আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা

ভয়ভীতি ও নানা শঙ্কার মধ্য দিয়ে আজ চতুর্থ ধাপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৪৩ জেলার ৯১ উপজেলায় ভোট গ্রহণ। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে টানা ভোট গ্রহণ। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ এ নির্বাচন নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে সংশ্লিষ্টদের কাছে চিঠি (ই-মেইল) পাঠিয়েছেন। সিইসির চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা (ম্যাজিস্ট্রেসি) দিয়েছে। পাশাপাশি ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজনে গুলিরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া ছয়জন পুলিশ সুপার (এসপি) ও উপ-পুলিশ কমিশনারকে বদলি করা হয়েছে। বিগত তিন ধাপে নির্বাচনে সংঘাত-সহিংসতার ঘটনায় এবারে কঠোর নির্দেশ দিল কমিশন।
এদিকে এ ৯১ উপজেলায় রয়েছে সেনাবাহিনী। ইসি বলছে, যে কোনো সহিংসতা রোধে সেনাবাহিনীকে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণে বিশেষভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে থাকবে।

গতকাল ভোট কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে নির্বাচনী সামগ্রী। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সাধারণ ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট হবে। এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১ হাজার ১৮৬ জন প্রার্থী। নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মাঝে রয়েছে ব্যাপক উৎসাহ। ভোট গ্রহণ উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন চেয়ারম্যান পদে ৪৪৭, সাধারণ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫১৯ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩১১ জন। ৯১ উপজেলায় মোট ভোটার ১ কোটি ৩৮ লাখ ৫৯ হাজার ২৭৮ জন। পুরুষ ৬৯ লাখ ৭ হাজার ৯৫৬ ও মহিলা ৬৯ লাখ ৫১ হাজার ৩২২ জন। ভোট কেন্দ্র ৫ হাজার ৮৮৪টি।
আজকের চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে ভোট সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছে নানা আশঙ্কা।

প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের চেয়ে বেশি সহিংসতা হতে পারে বলেও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইসিকে জানিয়েছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী বহাল থাকায় সহিংসতার আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্টরা। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। ব্যাপকভাবে কালো টাকা ছড়ানোর অভিযোগ এসেছে ইসির কাছে। এদিকে সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে ৯১ উপজেলায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে রয়েছে সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ড।

নির্বাচনের আগে ও পরে মিলিয়ে মোট পাঁচ দিন তারা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবে। প্রতি উপজেলায় ১ প্লাটুন করে সেনা সদস্য টহল দিচ্ছেন। বড় উপজেলায় এ সংখ্যা বেশিও রয়েছে। এ ছাড়া মোবাইল ফোর্স হিসেবে র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর পর্যাপ্তসংখ্যক সদস্য মোতায়েন রয়েছেন। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ৩৬৪ জন নির্বাহী ও ৯১ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে।

সশস্ত্রবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিল ইসি : নির্বাচনী সহিংসতা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সশস্ত্রবাহিনী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট সবার কাছে গতকাল জরুরি চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ২৩ ও ৩১ মার্চ অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিশ্চিতে ইসির এ নির্দেশনা পাঠান উপ-সচিব মিহির সারওয়ার মোর্শেদ। পিএসওর কাছে লেখা চিঠিতে বলা হয়- স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত, যে কোনো সহিংসতা রোধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সশস্ত্রবাহিনীর উপস্থিতি/কার্যক্রম নির্বাচনী এলাকায় দৃশ্যমান করার জন্য ইসি বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছে। ‘কোনো ধরনের দাঙ্গা-হাঙ্গামা বা আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী ঘটনা নজরে আসামাত্র সংশ্লিষ্ট সামরিক কর্মকর্তা সিআরপিসির ১৩১ ধারা অনুসারে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে। ’ আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিকে দৃশ্যমান ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবার কাছে আলাদা চিঠি পাঠায় ইসি সচিবালয়।

