আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তুমি পুরুষ, তুমি “হৈমন্তী” গল্পের নায়ক ‘অপু’ না

আমি যে নতুন, তাই কিছু ভুল হয়ে যায় “বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর। ” --------- কাজী নজরুল ইসলাম একটি সুশীল,আদর্শ ও উন্নত সমাজ গঠনে পুরুষের সঙ্গে সঙ্গে নারীরও যে বিরাট ভূমিকা রয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই সমাজে নারী নির্যাতন প্রতিরোধের মাধ্যমে সর্বক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। নারীদের প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে,নারী নির্যাতন প্রতিরোধে পুরুষ সমাজ মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। নারীরা সমাজ ও পরিবারে বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হয়ে থাকে।

যৌতুক,নারী পাচার,এসিড নিক্ষেপ,যৌননির্যাতন, মানসিক-শারীরিক নির্যাতন, অভাব-অবহেলা, বাল্যবিবাহ, বঞ্চনা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। একদিকে যেমন উল্লেখিত প্রত্যেকটি নির্যাতনের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পুরুষের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে,অন্যদিকে তেমনি পুরুষই পারে এ সকল নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করতে। তাই শরৎচন্দ্রের ভাষায়- “নারীর সম্মান-অসম্মানের মূল্য নির্ভর করে পুরুষের ধারনার উপর। ” নারী নির্যাতনের মধ্যে ‘যৌতুক’ উল্লেখযোগ্য একটি প্রধান সমস্যা। যৌতুক হচ্ছে পুরুষ কর্তৃক নারীর প্রতি একটি আর্থিক নির্যাতনের নামান্তর মাত্র।

যৌতুক নিয়ে বিয়ে করা বা যেীতুকের দাবী করা মানে নিজেকে নিয়ে ব্যবসা করা,নিজেকে বিক্রী করে দেওয়া। তাই নিজেকে নিয়ে ব্যবসা করার এ হীন মানসিকতা দূর করতে পারলেই যৌতুক নিয়ে যে নির্যাতনের সৃষ্টি হয় তা বহুলাংশে হ্রাস করা সম্ভব। যৌতুককে নারী নির্যাতনের মূল ভিত্তি বলা যেতে পারে। কেননা যৌতুক নিয়ে প্রাথমিকভাবে মানসিক নির্যাতন থেকে শুরু করে ক্রমান্বয়ে তা শারিরীক নির্যাতন,এসিড নিক্ষেপ এমনকি তা একজন নারীকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিতে পারে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, যেখানে যৌতুক নারীর জন্য একটি অভিশাপ,সেখানে পুরুষের একটি শব্দ ‘না’ অর্থাৎ যৌতুককে না বললেই নারীসমাজ যৌতুকের এ ভয়াবহ নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পেতে পারে।

নারী নির্যাতনের আরেকটি ঘৃণিত রুপ হচ্ছে যৌন নির্যাতন। আমাদের যুবসমাজ এ ধরনের নির্যাতনে লিপ্ত হওয়ার আগে কখনই কি মনে করে না যে তাদের নিজেরও মা/বোন আছে? যদি তারা এতটুকু সাধারণ বিশ্বাস অন্তরে লালন করত তাহলে পুরুষ শাষিত এ সমাজের নারীরা অন্তত যৌন নির্যাতনের হাত থেকে পরিত্রাণ পেত। আমাদের পুরুষ সমাজের মানসিকতাকে উন্নত করা ও এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ ও ঘৃণাবোধই পারে এ নির্যাতনের দৌরাত্ম হ্রাস করতে। নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করতে হলে নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। একটি সুষ্ঠু নারী নতিীমালা প্রণয়ন করতে হবে।

