বিশেষ সংবাদদাতা : ছন্দ হারিয়ে ফেলছে বাংলাদেশ দল। হোমে টি-২০ বিশ্বকাপে হারের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে যেন পারছেই না বাংলাদেশ দল! কারো খেলায় কমিটমেন্টের প্রতিফলন নেই। পরিস্থিতিটা যখন এতোটা দুঃসহ, তখন মিডিয়ার প্রশ্ন, সমর্থকদের সমালোচনা জর্জরিত করবে বাংলাদেশ দলকে, সেটাই স্বাভাবিক। এমন পরিস্থিতি সামাল দেয়ার ধৈর্যও তো থাকতে হবে বাংলাদেশ অধিনায়ককে। অথচ, গতকাল সংবাদ সম্মেলনে অফ ফর্মে থাকা তামিমকে কি বিশ্রাম দেয়া যায় না, এমন প্রশ্নের জবাব দিতে যেয়ে তামিম সাকিবের সঙ্গে নিজেকেও টেনে এনেছেন! আর একজন তামীম, সাকিব, মুশফিককে পেতে নাকি অপেক্ষা করতে হবে আরো ১০ বছর, অধিনায়কের মুখ থেকেই এই আত্মদম্ভ প্রকাশ পেয়েছে- ‘বাদ দেওয়া কিন্তু কোনো সমাধান নয়।
একটা সাকিব-একটা মুশিফক-একটা তামিমকে পেতে হলে ৮/১০ বছর অপেক্ষা করতে হবে। যা আমি বিশ্বাস করি। আমাদের টিম ম্যানেজম্যান্ট যদি চিন্তা করে তাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে নিলে দলের জন্য হেল্প হবে তবে সেটাই করা উচিত। কিন্তু এ মুহূর্তে আমরা যারা আছি তারাই যদি আর একটু দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারি। ’ ফর্ম হারালে দলে জায়গা নেই, এই তিনজনের জন্য যে প্রযোজ্য নয় তা, মুশফিকুরের কথায় সেটাই যে স্পষ্ট।
এ কারণেই বুঝি বুকের পাটা এতোটা শক্ত এই ত্রয়ীর!
টি-২০তে বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন জয় পেলেও আইসিসি’র সহযোগী দল নেদারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, হংকংয়ের কাছে হারের অতীত আছে বাংলাদেশের। এমন একটি দলের কাছে সুপার টেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত, পাকিস্তানের কাছে হারটাই প্রত্যাশিত। সে বাস্তবতা মেনে নেয়া দোষের কি? কিন্তু এখানেও বাস্তবতার চেয়ে অজুহাত বেশি মুশফিকুরের- ‘টি-২০তে খুব যে খারাপ দল আমরা, তা বলবো না। কমপক্ষে বিপক্ষ দলের সঙ্গে লড়াই করার মতো একটি দল আমরা। আমাদের যে ৪/৫ খেলোয়াড় ছিল তারা যদি তাদের সেরা ফর্মে থাকতো খেলাগুলো একটু অন্যরকম হতো।
হয়তো আমরা অনেক ক্লোজে গিয়ে হারতাম। হয়তো দেখা যেত একটা বড় দলকে আমরা হারিয়ে দিতে পারতাম। কাগজে-কলমে অবশ্যই বলবো আমরা টোয়েন্টি-২০ ক্রিকেটে ভালো দল না। আমরা যাদের বিপক্ষে খেলছি তারা আমাদের থেকে অনেক শক্তিশালী। হংকং বাদ দিলে প্রথম রাউন্ডে আমরা ভালোই খেলেছিলাম।
সুপার টেনে এসে হতাশাজনক হচ্ছে সবকিছু। এতোটা খারাপ হবে সেটা আমরা দল থেকে আশা করিনি। ’
প্রতিটি ম্যাচকে সামনে রেখে এক একটি পরিকল্পনা। প্রতি ম্যাচেই পরিবর্তন। কিন্তু কোনো কিছুই আসছে না কাজে।
