আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অজস্র শব্দের মিছিলে উঁকি দেয়া কতিপয় রাত

জীবনের জন্যই এই সব কথামালা

১.
ভয় ডর কখন ছেড়ে গেছে! শিরার মধ্যে কেবলি খেলা করে সমুদ্র প্রলয়।
যদ্দিন হারানোর শঙ্কা থাকে, তদ্দিন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সময়াবর্তন -
বহুকাল আগেই নগ্ন করে ছেড়ে গেছে নিশ্চিহ্ন উইপোকার হাট। পৃথিবীর
কাছে প্রার্থনার কিছু নেই আর; কেবলই প্রলয় ইচ্ছে, ব্রহ্মান্ডের স্তম্ভ নাড়িয়ে
দেয়ার লক্ষতম গোপন ইচ্ছে! অপূর্ণতারা কই থাকে, খোঁজ পাঠাবে পাগলা
হাওয়া।

২.
বিষন্নতার মত অসুখ আর একটিও নেই।

স্মৃতিকাতরতার চেয়ে দীর্ঘ নদ নেই। কানাগলিতে ছুটে চলা আর যাপিত অন্ধকার মুখোমুখি দাঁড় করায় যখন স্বর্ণদিন,ফেলে আসা মণিমুক্তোর জন্য উঠে সুবিশাল হাহাকার। কতদিন ফিরিনি সেখানে, ভেজা দূর্বাঘাস মমতার চাদর বিছিয়ে ডাকে যেখানে 'সন্তান আয়'। বুকের ভেতর সন্তর্পনে ঝড় উঠে, হাহাকার বিচ্ছিরি তান্ডব ডেকে আনে। আমি ফিরিনি সেখানে, যেখানে প্রতিযোগ নেই, বেঁচে থাকার জন্য নোংরা দৌড় নেই।

অদৃশ্য প্রতিবন্ধকতা ফিরায়ে রাখে আমায়।

৩.
অন্ধকারের জয় হোক, এই নিরবিচ্ছিন্ন হেরে যাওয়ার জয় হোক। এই পৃথিবী পরিভ্রমন আর জন্মবিলাসের শোধ হোক। গুমোট নিঃশ্বাসে ভর করে এখানে এই বদ্ধ ঘরে মৃত্যু নামুক। এই শীতের রাতে হিমেল হাওয়ায় ভর করে শাদা যন্ত্রণা ঘিরে দিক আমায়।

আমি শব্দের শপথ নিয়ে শাদা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করি।

৪.
আমাদের জন্মান্ধ চোখে দিন রাত্রির তফাৎ নেই। স্রোতের মত যে সময় বয়ে যায়, তা প্রকৃত অর্থে বড় দীর্ঘ। জন্মান্ধের বুকে বিষফোড়া গেথে যায় সময়। আমরা খুব করে জানি, আমাদের ঈশ্বর প্রতিশ্রূত সময়ের বদলে দুঃসময়ের অনুষঙ্গে পোড়ানো হচ্ছে।

তবুও আমাদের শব্দহীন থেকে যেতে হয়। আমাদের হা করা উচ্চারণ থেকে প্রতিবাদ, অনুযোগ করা শব্দগুলো কেড়ে নেয়া হয়েছে। আমরা জন্মান্ধ, শব্দান্ধ ও।

৫.
জল কুয়াশার মিলন দেখলেই তোমাকে মনে পড়ে। ঠিক করেছি এবার, শীতের গন্ধ শুকে উড়ান দেবো তোমার শহর।

হিমেল হাওয়ার সাথে গোপণীয়তার সন্ধি হবে, আমি একগুচ্ছ জ্যোৎস্না নিয়ে মুখোমুখি হবো তোমার। জানো তো, শীতকালীন জ্যোৎস্নারা অতিমাত্রায় রবীন্দ্রানুরাগী! দিনক্ষণ না ভেবে তুমি বরং গীতবিতানে সুর তোলো।

৬.
মানুষের বেদনার ভারে পৃথিবীর ঘুম ভাঙ্গেনা। যারা জেগে থাকে, তারা ঝিঁঝি। ঝিঁঝিঁদের বুক পকেটে শয্যা পাতে অপ্রাপ্তির এক লক্ষ ভ্রুণ।

আমি তোমাতে রাখিনি মিলিত রাত্রী জাগরণের আকুতি, রাত জাগার মত দীর্ঘতম মৃত্যুযন্ত্রণা কেবল নিঃসঙ্গ প্রহরীর। কেবল ঝিঁঝিঁরা, কেবল নিঃসঙ্গ হেরে যাওয়া মানুষেদেরই থাকে সহস্রটি নির্ঘুম রাত।

