জোনাকী এক প্রকারের পতঙ্গ। এই পতঙ্গের তলপেটে স্বয়ংপ্রভ নীলাভ-সবুজ দ্যুতি থাকে। রাতের অন্ধকারে এদের তারার মত মিটমিট করতে দেখা যায়। এরা সমবেতভাবে এক ছন্দে মিটমিট করতে পারে।
জোনাকি পোকার আলোর এই উৎস হল তার তলপেটের নিচের ঠিক মাঝখানের অংশটি।
জোনাকির বা Firefly [বিজ্ঞানসম্মত নাম: Lampyris noctiluca] জোনাকি পোকার দেহের পিছনের অংশে Luminescent organ থাকে । এই Organ থেকে লুসিফারেজ (Luciferage) ও লুসিফারিন (Luciferin) নামে দুটি রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত হয় । লুসিফারিন তাপ প্রতিরোধী যা আলোকে ঠান্ডা রাখে, এ ধরণের আলো উৎপাদনকে বলা হয় বায়োলুমিনিসেন্স। বায়োলুমিনিসেন্ট এনজাইম লুসিফেরাজ এর উপস্থিতিতে অক্সিজেন ক্যালসিয়াম, এডিনোসিন ট্রাইফসফেট বা এটিপি ও লুসিফেরিন এর সাথে বিক্রিয়া করে আলো উৎপন্ন করে। এ আলোয় উত্তাপ হিসেবে কোন শক্তি ব্যয়িত হয় না, তা না হলে শক্তি খরচের ফলে জোনাকী পোকা মারা যেত।
অক্সিজেনের উপস্থিতিতে হালকা অঙ্গাণুগুলো আলোকিত হয়ে ওঠে। সাধারনত এদের শুককীটও luminescent হয়। প্রতি মিনিটে জোনাকী পোকা ১২০ বার জ্বলে এবং নেভে। একটি বাতি থেকে উৎপন্ন শক্তির শতকরা ১০ ভাগ আলো আর ৯০ ভাগ উত্তাপ। কিন্তু জোনাকিদের উৎপন্ন শক্তির শতকরা ১০০ ভাগই আলো।
একটি জোনাকির শরীরের ওজনের অর্ধেকটাই বাতির ওজন। জোনাকিরা দিনের বেলায়ও জ্বলে-নেভে। সূর্যের আলোর জন্য আমরা দেখতে পাই না।
জোনাকির খাদ্য: সর্বভুক ,গড় আয়ু: প্রায় 2 মাস, আয়তন: 1 থেকে 2.5 সেমি।
এদের পাখা আর মাথায় হলুদ লম্বা দাগ আছে।
ছয়টা পা, দু’টো অ্যান্টেনা, অক্ষিগোলক আর শরীরটা তিন ভাগে বিভক্ত। প্রতিটি জোনাকি শরীরের শেষ ভাগে একটা করে বাতি নিয়ে ঘোরে। প্রত্যেক প্রজাতির জোনাকি পোকার আলো কিন্তু এক রকম নয়, আলাদা। কোনো কোনো জোনাকি পোকার আলোর রং সবুজ, কারো আলো হলুদ আবার কারো বা কমলা। শুধু রঙই আলাদা নয়, ওদের আলোর সঙ্কেতও ভিন্ন ভিন্ন।
এক প্রজাতির পোকার সাথে অন্য প্রজাতির আলোক সঙ্কেত হুবহু মেলে না। তাই নির্দিষ্ট প্রজাতির জোনাকি পোকারাই সেসব আলোক সঙ্কেত চিনে তার স্বজাতির পুরুষ পোকাদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে। সঙ্কেত ঠিক মতো না চিনতে পারলেই বিপদ! এক প্রজাতির মেয়ে জোনাকি পোকা কখনো অন্য প্রজাতির ছেলের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পারে না, এটা ওদের সমাজে অন্যায়। যদি নেহায়েত এমন দুর্ঘটনা কখনো ঘটে যায়, তাহলে কাছে আসার পর মেয়েটো ছেলে জোনাকিকে ফাঁদে ফেলে মেরে ফেলে।
