আমি নতুন কিছু লিখবো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধে জামায়াতের নয়া তত্পরতা
ব্রাদারহুডের আগমন নিয়ে তোলপাড়
আনোয়ারুল করিম:
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধে দেশ-বিদেশে সক্রিয় জামায়াতে ইসলামী। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দলটির সাবেক আমির গোলাম আযম, বর্তমান আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ কয়েক শীর্ষ নেতার বিচার চলছে। এ বিচার বন্ধে শুরু থেকে তারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বলে অভিযোগ রয়েছে। দেশে বিক্ষোভের নামে নাশকতা সৃষ্টির পাশাপাশি বিদেশে লবিস্ট নিয়োগসহ নানা প্রক্রিয়ায় তারা বিচার বাধাগ্রস্ত করছে। স্কাইপি সংলাপ প্রকাশও এর অংশ হিসেবে মনে করা হচ্ছে।
এমন এক প্রেক্ষাপটে দলের শীর্ষ নেতাদের বিচার বন্ধে বিদেশে তাদের ‘বন্ধুদের’ দ্বারস্থ হয়েছে জামায়াত। এমনকি নামসর্বস্ব দল দিয়ে তারা বিক্ষোভ প্রদর্শনও করাচ্ছে জাতিসংঘের সামনে। গত সোমবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সামনে বাংলাদেশি আমেরিকান ওমেন্স অ্যাসোসিয়েশন বিক্ষোভ প্রদর্শনের পাশাপাশি স্মারকলিপি দিয়ে আটক জামায়াতের অঙ্গসংগঠন ইসলামী ছাত্রী সংস্থার সদস্যদের মুক্তির দাবি জানিয়েছে। এর পাশাপাশি মিসরকেন্দ্রিক সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের তুরস্ক থেকে আসা সদস্যদের এদেশে আগমনও জামায়াতের অপতত্পরতার অংশ বলে মনে করা হচ্ছে। ট্যুরিস্ট ভিসায় ঢাকায় এসে তারা সোমবার ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন অপরাধে আটক জামায়াত নেতাদের বিচার প্রক্রিয়া দেখেছেন।
এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে তোলপাড়। সরকারকে না জানিয়ে ট্যুরিস্ট ভিসায় এসে মুসলিম ব্রাদারহুড সদস্যদের ট্রাইব্যুনালে প্রবেশ ঠিক হয়নি বলে মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। ব্রাদারহুড সদস্যদের ট্রাইব্যুনালে প্রবেশ নিয়ে শুরু হওয়া আলোচনা প্রসঙ্গে গতকাল দীপু মনি বলেন, সরকারকে কোনো কিছু না জানিয়ে তুরস্কের প্রতিনিধি দলের নাম দিয়ে মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্যদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ঢোকা ঠিক হয়নি। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সমুন্নত বাংলাদেশের উদ্যোগে ‘বিশ্ব শান্তি উন্নয়ন প্রগতি এবং শেখ হাসিনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তুরস্ক থেকে আসা প্রতিনিধিরা আগে থেকে ভিসা নিয়ে এদেশে আসেনি।
তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যকার চুক্তিবলে তারা বিমানবন্দরে এসে অন-অ্যারাইভাল ভিসা নিয়ে এদেশে প্রবেশ করেন। ট্যুরিস্ট ভিসায় এদেশে এসে সরকারকে না জানিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পরিদর্শন অবশ্যই সঠিক নয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিসরের সঙ্গে এ ব্যাপারটি খতিয়ে দেখবে বলেও তিনি জানান।
ট্রাইব্যুনালে পর্যবেক্ষক ও মানবাধিকার কর্মী পরিচয়ে সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ঢুকে পড়েন তুরস্কের ১৪ আইনজীবী। বাস্তবে এরা সবাই মিসরকেন্দ্রিক ডানপন্থী রাজনৈতিক দল মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্য।
১৪ জনের মধ্যে একজন রয়েছেন বেলজিয়ামের। ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার অফিস থেকে বলা হয়েছে, তারা সরাসরি ট্রাইব্যুনালে এসে বিচারিক প্রক্রিয়া পরিদর্শনের ‘পাস’ চেয়েছেন। যেহেতু এটি পাবলিক ট্রায়াল সে কারণেই তাদের শর্তসাপেক্ষে পাস দেওয়া হয়। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর অংশ হিসেবেই তুরস্কের মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্যরা ট্রাইবুনালে আসেন। তিনি আরও বলেন, এটি আসামি পক্ষের লবিংয়েরই একটি অংশ।
প্রসিকিউশন থেকে বলা হয়েছে, পর্যবেক্ষক নামে আসা এই আইনজীবীরা মূলত আসামি পক্ষের আইনি সহায়তা করছেন। সোমবার দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত বিচারকাজ পরিদর্শনকারী প্রতিনিধি দলে ছিলেন ফাতেমা বেনলি, বৈরাম সাকারতেপ, ইব্রহিক ওস্তাক, নেকাটি সেলেন, ইউনুস ওমর ক্যানবি, হসনো টোনা, সাউথ পামকুচ, লুটফো ইসেন জন, আহমেদ সুরগুন, মোস্তফা ইয়াগমার, ইয়াসিন সামউ, মেহমেদ রেফিক করকুজ, জেহারা ইয়াম্যান ও বেলজিয়ামের রবিয়া ইওয়াড। এর আগে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ গুল রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের কাছে চিঠি দিয়ে বলেছিলেন, গোলাম আযমের বিরুদ্ধে অবিচার বন্ধ করতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে জামায়াত দেশ-বিদেশে কোটি কোটি টাকা খরচ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বলা হচ্ছে, কোটি টাকা খরচ করে তারা বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ দিয়েছে, যারা এই বিচারের বিভিন্ন দিক নিয়ে আন্তর্জাতিক জনমত গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এছাড়া বিদেশি আইনজীবী নিয়োগের জন্য এর আগে আসামি পক্ষের তরফ থেকে আবেদন জানানো হলেও আইনি বাধ্যবাধকতায় তা হয়নি। সর্বশেষ স্কাইপি সংলাপ প্রকাশের পর বিষয়টি ফের আলোচনায় আসে। স্কাইপি ইস্যুর পর আসামি পক্ষের আইনজীবীরা গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলা রি-ট্রায়ালের আবেদন করেছে। এরই মধ্যে গোলাম আযমের মামলার রি-ট্রায়ালের শুনানি শুরু হয়েছে। আজ পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
সকালেরখবর-২৬। ১২। ২০১২ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।