৭.
দুটো নীল রঙ্গা প্রজাপতি সন্ধ্যা ভ্রমনে এসে বসে জলের পাড়। দুটো নীল রঙ্গা প্রজাপতি গল্প তোলে রাত্রি আধার। একটি আওলা চুলের বিধ্বস্ত মুখো তরুণ সুর তোলে গিটারে 'আমি একা বসে থাকি পথের কিনারে'।

একটি পাখি গান গায়, একটি পাখি রাত্রি নামায়। আলোকের ধারায় সময় রাখে ক্ষমতাধর হাত, এখন সময় আঁধারের। আধারে জলের রঙ বদলে যায়, প্রজাপতি আর পাখিরা দেখতে পায়। নিঃসঙ্গ তরূণের সহায় একাকিত্বের সুর, শূন্যতার ধরায়। একটা জলপাই রঙা প্রহরী গাড়ি! জলপাই রঙা শাসকের ঘড়ির কাটায় রাত্রি মানেই বিচ্ছিন্নতা, শূন্য জলের পাড়! সুর থামিয়ে দাও।

জলের সাথে কেটে দাও সুরের বাধন। নীল প্রজাপতির গল্প কে থামায়! না অন্ধকার, না জলপাই মুখের হুইসেল! গল্প চলে জলে ডাঙায়!

৮.
কিংবা আমার নয়, বিষন্ন বিকেলে মারা যাওয়া এক পাখির গল্প শুনো। বিস্তীর্ণ অন্ধকার যার চোখে নামিয়ে এনেছিল পৃথিবীর দীর্ঘতম দুঃসহ রাত্রি। কিংবা একটি হলদে পাতা, যার আয়ুষ্কাল খেয়ে ফেলেছিলো ছোট্ট কীট; আর যাকে পিষে মড়তে হয়েছিলো শীতের বিকেলের কুয়াশা ভেজা রাজপথে পথচারীর বুটের তলায়। কিংবা কেউ নয়, যে বা যারা যায় তাদের গল্পে পৃথিবীর কোন লাভ থাকে না।

শীতের রাতে শহুরে দেয়ালে সোডিয়াম আলোর রঙ বড্ড বর্ণিল, রাজপথ কাপিয়ে হেটে যাওয়া গল্পচারীর দল বেশ ঝলমলে পোষাকে; দেখো পৃথিবী বদলায় প্রতিটি উজ্জ্বল রঙে। বরং চলো, বাহারি উজ্জ্বল্যের গল্প শোনা যাক।

৯.
ঘড়ির কাঁটায় মধ্য রাত্রি পেরোলেই ভাবি এ অন্ধকার ক্রমঃশ কেটে যাবে, রাত পোহাবে, সকাল হবে, রোদ খেলা করবে এখানে সেখানে। অথচ কিচ্ছুই হয় না! এ শহরে রাত ফুরোয় না; ঘড়ির কাটা মুখস্ত বিদ্যার মত জানান দেয় দিন, ভুল করে জানান দেয় সকাল! আর আমাদের চোখে থাকে এক সমুদ্দুর অন্ধকার। শুধু গান থেমে যায়! সুর থেমে যায়! পৃথিবী হয়ে পড়ে সঙ্গীতবিহীন।

আমাদের চোখের সীমানায় অন্ধকার আরো বিস্তীর্ণ, বিদঘুটে হতেই থাকে। অন্ধকার ক্রমঃশ নাক-মুখ হয়ে শরীরের ভেতর ঢুকে পড়ে; আমাদের চিরকালীন রাত্রির পর দিন হয়ে যাওয়ার বিশ্বাসে ঘুণ ধরায়। আলোক বলে কিছু থাকে না স্মৃতির ক্যানভাসে। একদা অন্ধকার দেখে আর্ত-চিৎকার দেয়া আমি আমরা অন্ধকারের সাথে মিশে যেতে থাকি ইচ্ছে-অনিচ্ছেয়; প্রজন্মান্তরে নিজেরাই ভয়ংকর হয়ে উঠি।

১০.
বিষন্নতা, দূর মেঘের মত দাঁড়িয়ে ছায়া দিচ্ছো কেন? শীতে জমে যাচ্ছি এই অবেলায়।

অথচ নৈকট্যে তুমি জাগাতে পারো দিন শেষের গান। তবে কেন দূর? অর্থবহ দূরত্বে বৈপরীত্ব সবখানে আসে না, অন্তত বুকের ভিতর বেদনার অঙ্কুরোদগম জন্মাচ্ছে যাদের। কিংবা বিপন্নতা নয়, দূরবর্তী বিষন্নতা কেবলি ছায়া মেঘ, অস্ফুট শব্দের অতিরিক্ত বেদনা। তারচেয়ে বরং হাত দূরত্বে বসো কিংবা গায়ে গা ঘেষে। কথা তোলো, নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়াও এক প্রকারের সৌন্দর্য্য, এক প্রকারের বিশুদ্ধ সঙ্গীত।



