পরে বলবো ভাই আর বোনের মধ্যে বয়সের পার্থাক্য তিন । উচ্ছলতার মধ্যে ওদের বেড়ে ওঠা । বাবা মায়ের ভালোবাসা নিয়ে প্রায়ই দ্বন্দ হয় বিথী আর ইমনের মধ্যে । এক জন বলে বাবা মা শুধু আমাকে ভালোবাসে, অন্যজন উল্টো । হাসান হাসি দুজনার ভালোবাসার ধন বিথী ইমন ।
ওরা দুজনই পারিবারিক বিনোদনের উৎস । ওদের মিষ্টি শত্রুতা দেখে যে কারও অবিভুত হওয়ার কথা । ১৪ বছরের বিথী অনেকটাই শান্ত স্বভাবের । ইমনের অনেক অন্যায় মুখ বুজে সহ্য করাই তার ধর্ম । অন্যদিকে ইমন অনেক প্রাণচঞ্চল ।
একটু রাগি মেজাজের । সারাক্ষন লেগে থাকে বিথীর পিছে । কথায় কথায় ক্ষেপিয়ে তোলে বিথীকে । একটেবিলে পড়তে বসলে টেবিলের নিচ দিয়ে বিথীকে খোচা আর মায়ের চোখের আড়ালে চিমচট কাটা ইমনের নিত্য কার্য । বিথী নালিশ করে মায়ের কাছে ।
গরম মেজাজ নিয়ে মা কিছু বলতে আসলে বিথীই আবার বলে এবার মাফ করে দাও ।
বড় একগুয়ে স্বভাবের ইমন । বিথীর জন্য কিছু কিনলে ইমনের জন্যও কিনতে হবে । এমনকি ইমনের জন্য জিনিসটি অপ্রয়োজনীয় হলেও । একদিন ঘটে এক মজার কাহিনী ।
বাব মায়ের সাথে বিথী ইমন যায় মেলায় । সেখানে মা বিথীর জন্য একটি চুলের ব্যান্ড কিনলো । ওমনিতেই শুরু হয় হাত পা ছোড়া-ছুড়ি । তাকেও ব্যান্ড কিনে দিতে হবে । বিথীর জন্য চুড়ি কিনলে তার জন্যও তাই ।
ইমনের আকুতির কাছে বাবা মা হার মানে ।
বিথি ক্লাস এইটে আর ইমন ফাইব এ । এত কিছুর মধ্যেও বোনের জন্মদিনে সবার আগে সুভেচ্ছা জানাতে ভুল করেনা ইমন । বাবার কিনে দেওয়া বাইসাইকেল চালানো শিখতে পারেনি তার পরেও বোনকে পিছনে না বসিয়ে সে সাইকেল চালাবে না । আছাড় খেয়ে খেয়ে বিথী ক্লান্ত , আর সে সাইকেলের পিছনে বসতে রাজি না ।
ওদের ভালোবাসার রং ঢং দেখে মায়ের চোখে জল আর মুখে হাসি একসাথে বিরাজমান ।
বাসা থেকে বিথীর স্কুলের দুরত্ব এক কিলোমিটারের বেশি নয় । বিথী স্কুলের ভালো ছাত্রীদের মধ্যে অন্যতম ও খুবই উচুমানের । তার জলন্ত প্রমান ক্লাস ফাইবে ট্যালেন্ট পুলে বৃত্তি প্রাপ্তি । এত গুনের এই ছোট্ট মেয়েটি রুপের দৌড়েও কম যায় না ।
মধ্যবিত্ত তাই চার চাকার ঢাকনা য়োলা গাড়ি কেনার মুরদ নেই । রিক্সাই একমাত্র বাহন আর হেটে যাওয়াই একমাত্র বিকল্প উপায় । যাওয়া আসার পথে পাড়ার বখাটে ছেলেরা বিথীকে দেখে প্রায়ই বিভিন্ন আপত্তিকর উক্তি উচ্চারণ করে । দিনে দিনে এর মাত্রা বাড়ে । রাস্তার ওত পেতে থাকা অমানুষগুলি বিথীকে টিজ করার জন্য চিরকুট ছুড়ে মারা,সিগারেটের দেহাবশেষ ছুড়ে মারা,রাস্তায় ক্রিকেট প্রাকটিস,নগ্ন উক্তি নিক্ষেপ সহ এমন কোন ঘৃনিত কাজ নেই যা ওরা করেনি ।
