আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নতুনত্বে সফল টলিউড : ব্যর্থতায় ঢালিউড

নির্মাণ, প্রযুক্তি, অভিনয়শিল্পী, গল্প, গান, লোকেশনসহ সব ক্ষেত্রে নতুনত্ব এনে সফল হয়েছে কলকাতার চলচ্চিত্রশিল্প। আর এ ক্ষেত্রে এখনো ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে ঢালিউড। অথচ একসময় টালিগঞ্জ আমাদের চলচ্চিত্রের তুলনায় অনেক পিছিয়ে ছিল। সময়ের চাহিদা পূরণ করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে কলকাতার মৃতপ্রায় চলচ্চিত্রশিল্প। ক্ষোভের সঙ্গে এ কথা জানিয়ে নায়করাজ রাজ্জাক বলেন, একইভাবে ঢালিউডেরও পুনর্জাগরণ সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন সদিচ্ছা ও আগ্রহ। সরকারি সহযোগিতার কোনো প্রয়োজন নেই।

চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের মতে, আঠার শতকের শেষভাগে কলকাতায় চলচ্চিত্রের যাত্রা শুরু। তবে টলিউডের চলচ্চিত্র সফলতা পায় ১৯৫০ সালের পর। ওই সময়ে মহানায়ক উত্তম কুমারের চলচ্চিত্রে আগমন। কিন্তু ১৯৮০ সালে উত্তম কুমারের মৃত্যুর কারণে কলকাতার চলচ্চিত্র থমকে যায়। বলতে গেলে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় টালিগঞ্জ। এর অন্য একটি কারণও ছিল। গল্প ও নির্মাণে পরিবর্তন না আসা।

১৯৮৫ সালে এ ক্ষেত্রে নতুনত্ব এনে চলচ্চিত্রকে আবার জাগিয়ে তোলেন নির্মাতা অঞ্জন চৌধুরী ও অভিনেতা রঞ্জিত মলি্লক। ওই বছর মুক্তি পায় এই নির্মাতার নির্মাণে রঞ্জিত মলি্লকের অভিনয়ে পারিবারিক অ্যাকশন-ধাঁচের চলচ্চিত্র 'শত্রু'। সব ক্ষেত্রে নতুনত্বের সুবাদে দর্শক চলচ্চিত্রটি লুফে নেয়। নির্মাতা ও অভিনেতা রঞ্জিত মলি্লকের হাত ধরে শুরু হয় টালিউডের নবযাত্রা। রঞ্জিত মলি্লকের সঙ্গে যুক্ত হন প্রসেনজিৎ, তাপস পাল, শতাব্দী রায়, দেবশ্রীর মতো অভিনয়শিল্পীরা। সময়নির্ভর গল্প, নির্মাণ আর অভিনয়ের ফলে এ যাত্রা অব্যাহত থাকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত। এ সময়ে বিশ্বের চলচ্চিত্র নির্মাণে যুক্ত হয় নতুন প্রযুক্তি। ডলবি ডিজিটাল সাউন্ডনির্ভর চলচ্চিত্র নির্মাণ হতে থাকে হলিউডের মতো বলিউডেও। ফলে ৩৫ মিলিমিটারের ছবি ও মনো পদ্ধতির শব্দ এবং একই ধাঁচের গল্পের কারণে আবারও মুখ থুবড়ে পড়ে টালিগঞ্জ। চলচ্চিত্র নির্মাণ নেই, প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ হওয়ার মধ্য দিয়ে হতাশার অন্ধকারে নিমজ্জিত হয় কলকাতার চলচ্চিত্র শিল্প।

এ অবস্থার উন্নয়নে ১৯৯৮ সালে ঢাকার চলচ্চিত্র নির্মাতা স্বপন সাহা কলকাতায় যান। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে অর্থলগি্নকারক জোগাড় করে ১২-১৩ লাখ টাকায় চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন তিনি। শুরুতেই ঢাকার সফল চলচ্চিত্রগুলোর রিমেক করেন সেখানে। এতে গল্প ও নির্মাণে নতুনত্ব পেয়ে আবার প্রেক্ষাগৃহে দর্শক জোয়ার আসে। নতুন গল্পের পাশাপাশি ঋতুপর্ণার মতো বেশ কয়েকজন নতুন অভিনয়শিল্পীও উপহার দেন তিনি। একপর্যায়ে স্বপন সাহার সঙ্গে যোগ দিলেন রবি কিনাগি, হরনাথ চক্রবর্তীর মতো দক্ষ নির্মাতারা। তারা মাদ্রাজ ও মুম্বাই চলচ্চিত্রের অনুকরণে চলচ্চিত্র নির্মাণ করে সফল হন।

