আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মন্ত্রীরা বেশী কথা বলেন

আমাদের মন্ত্রীরা একটু বেশি বলেন-এটা পুরনো কথা। কিন্তু এখন এই দৌড়ে যোগ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনারগণ। শুধু তাই নয়, রীতিমতো চ্যাম্পিয়ন হতে যাচ্ছেন তারা। বিদায়ী বছরের সেপ্টেম্বরে বিরোধীদলীয় নেতা বেশকিছু ভাষণে নির্বাচন কমিশনকে অথর্ব ও মেরুদণ্ডহীন বলেছেন। কিন্তু প্রতিক্রিয়ায় সম্মানিত কমিশনার জাবেদ আলী সাংবাদিকদের চটুল রসিকতাসহ এর জবাব দিয়েছেন।

বিরোধী নেতার পাল্টা জবাবে ৬৩ বছরের জাবেদ আলী মোবাইলফোন হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে যান। সাংবাদিকরা তখনও বুঝতে পারেননি এর অর্থ কি? অল্পক্ষণ পরেই তিনি সোজা হয়ে দাঁড়ানোর ভঙ্গিতে মেরুদণ্ড প্রদর্শন করে বলেন, আমার বয়স ৬৩ বছর। মেডিকেল রিপোর্টে আমি ওই রকম রোগী নই। কোন ব্যথা অনুভব করছি না। এত বয়স হয়েছে, ডাক্তার কখনো ওকথা বলেনি।

আমার কোমর সোজাই আছে, অসুবিধা নেই। একই সঙ্গে তিনি সিইসি সহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের মেরুদণ্ডও সোজা বলে দাবি করে বলেন, ৫ সদস্যের কমিশনে তিনিই সর্বকনিষ্ঠ। এখানে সবচেয়ে কম বয়স আমার। আমার যদি মেরুদণ্ড সোজা থাকে, অন্যদের আরো বেশি সোজা।
উপজেলা নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার সহিংসতা ও তিনজন নিহতের ঘটনায় স্বস্তি ও শান্তির কথা শোনালেন।

বললেন, আলহামদুলিল্লাহ,। আমরা সন্তুষ্ট। আল্লাহর মেহেরবানী, মাত্র ৩ জন প্রাণ হারিয়েছে। আরও বেশি মারা যেতে পারতো। তা হয়নি।

প্রতি মিনিটে ১৩/১৪টি ভোট দেয়া স্মার্টনেসের পরিচয় বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। চতুর্থ ধাপের সহিংসতা ও হানাহানি, ভোট জালিয়াতির খবরেও তিনি আলহামদুলিল্লাহ বলে সন্তুষ্টি ব্যক্ত করেছেন মিডিয়ায়। অথচ তৃতীয় ধাপে ১৫ই মার্চের নির্বাচনে গায়েবি ভোটে অনেক এলাকাতেই বাক্স ভরে গেছে। তা গণমাধ্যমে প্রকাশিত সচিত্র প্রতিবেদন দেখলেই বোঝা যায়। অন্যদিকে, অল্প সময়ে বেশি ভোটের হিড়িক পড়ার দৃশ্যও দেখা গেছে বিভিন্ন কেন্দ্রে।

চাঁদপুরে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের বাড়ির পাশের কেন্দ্রে দেখা গেছে মিনিটে ৬ ভোট পড়তে। অন্যদিকে বরিশালে ছাত্রলীগের এক নেতা একাই ৪০০ ভোট দিয়েছেন। যদি ভারপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনারের ভাষায় এটা স্মার্টনেসের পরিচয় হয় তাহলে কি বলার আছে? ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকেই অদ্ভুত এক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করছি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের। পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরাজয়ের পর সরকার প্রধান থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহলে বলাবলি ছিল, এই কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব কিনা তা নিয়ে। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে তা বলে দিলো কমিশন নিজেই।

যেখানে ৫ ভাগ ভোটও পড়েনি তা দেখানো হলো সরকারের চাহিদা অনুযায়ী ৪০ ভাগের ওপরে। কিন্তু এত কিছুর পর কমিশনের অর্জন আসলে কি? উপজেলা নির্বাচন প্রথম দফায় বিএনপি সমর্থিত জোট এগিয়ে থাকায় গাত্রদাহের শুরু। দ্বিতীয় দফাতে সহিংসতা আর কারচুপি, তৃতীয় দফায় গায়েবি ভোট আর ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নেয়ার উৎসব। চতুর্থ দফায় আরও ভিন্ন কৌশল। রাতেই বেশির ভাগ উপজেলায় ব্যালট বাক্সে ভোট ভরে রাখলো সরকার দলীয় কর্মীরা।

সকালেই ঘুম থেকে ওঠেই খবর মিললো দক্ষিণাঞ্চলের আগৈলঝাড়া থেকে। রাতের আঁধারেই তারা ভোট শেষ করেছে। প্রভাতের আলোতেই সেখানে ভোট শেষ হয়েছে। এখানে এতো বেশি স্মার্টনেস দেখিয়েছে সরকার সমর্থিতরা। যা সত্যিই বিস্ময়কর।

