আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধর্মঘটে চিকিত্সা না পেয়ে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ

রাজশাহীতে চিকিত্সকদের ধর্মঘটে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিত্সাসেবা বন্ধ রয়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শুধু বহির্বিভাগে সেবা বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হলেও কার্যত পুরো হাসপাতালেই ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে। হাসপাতালে চিকিত্সা না পেয়ে একজন রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আজ শুক্রবার দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আশরাফুল ইসলাম নামে এক রোগী মারা গেছেন। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, হাসপাতালের কোনো চিকিত্সক তাঁকে চিকিত্সা দেননি।



ধর্মঘট চলায় গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন রোগীর স্বজনেরা। বাইরে থেকে চিকিত্সা নিতে এসেও ফিরে গেছে অনেক রোগী।

নগরের ডলফিন ক্লিনিকে রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ক্লিনিক মালিকের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল চারটা থেকে ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এই ধর্মঘটের ডাক দেয়। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনসহ (বিএমএ) চিকিত্সাসংশ্লিষ্ট সব সংগঠন ধর্মঘটের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে। ওই ক্লিনিকের মালিকের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

চিকিত্সা না পেয়ে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ
ধর্মঘট চলাকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আট নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, আশরাফুল ইসলাম (৩৫) নামের একজন রোগী মারা গেছেন। তাঁর বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে। তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত নয়টার দিকে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। আজ দুপুর ১২টার দিকে তিনি মারা যান। তাঁর ছোট ভাই আরিফুল ইসলামের অভিযোগ, ধর্মঘটের কারণে চিকিত্সক না থাকায় তাঁরা চিকিত্সা পাননি।

নার্সরা যা জানেন তা-ই করেছেন। মূলত চিকিত্সার অভাবেই তাঁর ভাই মারা গেছেন।
তবে ওই ওয়ার্ডের শিক্ষানবিশ চিকিত্সক তাহামিনা সুলতানা দাবি করেছেন, জ্যেষ্ঠ চিকিত্সক না থাকলেও চিকিত্সাসেবা ব্যাহত হচ্ছে না। প্রয়োজনে তাঁরা জ্যেষ্ঠ চিকিত্সকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের পরামর্শে রোগীদের চিকিত্সা দিচ্ছেন।

ধর্মঘটে রোগীদের দুর্ভোগ
হাসপাতালের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের মেঝেতে পড়ে রয়েছে ক্যানসারে আক্রান্ত সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার উদুনিয়া গ্রামের আট বছর বয়েসের শিশু বাবু।

তার বাবা হারুন অর রশিদ বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নগরের নর্থ বেঙ্গল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তাঁর ছেলের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দিয়েছেন। কিন্তু ধর্মঘটের কবলে পড়ে সেটি বন্ধ থাকায় পরীক্ষার রিপোর্ট পাননি। তিনি বলেন, আজ সকাল থেকে তিনবার ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গেছেন। রিপোর্ট না পেলে চিকিত্সকেরা তার ছেলের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন না।
এর আগে বেলা ১১টার দিনে নগরের লক্ষ্মীপুর এলাকায় পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে কথা হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থেকে আসা আবু বকর সিদ্দিকের সঙ্গে।

তিনি রক্তের জরুরি পরীক্ষা করানোর জন্য সকালে সস্ত্রীক রাজশাহীতে আসেন, কিন্তু কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টার খোলা না থাকায় ফিরে যান। সেখানেই দেখা হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুরার সরেন বর্মণের সঙ্গে। তিনিও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে এসেছিলেন। প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে নাটোর থেকে বয়স্ক বাবাকে নিয়ে এসেছিলেন রাকিব চৌধুরী। কিন্তু কোনো ক্লিনিকে ভর্তি করাতে না পেরে একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাঁরা ঢাকায় রওনা হন।

বিএমএর বক্তব্য
বিএমএর রাজশাহী শাখার সভাপতি এস আর তরফদার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাঁরা বলেছেন, কারাগারে আটক চিকিত্সক জামিন পেলেই তাঁরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেবেন। তারপর বিচারে তাঁর যে রায় হয় তাঁরা মেনে নেবেন। রোগীদের দুর্ভোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, রোগীদের দুর্ভোগ বাড়ুক এটা তাঁরাও চান না। রাজশাহীতে ছুটির দিনেও ট্রাকচালকদের জামিন দেওয়ার নজির আছে।


বিএমএর রাজশাহী শাখার সভাপতি আরও বলেন, আজ রাতের মধ্যে জামিন দেওয়া না হলে আগামীকাল শনিবার থেকে এ আন্দোলন বৃহত্তর রাজশাহী বিভাগে ছড়িয়ে পড়বে—এমন খবর তাঁরা পেয়েছেন। রবি ও সোমবারের দিকে বিএমএর কেন্দ্রীয় কমিটি আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করবে।

যে কারণে ধর্মঘট
চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি নগরের ডলফিন ক্লিনিকে ভাঙা পায়ের চিকিত্সা নিতে এসে আনোয়ারুল হক নামের একজন ব্যবসায়ী মারা যান। ওই দিন রাতেই মারা যাওয়া ব্যবসায়ীর স্ত্রী শারমিন আক্তার ক্লিনিকের মালিক ও চিকিত্সক শামিল উদ্দিন আহমেদ ওরফে শিমুলের বিরুদ্ধে নগরের বোয়ালিয়া থানায় মামলা করেন। এই ক্লিনিকের মালিক বিএমএর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও স্বাধীনতা চিকিত্সক পরিষদের (স্বাচিপ) সাংগঠনিক সম্পাদক এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের চিকিত্সক।

মামলাটি তদন্ত করে ১ মার্চ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। গতকাল আদালত তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ না করে পুনঃ তদন্তের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ক্লিনিকের মালিকের জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর প্রতিবাদে গতকাল বিকেল চারটা থেকে ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এই ধর্মঘটের ডাক দেয়। বিএমএ রাতে সংবাদ সম্মেলন করে এর সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.