এ সময় ১৬ মিলিমিটারে চিত্র গ্রহণ করে তা ৩৫ মিলিমিটারে ব্লোআপ করা হতো। পরে প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটিয়ে কলকাতায় সিনেমাস্কোপ পদ্ধতির প্রচলন হয়। কিন্তু এতেও স্থায়ী কোনো ফল পাওয়া যায়নি। ২০০০ সালের মধ্যেই আবার ঝিমিয়ে পড়ল টলিউড। শুরু হয় ভিডিও পাইরেসির কালো থাবা। নির্মাণে ডিজিটাল পদ্ধতির অভাব ছিল। এ দুটি বিষয়ের প্রতি মনোনিবেশ করে কলকাতার চলচ্চিত্রকে পুনরুদ্ধারে তখন এগিয়ে আসে অশোক ধানুকার 'ধানুকা ব্রাদার্স' ও শ্রীকান্ত মেহেতার 'শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস'। প্রতিষ্ঠান দুটি নিজ খরচে কলকাতার প্রেক্ষাগৃহগুলোকে ডিজিটাল পদ্ধতির আওতায় নিয়ে আসে। ডিজিটাল করতে গিয়ে প্রতি প্রেক্ষাগৃহে ব্যয় হয় ৫০ লাখ টাকা। এতে প্রেক্ষাগৃহ মালিকদের সঙ্গে দুটি শর্তে তাদের চুক্তি হয়। প্রথমত. মাসে ২০ হাজার টাকা করে দিতে হবে। দ্বিতীয়ত. এ দুই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের বাইরে অন্য কারও চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা যাবে না। যদি প্রদর্শন করতে হয় তবে তাদের এ দুই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই তা করতে হবে। চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রদর্শন ডিজিটাল প্রযুক্তির আওতায় আনার ফলে চলচ্চিত্র নির্মাণে ব্যয় অর্ধেকেরও নিচে নেমে আসে। আগে যেখানে দুই থেকে তিন কোটি টাকা খরচ হতো তা কমে দাঁড়ায় ৭০-৮০ লাখে। প্রতিষ্ঠান দুটি ব্যবসার সময় নির্ধারণ করে দেয় এক মাস। এতে পাইরেসি বন্ধ হয়। অল্প সময়ে বিশাল অঙ্কের মুনাফাসহ পুঁজি ফেরত আসতে শুরু করে। তবে পাইরেসি রোধ করতে গিয়ে সরকারের সহযোগিতায় এই অপকর্মের মূল হোতারা নিশ্চিহ্ন হয়। এ দুই অবস্থান মজবুত করে প্রতিষ্ঠান দুটি মনোযোগ দেয় নতুন গল্প, শিল্পী এবং লোকেশনের দিকে। এদের হাত ধরে অভিনয়ে আসেন জিৎ, দেব, কোয়েল মলি্লক, স্বস্তিকা, শ্রাবন্তী, নুসরাত, পায়েল, শুভ্রশ্রী, সোহানসহ অনেক দক্ষ অভিনয়শিল্পী। নতুন ধারার গল্প ও নির্মাণ, লোকেশনসহ সব দিক দিয়ে এখন শুধু কলকাতা বা ভারত নয়, বিশ্বের দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছে টলিউড চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রকার রাজ্জাক, সুচন্দা, আমজাদ হোসেন, চাষী নজরুল ইসলাম, আজিজুর রহমান, ছটকু আহমেদ, মতিন রহমান, শহীদুল ইসলাম খোকন, সোহানুর রহমান সোহান, স্বপন আহমেদসহ আরও অনেক চলচ্চিত্রকারের মতে_ সদিচ্ছা ও আগ্রহ নিয়ে টলিউডের পথে এগুলে ঢালিউডের পুনর্জাগরণ সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সরকারের মুখাপেক্ষী হওয়ারও প্রয়োজন নেই। চলচ্চিত্রশিল্পের সুদিন আমাদেরই ফিরিয়ে আনতে হবে। এই শিল্পের প্রতি শিল্পসংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা থাকলে ঢালিউডের সোনালি অতীত ফিরিয়ে আনা কঠিন ব্যাপার নয়।

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.