এখানের এক কেন্দ্রে আধঘণ্টায় পড়েছে ১৮০০ ভোট। এমন কিছু কেন্দ্রও দেখা গেছে, কারা পোলিং এজেন্ট, কারা প্রিজাইডিং অফিসার বোঝা মুশকিল। সবাই একতালে সিল মারছে পছন্দের প্রার্থীকে। কি অদ্ভুত কিসিমের কমিশনের অধীনে নির্বাচন পরখ করছে দেশবাসী। অভিনন্দন জানাতে হয়, মাননীয় সিইসি সহ অন্য চার কমিশনারকে নিয়ে।

ওনারা আজিজ কমিশনের রেকর্ড ইতিমধ্যেই ভেঙে তছনছ করে দিয়েছেন। মেরুদণ্ড শক্তিশালী যে কমিশনের তাদের এখনও এক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখতে হয়। এরই নাম স্ব-শাসিত, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন। দুঃখ হচ্ছে, বর্তমান সরকারের কৃতিত্ব ম্লান হয়ে যাওয়ায়। ৬ হাজারেরও অধিক স্থানীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে এ দাবির স্বপক্ষে এখন কি যুক্তি আছে।

সাম্প্রতিক উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে তা কি বলা সম্ভব। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে সরকারি দলের টার্গেট যেভাবেই হোক উপজেলা নির্বাচনে রেকর্ড করতে হবে, প্রথম হতে হবে। না হলে মন্ত্রীরা কিভাবে বলেন, সবগুলোতে নির্বাচন শেষ হলেই দেখতে পাবেন আমরাই ভালো করেছি। যখন চতুর্থ ধাপে নির্বাচন হচ্ছে ঠিক তখন ভারতের সাবেক সিইসি শাহাবুদ্দিন ইয়াকুব কুরাইশি বাংলাদেশ সফর করেন। ভারতের সাবেক সিইসি কতোটা ভালো বার্তা নিয়ে গেলেন আমাদের নির্বাচন নিয়ে তা বলাবাহুল্য।

বড় নাটক চলছে সিইসিকে নিয়ে। তিনি হঠাৎ লম্বা ছুটিতে দেশ ছেড়েছেন ৩রা মার্চ। বলা হচ্ছে তিনি ক্লান্ত। বিশ্রাম প্রয়োজন। বাড়িতে বিয়ের ধুম লাগিয়ে, অতিথিদের নিমন্ত্রণ করে এনে গৃহকর্তা চলে গেলে কি অরাজকতা হতে পারে তা আন্দাজ করা যেতে পারে।

একটি সর্বজনগ্রাহ্য নির্বাচন আয়োজনে ব্যর্থতার দায় কমিশনের কোন সদস্যই এড়াতে পারেন না। কাজেই সিইসি’র পদত্যাগের আওয়াজে বা স্থানীয় নির্বাচনের সময় বাইরে থেকে নির্বাচন কমিশন নামক প্রতিষ্ঠানটিকে খেলো করার কলঙ্কও তিনি অস্বীকার করতে পারবেন। তবু ভালো, ডিজিটাল দেশে তিনি ই-মেইল নির্দেশনায় গাইডলাইন পাঠাচ্ছেন। কেমন হবে, ওনার পথ ধরে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা আরও অনেকেই যদি বাইরে থেকে গাইডলাইন দিয়ে দেশ চালাবার পথ অনুসরণ করেন। শেষ করছি ফেসবুকে বিবিসি’র সিনিয়র সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের দেয়া একটি স্টাটাস দিয়ে।

তিনি লিখেছেন, সবচে’ কঠিন কিংবা সবচে’ সহজ দুটো সাক্ষাৎকার: আমার সাংবাদিক জীবন আমার বয়সের চেয়েও বেশি। সেই ১৯৮৭ সালে, তৎকালীন এসএসসি পরীক্ষার পর থেকে শুরু। হিসেবে ২৭ বছর। এম.এ পাশ করে যদি চাকরি শুরু করতাম তাহলে এতদিনে হয়তো রিটায়ারও করতে পারতাম। এই দীর্ঘ সময়ে দেশে-বিদেশে বহু প্রভাবশালী লোকের সাক্ষাৎকার নিয়েছি।

যারা ‘হও’ বললে সবকিছু হয়ে যায়, মুখোমুখি হয়েছি এমন লোকেরও। সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় কান ও মগজ অত্যন্ত সজাগ রাখতে হয়। কিন্তু এতো সাক্ষাৎকারের মধ্যে দু’বার আমি খেই হারিয়ে ফেলেছি। উত্তর শুনতে শুনতে থতমত আমি আর প্রশ্ন খুঁজে পাইনি। রানা প্লাজা ধসের পর সেদিনই বিকেলে তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মি. আলমগীর যখন বললেন, বিরোধী সমর্থকরা ভবনের স্তম্ভ ধরে নাড়াচাড়া করার কারণে ভবনটি ভেঙে পড়তে পারে তখন খুঁজে পাচ্ছিলাম না এর পরের প্রশ্ন কি হতে পারে।

আর গতকাল আমাকে আবার অবাক করেছেন ভারপ্রাপ্ত সিইসি। উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বললেন, আল্লাহতায়ালা যখন রসুল (সা.)-এর মাধ্যমে ধর্ম প্রচার করছিলেন তখনও অনেক সহিংসতা হয়েছে, রসুলকেও অনেক যুদ্ধ মোকাবেলা করতে হয়েছে... এই জবাবের পর আমার কান ও মগজ দু’টোই অচল হয়ে গিয়েছিল...।




Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.