আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির ৭৩ জন সদস্যের মধ্যে অর্ধেকই নিষ্ক্রিয়। দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ সিনিয়র নেতারা সম্প্রতি বারবার দলকে ঢেলে সাজানোর মাধ্যমে শক্তিশালী ও চাঙ্গা করার কথা বললেও কার্যত কোনো উদ্যোগই চোখে পড়ছে না। ইতোমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে সারা দেশে জেলা সফরের কর্মসূচি। দায়িত্ব ভাগও করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট নেতাদের সময় নেই।
ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকায় সাংগঠনিক এ সফর কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারেননি কেউ। কেন্দ্র ঘোষিত এ কর্মসূচি মূলত ভেস্তে গেছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড দিন দিন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে। এর ফলে তৃণমূলের আস্থা হারাতে বসেছেন দলের বেশির ভাগ কেন্দ্রীয় নেতা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ কেন্দ্রীয় নেতাই এখন ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েছেন।
অনেকে দৌড়াচ্ছেন বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে। এর মধ্যে বৃহৎ একটি সংখ্যা রয়েছে, যারা সাংগঠনিক কাজের চেয়ে সচিবালয়ে দিনভর তদবির আর লবিংয়ে সময় দিতে বেশি পছন্দ করেন। আবার কেউ কেউ দলে যথাযথ মূল্যায়ন না হওয়ায় হতাশা ও ক্ষোভে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড থেকে ইচ্ছা করেই নিজেকে রেখেছেন দূরে। অনেকে আবার মন্ত্রী-এমপির প্রটোকল পেয়ে যাওয়ায় এখন আর সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের মতো কষ্টকর কাজে নিজেকে জড়াতে চাইছেন না।
তবে মন্ত্রিত্ববঞ্চিত এমন দু-একজন সিনিয়র নেতা রয়েছেন, যারা সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নামকাওয়াস্তে হলেও জড়িত রয়েছেন।
তাদেরও বেশির ভাগই মন্ত্রিত্বের আশায় গুনছেন দিন। আর বেশি করে অলিখিত বিরোধী দল তথা বিএনপির সমালোচনা করে যাচ্ছেন তারা।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা লাভের পর থেকেই মূলত দলের অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা ঢাকামুখী হওয়া শুরু করেন। তারা বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যসহ আর্থিক লাভজনক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তখন থেকেই শুরু হয় তাদের সাংগঠনিক কাজে অনীহা।
অতঃপর ২০১১ সালের ১৮ মার্চ থেকে আওয়ামী লীগের প্রথম দফা কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সফর শুরু হলেও তা সফলতার মুখ দেখেনি। এর পরও একাধিকবার জেলা সফরের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু সেগুলোও ফলপ্রসূ হয়নি। ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠনের পর থেকে আর যেন এলাকামুখোই হচ্ছেন না অধিকাংশ মন্ত্রী-এমপি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, যেন তারা এখন এলাকার কথা ভুলেই গেছেন।
ফলে সঙ্গত কারণেই জনগণ তথা তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে ক্রমান্বয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন তারা।
অতি সম্প্রতি উপজেলা নির্বাচন উপলক্ষে দেশের সাতটি বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল দলকে গতিশীল করার। তারা জেলা সফরে অংশ নেন। তাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সফরে যুক্ত হন দলের প্রেসিডিয়াম ও উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন সদস্য। কিন্তু সফর শুরু হতে না হতেই তা বন্ধ হয়ে যায়।
অথচ ঢাকায় বসে দল শক্তিশালী করা, চাঙ্গা করা, ঢেলে সাজানোর লম্বা-চওড়া বিবৃতিতে মুখে ফেনা তুলছেন কেন্দ্রীয় অনেক নেতা। তৃণমূল নেতারা এখন তাদের এই আওয়াজ-সর্বস্ব সাংগঠনিক তৎপরতাকে গলাবাজি আর চাপাবাজি হিসেবেই ধরে নিতে শুরু করেছেন।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের সিনিয়র নেতাদের একাধিকবার সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে তৎপর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বসে নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করার কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশে হাতেগোনা কয়েকজন নেতা ছাড়া দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র নেতাদের মধ্যে অনেকেই দলীয় কার্যালয়ে বসেন না।
মাঠের নেতারা দলীয় কার্যালয়ে এসে তাদের খুঁজে পান না কখনো। ফলে সারা দেশে সাংগঠনিক স্থবিরতা দিন দিন ব্যাপক আকার ধারণ করছে।
তবে উপজেলা নির্বাচনে দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের বিপর্যয়; বিশেষ করে সিলেট, সুনামগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুরসহ প্রভাবশালী নেতাদের এলাকায় দল-সমর্থিত প্রার্থীদের পরাজয়ের ঘটনায় টনক নড়ে। এ ঘটনার পরে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে বসে উপজেলা নির্বাচন মনিটর করছেন। এ কার্যালয়ে বসে তিনি দল-সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিচ্ছেন।
ফলে শেষ পর্যায়ে এসে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'সবাই নিজের স্বার্থে ঘোরে। যারা মন্ত্রী হয়েছেন তাদের পিছে নেতা-কর্মীরা দৌড়ায়। আর যাদের ক্ষমতা নেই তাদের কাছে মানুষ যায় না। এ ছাড়া সব নেতাকে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে তৎপর থাকতে হবে, দলীয় কার্যালয়ে যেতে হবে এমন কোনো কথা নেই।
'
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।