একটা টিম কম্বিনেশনই তো দাঁড় করাতে পারেনি টিম ম্যানেজমেন্ট? তার ব্যাখ্যা শুনুন মুশফিকুরের মুখ থেকে- ‘পরিবর্তন বেশি করলেই দল ভালো করে, বিষয়টা তা নয়। আমরা চেষ্টা করছি একটা কম্বিনেশন দাঁড় করানোর। টোয়েন্টি-২০ ফরম্যাট এরকই। অনেকসময় দেখা যাবে চরিত্রের বিপরীতে খেলতে হয়। সবকিছুই চেষ্টা করছি।
এরপর আর কিছুই নেই। খারাপের একটি জায়গা থাকে। একটি ওভারে ১৬ রান হলেও সেখানে কামব্যাক করা যায়। কিন্তু পরপর ২ ওভারে যখন ৪৫/৫০ রান হয়ে যায় সেখান থেকে ক্যামব্যাক করাটা কঠিন হয়। আমাদের স্পিনিং উইকেটে টপওয়ার্ডার থেকে একজনকে ১০/১২ ওভার খেলতেই হবে।
এটাও আমাদের হচ্ছে
ফলাফলের চেয়েও অধিনায়কের কাছে বড় উন্নতির প্রসেস। নিয়মিত হারের কারণে নাকি চ্যালেঞ্জই নেয়া যাচ্ছে না, সেটাই মনে করছেন মুশফিকুর- ‘নিয়মিত হারতে থাকলে ম্যাচ উপভোগ একটু একটু করে কমতে থাকে। প্রসেসটা মাথায় থাকলেও করলেও কাজে ফলাতে পারছি না। এ টুর্নামেন্টের চ্যালেঞ্জটা যদি এনজয় করতে পারতাম, তাহলে হয়তো অন্যরকম হতো। ’
পাওয়ার হিটিংয়ের কথা আসছে।
প্রশ্ন উঠছে শেহজাদ কি তামিম-সাকিব থেকেও পাওয়ার হিটিংয়ে ভালো? ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটই বলুন, কিংবা বিপিএল, কোথাও কিন্তু তার প্রমাণ মেলেনি। অথচ, গতকাল পাওয়ার হিটিংয়ে শেহজাদই শিক্ষা দিয়েছে সাকিব, তামীমকে। এখানেও যে মুখস্ত ব্যাটিং অর্ডার বিপদে ফেলছে বাংলাদেশ দলকে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই মুশফিকুরের- ‘ প্রথম ৬টি ওভারে আমরা ভালো খেলতে পারছি না। শেষ ৩টি ম্যাচ আমরা খুব বাজে ক্রিকেট খেলেছি। ওই ৬ ওভার খুব গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের দলে আফ্রিদির মতো হিটার নেই। এ জন্যে আমাদের প্রথম ৬ ওভার খুব গুরুত্বপূর্ণ।
স্যামি কিংবা আফ্রিদি যখন আসে তখন ৩/৪ ওভার বাকি থাকে। ৫ ওভার থাকে সর্বোচ্চ। ওইসময় খেলাটা খুব কঠিন।
আমাদের উপর থেকে সেট ব্যাটসম্যানরা স্লগ ওভারে গিয়ে খেলতে পারছে না। কঠিনই হয়ে যায় নতুন ব্যাটসম্যানকে গিয়ে খেলা। ৭/৮ ব্যটসম্যান ফর্মে ছিল না। রিয়াদ ভাই ২টি ম্যাচ ভালো খেলেছে। নাসির আজ ভালোই খেলছিল।
আমরা চেঞ্জ যে করছি না, তা নয়। আজকেও সাকিব ৩ খেলেছে। পরের ম্যাচে যদি সুযোগ হয় আমি নাম্বার ৩ খেলতে পারি। ’
দলের অব্যাহত ব্যর্থতায় নানা সমালোচনা, তার বিরূপ প্রভাব পড়েছে ম্যাচে, মানসিকভাবে ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে বাংলাদেশকে। সেটাই মনে করছেন মুশফিকুর- ‘বড় বড় দলের সঙ্গে লড়াই করতে পারি, এ আশাই ছিল।
আমাদের আশাটা ওই্ জায়গাতে ছিল। ওই ৩টি হার আমাদের জন্য বিশাল একটা ধাক্কা। শেষ ক’বছর যদি আমাদের পারফর্মম্যান্স উঠা-নামা করতো, তবে অনেকেই বলতো এমন হতেই পারে। এসবই আমাদের মানসিকভাবে ব্যাকফুটে টেলে দিয়েছিল। এটা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে।
এর কারণে আমরা একটু চাপেও পড়ে গিয়েছিলাম।
Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।