাপদ। )
---
আগের পোস্ট:
এখনো খোজ মেলেনি মাঝপথে উধাও হয়ে যাওয়া বিমানের : উৎকণ্ঠা, রহস্য, প্রার্থনা..আর অপেক্ষা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।