গতকাল বিকাল ৫টায় ইসির মিডিয়া সেন্টারে ব্রিফিংকালে সিইসির রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিশনার আবদুল মোবারক জানান, সশস্ত্রবাহিনীর এ ক্ষমতা বিচারিক নয়। আগে থেকে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে তাদের যে ক্ষমতা রয়েছে তা শুধু স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামীতে ভোটে সহিংসতা কমবে বলেও আশা করেন তিনি। সার্বিক বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, সেনা প্রধানসহ সবার সঙ্গে ফোনে আলাপ করেছেন আবদুল মোবারক।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনাবাহিনীসহ সবার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এই নির্বাচন কমিশনার।

তিনি বলেন, ভোটের বাক্স ছিনতাই হলে গুলি ব্যবহার করা হবে। সেনাবাহিনীর করণীয় বিষয়ে তিনি জানান, সিআরপিসির ১৩১ ধারা মোতাবেক সেনাবাহিনীকে এ নির্বাচনে দৃষ্টির মধ্যে কোনো সহিংসতা ঘটলে সরাসরি হস্তক্ষেপ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ আইনটি ১৮৯৮ সাল থেকেই ছিল। আমরা এবার তা সেনাবাহিনীকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি দৃশ্যমান হতে গণমাধ্যম বার বার বলে আসছে, তাই এবার আমরা তাদের দৃশ্যমান হতে বলেছি।

সহিংসতা-ছিনতাই রোধে প্রশাসনকেও কঠোর হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ‘উদ্বিগ্ন’ সিইসির চিঠি : সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে মাঠ পর্যায়ের সব কর্মকর্তাকে নিজেদের সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। নির্বাচন নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে সুষ্ঠু নির্বাচনে সব ব্যবস্থা নিতে জরুরি এক ই-মেইলে মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন তিনি। গতকাল এ বিষয়ে কমিশনে আলোচনার পর মাঠ পর্যায়ে সিইসির ই-মেইলসংবলিত নির্দেশনা পাঠানো হয়। ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার সহকারী সচিব আশফাকুর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠি রিটার্নিং কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর পাঠানো হয়েছে।

‘উপজেলা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সিইসির নির্দেশনামূলক ই-মেইল ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পাঠানো হলো’ উল্লেখ করা হয় চিঠিতে। তৃতীয় থেকে পঞ্চম ধাপ পর্যন্ত ভোটের সময় যুক্তরাষ্ট্র সফরে থাকছেন সিইসি। এ সময় তার বিদেশ অবস্থান নিয়ে সর্বত্র ব্যাপক সমালোচনাও হচ্ছে। এ মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রে যান তিনি। আগামী মাসের শুরুতে ফেরার কথা রয়েছে সিইসির।

জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক প্রধান নির্বাচন কমিশনারের রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন। সিইসি মাঠ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে চিঠিতে বলেন, ইতোমধ্যে ছোটখাটো ঘটনা ছাড়াই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। বাকি নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু করতে কর্মকর্তাদের সম্পূর্ণ সামর্থ্য দিয়ে কাজ করতে হবে। আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে তড়িৎ ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
ভোটের আগে ছয় জেলার এসপি বদল : উপজেলা নির্বাচনের চতুর্থ পর্যায়ের ভোটের আগে ঢাকাসহ ছয় জেলায় পুলিশ সুপার সমপর্যায়ের ছয় কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে।

নোয়াখালীর পুলিশ সুপার আনিসুর রহমানকে যশোরে পাঠানো হয়েছে। যশোরের পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্রকে উপ-পুলিশ কমিশনার করে ঢাকা মহানগরে আনা হয়েছে। খুলনার পুলিশ সুপার গোলাম রউফ খানকে উপ-পুলিশ কমিশনার করে বরিশালে পাঠানো হয়েছে। খুলনায় তার স্থানে এসেছেন লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান। ঢাকার উপ-পুলিশ কমিশনার ইলিয়াছ শরীফকে নোয়াখালীর পুলিশ সুপারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বরিশালের উপ-পুলিশ কমিশনার টি এম মুজাহিদুল ইসলামকে পুলিশ সুপার করে লালমনিরহাটে বদলি করা হয়েছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.