আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিল্পাঞ্চল গড়তে পর্যাপ্ত জমি দাবি

পরিকল্পিত শিল্পায়নের জন্য পর্যাপ্ত জমির প্রয়োজন। সেটা না পেয়ে স্থানীয় উদ্যোক্তারা অপরিকল্পিতভাবে শিল্প গড়ে তুলছেন। ফলে কৃষি জমিও কমে যাচ্ছে। আবার জমি না পেয়ে বিদেশিরাও বিনিয়োগে এগিয়ে আসছে না।
এ অবস্থায় সরকার সারা দেশে বিনিয়োগ করার মতো জমি শনাক্ত করে সেগুলোকে শিল্পাঞ্চল করে তুলতে পারে।

বিসিকের অব্যবহূত পড়ে থাকা প্লটগুলোও কাজে লাগানো যেতে পারে। পাশাপাশি ব্যবহার করা যেতে পারে লোকসানী রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানাগুলোর জমি।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) আয়োজিত এক যৌথসভায় গতকাল দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা এসব কথা বলছেন। রাজধানীর মতিঝিলে এমসিসিআই মিলনায়তনে গতকাল অনুষ্ঠিত এ সভায় অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
সভায় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী বলেন, শিল্পের জন্য শিল্পাঞ্চল খুবই জরুরি।

জমি নিয়ে সমস্যা আছে। ফলে যেখানে-সেখানে শিল্প হচ্ছে। শিল্পাঞ্চল না হওয়ায় কৃষি জমিও কমে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘চীনের অনেক বিনিয়োগকারীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তাঁরা এখানে তৈরি পোশাক ও পাদুকাশিল্প স্থানান্তর করতে চান।

কিন্তু তাঁরা বিনিয়োগ করার মতো জমি পাচ্ছেন না। সরকারি অনেক মিল আছে যেগুলো চলছে না। সেগুলোকে যদি শিল্পাঞ্চল করে দেন তাহলে অনেক বিনিয়োগ আসবে। ’
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহ্মদ বলেন, ‘স্যামসাং ভিয়েতনামে তাদের কারখানা স্থাপন করেছে। সেখানকার স্যামসাং দুই হাজার কোটি ডলারের মোবাইল রপ্তানি করছে।

অথচ আমাদের দেশের মোট রপ্তানিই তিন হাজার কোটি ডলার। স্যামসাংয়ের ওই রকম কারখানা আমাদের দেশেও হতে পারত। কিন্তু আমরা জায়গা দিতে পারছি না। ’
কাজী আকরাম আরও বলেন, বিসিকের অনেক প্লট খালি পড়ে আছে, যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না। সেখানে শিল্পাঞ্চল করা যেতে পারে।

এতে বিনিয়োগ বাড়বে। তিনি বলেন, ‘রাজনীতিবিদেরা রাজনীতি করার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চান, আমরা ব্যবসার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চাচ্ছি। ’
ইন্টারন্যাশনাল চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘শিল্প মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করে রাখা উচিত মিনিস্ট্রি অব স্টেট এন্টারপ্রাইজ। কারণ এই মন্ত্রণালয় থেকে আমরা তেমন সুবিধা পাই না। ’ তিনি বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ এবং ঢাকা-সিলেট অর্থনৈতিক করিডর করার কথা ছিল।

একসময় এগুলো নিয়ে কত সভা করেছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত এগুলো আলোর মুখ দেখল না। ’
এমসিসিআই সভাপতি রোকেয়া আফজাল রহমান বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে সংঘটিত সাম্প্রতিক জালিয়াতির ঘটনা বিনিয়োগকারীদের আস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ব্যাংকিং খাত ও শেয়ার বাজারকে চাঙা করতে নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা আরও জোরদার এবং একে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। তিনি বলেন, ব্যয়বহুল কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর নির্ভরশীলতা দ্রুত কমিয়ে এনে বিদ্যুৎ উৎপাদনের টেকসই পদ্ধতিকে উৎসাহিত করা উচিত।


চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘মীরসরাইতে চার হাজার একর জায়গা পড়ে আছে। সেগুলো বিনিয়োগের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। সেখানকার জেলা প্রশাসকের সঙ্গে এ নিয়ে আমার কথা হয়েছে। সরকার চাইলে এ জায়গা অধিগ্রহণ করে তা জাপান কিংবা চীনের বিনিয়োগকারীদের দিতে পারে। ’
বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা যদি বন্ধ না হয় তাহলে বিদেশিরা কখনোই দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে আসবে না।

সে কারণে তাদের কাছে এই বার্তা পৌঁছানো প্রয়োজন যে এ দেশে আর রাজনৈতিক অস্থিরতা হবে না।
এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি লায়লা রহমান কবির, ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বারের সভাপতি রুপালি চৌধুরী, রপ্তানিকারকদের সমিতি ইএবির সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী, হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি আমিন উল্লাহ, জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি হুমায়ুন কবির, প্রক্রিয়াজাত চামড়া রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিএলএলএফইএর সভাপতি আবু তাহের প্রমুখ বক্তব্য দেন।
মন্ত্রীরা যা বললেন: ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, সরকারি কোন কোন প্রতিষ্ঠানের অতিরিক্ত জমি আছে সে বিষয়ে একটা গবেষণা করা হয়েছে। এখন সে সব জমি কীভাবে কাজে লাগানো যায় সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে। ’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে জালিয়াতি হয়েছে, অত্যন্ত খারাপ ধরনের জালিয়াতি হয়েছে।

সবাই দোষী। ব্যাংকাররাও দোষী, পরিচালকেরাও দোষী। জালিয়াতি ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে জালিয়াতির কারণে আমরা পরোক্ষভাবে লাভবান হয়েছি। ’
শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, বিনিয়োগের জন্য জমির ব্যাপারে কোনো সংকট হবে না, জমি দেওয়া হবে।

মীরসরাইয়ের জায়গায় অগ্রাধিকারভিত্তিতে শিল্পাঞ্চল করা হবে। তিনি আরও বলেন, বিসিকের যেসব প্লট খালি রয়েছে সেগুলোর তালিকা তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শিল্পমন্ত্রী আরও বলেন, এ বছরের মধ্যেই সাভারে ট্যানারিগুলো স্থানান্তর করতে হবে। সাভারে না গেলে তাদের প্লট বাতিল করা হবে। আবার হাজারীবাগের কারখানাও বন্ধ করে দেওয়া হবে।

পোশাক খাতের মতো চামড়া খাতে যেন সংকট দেখা না দেয় সে জন্যই এটা করা হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘যেসব দেশ আমাদের শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে না, তাদের সঙ্গে আমরা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে (এফটিএ) যাব। এটা হলে আমরা তাদের চেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি করতে পারব। ’

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.