দু;খজনক হলেও সত্য যে এ যাবৎ প্রণীত চারটি নারী নীতিমালার একটিও নারীর পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করতে পারেনি। নারী নীতিমালা প্রণয়নের দায়িত্ব থাকে একজন পুরুষ সচিবের ওপর; তিনি যদি নারীর কথা না ভেবে ও ঐ নিতীমালা প্রণয়নে নারীর সম্পৃক্ততা না রেখে এ কাজটি সম্পন্ন করেন,তাহলে নারীর আধিকার যেমন নিশ্চিত হবে না তেমনি নারী নির্যাতনও প্রতিরোধ করা যাবে না। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে প্রথমে নারীর সম্পত্তিতে অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার দিতে হবে। তবে অনেকেই ধর্মীয় গ্রন্থগুলোর ভুল ব্যাখার মাধ্যমে সম্পত্তিতে নারীর প্রাপ্য অংশকে অস্বীকার করে।

জ্ঞাণপাপীদের এ ব্যাখা পরিহার করতে হবে। কেননা যখন একজন নারী আর্থিকভাবে সাবলম্বী হবে তখন বিয়ের পরে যেমন স্বামীর প্রতি নির্ভরশলি হয়ে মুখবুঝে অত্যাচার সহ্য করতে হবে না, তেমনি বৃদ্ধ বয়সেও সন্তানের করুণার জন্য মানসিক বা অন্য কোন ্্উপায়ে নির্যাতিত হতে হবে না। । তাই একজন বাবা/স্বামীই পারেন তার মেয়ে/স্ত্রীর সম্পত্তিতে পূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠা করে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে। এবার বাল্যবিবাহ প্রসঙ্গে আসা যাক, আমাদের সমাজে এখনও বিয়ে হয় পুরুষের ইচ্ছায়,এখানে নারীর সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দেওয়া হয় না।

তাই পুরুষরা যদি অল্প বয়সের মেয়েদের বিয়ে করা থেকে বিরত থাকে,তাহলে বাল্যবিবাহের মত এ নির্যাতন আর অভিশাপ থেকে আমাদের নারী সমাজকে রক্ষা করা সম্ভব। উল্লেখিত প্রত্যেকটি নির্যাতনের সাথে পুরুষের সংশ্লিষ্ঠতা যেমন লক্ষ্য করা যাচ্ছে তেমনি এগুলো প্রতিরোধেও যে পুরুষের হাত রয়েছে তা স্পষ্ট হয়েছে। বাবার বাড়ী থেকেই একটি মেয়ের বঞ্চনার পর্ব শুরু হয়। লেখা-পড়া,খাওয়া-ধাওয়া,পোশাক-পরিচ্ছেদ এমনকি ব্যক্তি স্বাধীনতাটুকুও কেড়ে নেয়া হয়। বিয়ের পর শুরু হয় বঞ্চনার দ্বিতীয় পর্ব।

এ পর্বে দেখা যায় মেয়েটি স্বামীর বাড়ীতে দাসীর মত কাজ করছে,মুখ বুঝে সহ্য করছে শ্বশুরবাড়ীর অত্যাচার। এ পরিস্থিতিতে একজন পুরুষ অর্থাৎ স্বামীই পারে এ করুণ অবস্থা থেকে একটি নারী অর্থাৎ তার স্ত্রীকে উদ্ধার করতে। তবে তখন যদি স্বামী এ বিষয়ে নিরব ভূমিকা পালন করে,তাহলে তো সে অবলার জীবন গদ্য রুপ লাভ করবে। একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি আরও স্পষ্ট করা যায়। রবীন্দ্রনাথের অমর সৃষ্টি ‘হৈমন্তী’ গল্পে দেখা যায় যে,গল্পের নায়ক অপুর নিশ্চুপতার কারণে গল্পের নায়িকা হৈমন্তীর অকাল মৃত্যু হয়।

হৈমন্তীর মৃত্যুর জন্য যে কয়টি কারণ মুখ্য ছিল তার মধ্যে অপুর নিশ্চলতা ছিল একটি। তাই এ বিষয়ে কোন সন্দেহ থাকে না যে,স্বামী নামের ঐ পুরুষটির প্রতিরোধী ভূমিকাই পারে একটি নারীকে নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করতে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.