বিথী তার তিক্ত অভিজ্ঞতা মায়ের কাছে বর্ণনা করার পরে মা বিথীকে স্কুলে দিয়ে আসে ও ছুটির পরে নিয়ে আসায় নিজেকে নিযুক্ত করে । আবার ইমনের আবদার বিথীকে স্কুলেনিয়ে যাওয়া হয় তবে ইমনকে কেন নেয়া হবেনা । মা সে আবদার উপেক্ষা করে বিথীকে নিয়মিত স্কুলে আনা নেয়া করে ।
বিথীর মা জনাবা হাসির মতে বখাটে শয়তানগুলোর চোখ অত্যন্ত ধারালো । ওদের দৃষ্টি অনেক তীক্ষ্ম,পোষাক ভেদ করে ওদের দৃষ্টি ছুয়ে যায় নারী শরীরের উন্নত বক্ষ সহ সকল গোপনীয় অঙ্গ ।
ব্যাপারটা খুবই লজ্জাজনক । ওদের কারনে অনেক অমুসলিম স্কুল ছাত্রীরাও বোরকা পড়ে স্কুলে যায় । বিথীও বোরকা পড়া শুরু করে । কিন্তু সেও বৃথা চেষ্টা । ওরা চিনতে ভুল করেনা ।
একদিন বিকেল বেলা স্কুল থেকে বাসায় যাচ্ছে বিথী । সেদিন মা সাথে নেই । পথ আগলে দাড়ায় রোমেল । বখাটেদের একজন । বলে ভালোবাসি ।
বিথীর কিশোরী মন এমন প্রস্তাব পাবার জন্য প্রস্তুত নয় । রোসমল আবার বলে শোন মেয়ে আমার প্রস্তাবটা ভেবে দেখ । ও হ্যাঁ মনে রেখ বুড়িগঙ্গা অনেক দিন লাশের গন্ধ পায়নি । ভয়ে বিথীর পা জড়ো হয়ে আসে । কন্ঠ এত শুকিয়ে যায় যে কিছু বলতে পারে না ।
হৃদপিন্ডের সাথে সমান তালে পা ফেলে বাসায় চলে আসে ।
স্কুলে যাওয়া বন্ধ । মানষিক ভাবে প্রচন্ড রকম ভেঙ্গে পরে । উবে যায় বিথীর জীবনের সব হাসি আনন্দ । মায়ের কাছে আর ইমনের নামে নালিশ করে না ।
ইম বলে আপু তুই স্কুলে যাস না কেন ? তোর না সামনে পরীক্ষা ! উত্তর দেয় না বিথী । ভয় সারাক্ষণ তাকে গ্রাস করে রাখে । সে ভয় সম্ভ্রম হারানোর ভয় । সে ভয় জীবন হারানোর ভয় । পুলিশে জানিয়ে ও কোন লাভ হয়নি ।
কারন শয়তান গুলোর হাত পুলিশের চেয়ে ও লম্বা ।
দিন গড়াতে গড়াতে ফাইনাল পরীক্ষা আসে । বিথী পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করতে চায় । সবাই সিদ্ধান্ত নেয় বিথী পরীক্ষা দিবে । মা বিখীকে নিয়ে স্কুলে যায় ।
ফেরার সময় পথ অঅগলে দাড়ায় দশ বারোটি যুবক । একজন ক্রিকেটের ব্যাট দিয়ে মাথায় করে বিথীর মাকে । লুটিয়ে পড়ে মাটিতে । বিথীকে টানা হেচড়াকরে মাইক্রোতে তুলে নেয় । দ্রুত অদৃশ্য হয় মাইক্রোবাসটি ।
রাস্তার পাসে কিছু মানুষের ভীড় । ভীড় ঠেলে সামনে গেলে দেখা যায় একটি ব্যানিটি ব্যাগ । তাতে আছে একটি ছোট্ট লুকিং গ্লাস,একটি কড়া লাল লিপস্টিক সহ কিছু কসমেটিক্স সামগ্রী,একটি হেয়ার ব্রাস,একটি আবাসিক হোটেলের ভিজিটিং কার্ড । আর এর পাশেই পরে আছে একটি অর্ধনগ্ন নারীর শরীর । মুখ দেখা যায় না ।
কেউ একজন সাহস করে মুখটি ঘুড়ায় । সেকি! এ ত বিথী । কিন্তু উপস্থিত কেউ চেনেনা । সবাই বলে উপসর্গ দেখে মনে হচ্ছে যৌনকর্র্মী ।
ইমনের পড়ার টেবিলে একটি চেয়ারই শুধু খালি হয়নি বাবা মায়ের হৃদয় ও শুন্য হয়েছে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।