১১.
নিঃশব্দ বেদনার রাত রেখাপাত করে দীর্ঘকালীন শূন্যতার। ব্যক্তিক দৈন্যতাকে গ্রাস করে থরথরিয়ে কাঁপা নাগরিক সন্ধ্যা। আহা, আমাদের বিচিত্র জীবন! নদীর দুটি কূল দৃশ্যমান বৈপরীত্যের বাইরে বড় বেশি সমান্তরাল।

১২.
কবিতার কথা বললেই গ্রামের শ্যাওড়া গাছটির স্মৃতি চোখে ভাসে। আহা, সেই অন্ধকার নামানো গাছ।

শীতের রাতে কুয়াশা বিলির একমাত্র প্রতিনিধি। মাথা উচু ডালের থেকে বেড়িয়ে আসা স্মৃতির বিড়াল। আমি কিচ্ছুই দেখিনি। গ্রাম শ্যাওড়া শূন্য হয়েছে জন্মের কতদিন আগে। অথচ শীতের সন্ধ্যা হলেই মনে পড়ে, একটা বুড়ো শ্যাওড়া গাছ ভেংচি কেটেছিল আমার তরুণী মাকে।

আহা, শ্যাওড়া গাছ! শীতের ভেজা সন্ধ্যা! বয়সের ছাপ কেন পড়েনা স্মৃতি কথায়!

১৩.
কিছু অদ্ভূত রকমের ভালো গল্পও থাকে। সেসব গল্প কৃপন হাতে লুকিয়ে রাখি। যা প্রকাশ্যে আসে তা ক্রোধ, খানিকটা হেরে যাওয়া। অথচ প্রতিটা পরাজয়ের শেষ পৃষ্টায় আরেকটা শুরুর চিহ্ন দেখে ঠিকই অস্ফুট হাসি। আহা, আমার হেরে যাওয়ার সুখ।

এ গল্প অবিরাম চলার, এ গল্প দিন রাত্রিকে একই সমান্তরালে অন্ধকারে ঢেকে দেয়ার। প্রতিটি নিদ্রায় এখন শোকের মিছিল দেখি, শোক ভেঙে গেলে আমার ঘুম হয় না। আহা শোক, আমার সুখনিদ্রা। কেমন যেন গুলিয়ে ফেলছি সব, শোক আর সুখ। কি ক্ষতি তাতে, যা শোকের তাই আমার কাছে সুখের কিংবা যা সুখ তার প্রকৃত ফল শোক।

ভালো থাকাটা মাকাল ফলের মত, এখানে আমার উঠোনে বপন করলেও বাঁচেনা কোনকালেই। তাই দুঃখকে আপোষ নয় অনুধাবনে এক রঙে নিয়ে এলাম। এই বিচিত্র জীবন এক রঙা হলে মন্দ কি, সব ঘটন-অঘটনের রঙ যদি হয় কালো। এই কালো রোদ্দুরে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দেই, এইসব না ভালোথাকাও প্রকৃত অর্থে ভালো।

১৪.
সুন্দরের ভার তুমি বইতে দাও মাংসের দোকানিকে, সে অতি লাভের লোভে নিজেই কসাই সেজে বসে, আর সুন্দরের চারপাশ কাটতে কাটতে আলাদা একটা স্তুপ গড়ে তোলে।

তা বাজারেও বিকোয় ভালো। তোমাদের খবরের কাগজে এই ব্যবসায়িক সৌন্দর্য্যকে সমাজের অপরিহার্য্য বলে চার কলামের পরামর্শও ফলাও। আর ফাঁকতালে সেই মাংশ ব্যবসায়ী কসাই তার অদৃশ্য ছুড়ি চালায় লতা-পাতা গাছপালা সমেত সবুজের পর। বাহ, এবার হাততালি দাও। বছর শেষে মুনাফা গুনে দেখো, এতো অভিনব, সৌন্দর্য্য ছাড়িয়ে যায় অন্য সব ব্যবসায়কেও।

এবার মাথা নুয়ে আমাদের প্রণাম লও।

১৫.
কেবলই মনে হয় কতদিন যাইনি তিতাসের পাড়, কতদিন লিখিনি একটি কবিতা। রুটিন করে সন্ধ্যায় ঠিকই বেড়িয়ে পড়ি, গোধূলীর রঙ মেখে জল আর হাওয়ার নাচন দেখবো বলে। আর তখনই কে যেন কানের পাশে বাজায় রাত্রি সঙ্গীত! কবিতা লেখার ভাবনা আমার কেবলি অন্ধকারে মিলিয়ে যায়!

নোটঃ প্রায় সব কটা লেখাই শীতের সময়কার। শীত তাই ঘুরে ফিরে থাকলোই।

উপস্থিতি জানান বিষয়ক পোস্ট ও বলা যায় এটাকে। সেটা ব্যক্তিক কারণেই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.