আত্মরক্ষা, যোগাযোগ ও বিপরীত লিঙ্গকে আকৃষ্ট করার জন্যে তারা আলো জ্বালায়।
গোটা পৃথিবীতে প্রায় ৬০০ মতভেদে ২০০০ প্রজাতির জোনাকি আছে। এদেরকে দেখা যায় নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে, গ্রীষ্মকালের সন্ধ্যায়। জোনাকি আর্দ্রতা ভালবাসেন এবং এদের আবাস প্রধানত এশিয়া ও আমেরিকা এর আর্দ্র অঞ্চল। জোনাকিরা সাধারণ ভেজা জায়গা পছন্দ করে। তাই জলাশয়ের ধারে ওদের বাড়ি বানায়।
এর মানে এই নয় যে, ওদের খুব পানির দরকার। পুকুর, ডোবা, নালা, খাল, বিল, নদী একটা কিছু হলেই হলো। ওরা তার পাড় ধরে গজিয়ে ওঠা ঘাস ও ঝোপ-ঝাড়ে বাসা বাঁধে। লম্বা ঘাস ওদের পছন্দ। সেসব ঘাস বা ঝোপের গাছেই ওরা থাকে, গাছই ওদের ঘরবাড়ি।
তবে ওদের সবসময় গাছে দেখা যায় না। দিনের বেলায় লুকিয়ে থাকে গাছের বাকলের তলে, গাছের গর্তে বা ফাটলে, শুকনো পাতার নিচে, ঘাসে। রাত হলেই বেরিয়ে আসে। শীতেও ওদের তেমন দেখা যায় না। ওরা স্যাঁতসেঁতে জায়গা পছন্দ করে।
কোনো কোনো প্রজাতির জোনাকি পোকার বাচ্চারা জলে থাকে এবং সেখানে মাছের মতোই তারা প্রায় বছর খানেক বেঁচে থাকে। এন্টার্কটিকা মহাদেশ ছাড়া পৃথিবীর আর সব মহাদেশেই জোনাকি দেখা যায়।
নারী জোনাকি মাটিতে তাদের ডিম বা শুককীট জমা রাখে। এবং শুককীটকে একটি numbing fluid এর মাধ্যমে খাওয়ায়। একাজে বড়রা বা পূর্ণবয়স্ক জোনাকিরা সাহায্য করে।
এছাড়া অনেক পূর্ণবয়স্ক জোনাকিরা আছে যেগুলো কোন কিছুই খায় না।
জোনাকিদের শত্রু এদেরও শত্রু আছে। তারা এদের শিকার করে খায়। এ জন্য জোনাকিরাও কম চালাকি জানে না। ওদের কেউ শিকার করতে এলে ওরা এক ফোঁটা রক্ত ছেড়ে দেয়।
সেই রক্তবিন্দু যেমন তিতা তেমনি বিষাক্ত। তাই ওদের আর কেউ শিকার করতে আগ্রহ দেখায় না। এমনকি টিকটিকি, সাপও ওদের শিকার করতে সাহস পায় না। তাই বলে ভেব না যে ওরা দুর্বোধ্য, কেউই ওদের বধ করতে পারে না। বাদুড়ের সঙ্গে ওরা পেরে ওঠে না।
রাতে বাদুড় বেশ ভালোই দেখতে পায়। তার ওপর আবার জোনাকিরা যখন আলো জ্বেলে চলাফেরা করে তখন বাদুড় ওদের শিকার করে খায়।
Reference
http://bn.zero2inf.com/
http://bn.wikipedia.org/wiki/
http://animals.nationalgeographic.com/
http://www.somewhereinblog.net/
http://www.news-bangla.com/
http://environmentmove.com/
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।