আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্মৃতিকথা: যেভাবে ভেঙ্গেছিলাম এক গ্রাম্য পতিতা/যৌনকর্মী/দেহজীবীদের আড্ডাখানা



আমার বয়স যখন ১৮ বছর তখন স্থানীয় দৈনিক নবাব পত্রিকায় ইউনিয়ন প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতাম। বাবা-মা উভয়ে গালি দিতো। তবুও সাংবাদিকতা নেশা ছাড়তে পারি নি। তারপরে স্থানীয় সাপ্তাহিক সোনামসজিদ নামে একটি পত্রিকায় উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করি ২০ বছর বয়সে। আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করতাম বলে আমার সুনাম তাড়াতাড়ি চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিলো।

একদিন এক বাটপার লোক এসে বলে যে, পিঠালী তলায় এক সওকতারার বাড়িতে দেহব্যবসা হয়। সেটা ভাঙ্গতে হবে। আপনি রিপোর্ট লিখে সংবাদপত্রে প্রকাশ করবে। আমি বললাম টাকা লাগবেনা। আমাকে ওখানে নিয়ে যান।

সে নিয়ে গেলো। রমরমা ব্যবসা দেখে আমি আশ্চর্য হলাম। সাপ্তাহিক সোনামসজিদ পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশিত হলো। কিন্তু থানা পুলিশের টনক নড়লো না। মনটা খারাপ হলো।

মজি নামের আরেক বাটপার বললো। ওই বাড়িতে থানা পুলিশ এবং এসআই নিয়মিত গিয়ে যৌন তৃপ্তি মিটিয়ে আসে। মাঝে মধ্যে চাদা দেয় পুলিশকে। আপনার মতো ছোট-খাট সাংবাদিকের রিপোর্টে কিছুই হবে না। আপনাকে তারা চিনতে পারলে আপনার বাবার নাম ভূলিয়ে দিবে মেরে।

আমি রাগে অগ্নিশর্মা হলাম। চিন্তা করতে লাগলাম। আমার মতো ছোট-খাট সৎ সাংবাদিককে বাটপারেও হেলা করে। ঠিক আছে। দেখি কি করা যায়।

পেপার কাটিংটার সাথে একটি ফরওয়ার্ডিং লেটার লিখে থানা প্রেসক্লাবের সভাপতির স্বাক্ষর নিয়ে তৎকালীন স্ব-রাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজি, জেলা পুলিশ সুপার এবং থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিকট পাঠালাম। দুইদিন পরে শুনি ওই দেহব্যবসায়ীদের আড্ডা ভেঙ্গে দিয়েছে থানা পুলিশ। ২ পুরুষ খদ্দের এবং সর্দারনী সওকতআরা এবং ২ জন সুন্দরী দেহব্যবসায়ী নারীকে দিন-দুপুরে গ্রেফতার করেছে। থানা গিয়ে ঘটনার সত্যতা পেলাম। ১৫দিন পরে শুনি জামিনে ওরা ছাড়া পেয়েছে।

একদিন দৈনিক দিনকালের এক সংবাদদাতা আমাকে ওখানে নিয়ে পরিচয় করিয়ে দিলো। তারা আমাকে বললো। আমরাতো চুরি করি না। কারো ক্ষতি করি না। আপনি কেন আমাদের বিরুদ্ধে পত্রিকায় লিখেন।

আমার বাড়িতে যৌনকমীরা না আসলে এ এলাকায় মহিলারা স্কুল-কলেজে একা যেতে ভয় পেতো। আমি আর কিছু বলিনি। কারণ, ওই বাড়ির দেহব্যবসায়ী সর্দারনীর এক ছেলে বহুমুখী প্রতিবন্ধী রয়েছে। অন্যদিকে লেখলে মানুষ আমাকে মারার টার্গেট করবে এই ভেবে। তারপরে আমিও এলাকা ছাড়লাম।

বছরে মাত্র দু'বার ২ ঈদের সময় বাড়িতে যায়। খোজ খবর রাখতে পারি না। কিন্তু আমি ইচ্ছে করলে ওদের কাছ থেকে সুবিধা নিতে পারতাম। কিন্তু আমি খারাপ কাজকে ঘৃণা করি বলে ওদের আশে পাশে আর যায় নি। গল্পটি আজ এক মানবাধিকার কর্মী এবং এক ধর্মগুরুর কাছে কথায় কথায় বললাম।

মানবাধিকার কর্মী বলেন, কাজটি ঠিক করেন নি। ধর্মগুরু বললো শওয়াবের কাজ করেছেন। আপনারা পাঠক বা ব্লগার কি মনে করেন?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।