রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ভল্ট থেকে টাকা লুটের ঘটনায় ফেঁসে যাচ্ছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, ব্যাংকটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সার্বিক ব্যবস্থাপনা জোরদারের বিষয়ে প্রদীপ কুমারের ব্যর্থতা রয়েছে। শুধু তাই নয়, এর আগে হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনার পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেও তিনি সঠিক ভূমিকা পালন করতে পারেননি বলে মনে করে অর্থ মন্ত্রণালয়। যদিও হলমার্ক কেলেঙ্কারির সময় তিনি এমডির দায়িত্বে ছিলেন না। গত সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সব রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের এমডিদের সঙ্গে এক বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে প্রদীপ কুমার নিজেও উপস্থিত ছিলেন। ব্যাংকটির সার্বিক ব্যবস্থাপনার মান উন্নয়ন ও সেবার মান বাড়াতেও ব্যবস্থাপনা বিভাগ কার্যকরী উদ্যোগ নিতে পারেনি বলে সোমবারের বৈঠকে অভিযোগ করেছেন ব্যাংকিং সচিব ড. এম আসলাম আলম। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সোনালী ব্যাংকে প্রদীপ কুমারের স্থলে নতুন এমডি নিয়োগ দিতে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকটিতে আর্থিক জালিয়াতির ঘটনা ও খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়াকে প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপনা দুর্বলতা মনে করা হচ্ছে। কিশোরগঞ্জ শাখায় ভল্ট লুটের ঘটনার পর মাত্র দুই মাসের মাথায় এ ধরনের আরেকটি ঘটনাকে ব্যাংকের এমডি, ডিএমডিসহ নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত ঊধর্্বতন কর্মকর্তাদের অসচেতনতা ও দায়িত্বহীনতা রয়েছে বলে মনে করে ব্যাংকিং বিভাগ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কিশোরগঞ্জ শাখায় ভল্ট লুট হওয়ার পর তদন্ত কমিটি যে ১০ দফা নির্দেশনা দিয়েছিল ব্যাংকটির নিরাপত্তা জোরদারের জন্য সেগুলোও বাস্তবায়নে ঢিলেঢালাভাব ছিল ব্যবস্থাপনা কমিটির। যা রীতিমতো উদ্বেগজনক। ব্যাংকটির ৮ শতাধিক শাখাকে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করার পরও ঝুঁকি মোকাবিলায় কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ জন্য বার বার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে বলে মনে করে ব্যাংকিং বিভাগ।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, কিশোরগঞ্জ শাখায় ভয়াবহ লুটের পর ব্যাংকটির পক্ষ থেকে শাখাগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল কিনা এবং এক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা কমিটির কোনো অবহেলা বা দায়িত্বহীনতা রয়েছে কিনা-তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়-দায়িত্বই প্রশ্নের মুখে পড়েছে। ফলে তার বিরুদ্ধে সরকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে বলে জানা গেছে।
ব্যাংকটির ইমেজ পুনরুদ্ধার ও ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংককে কঠোর নজরদারির আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম বলেন, এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এতে আর্থিক খাতের ইমেজ ক্ষুণ্ন হয়। এ ছাড়া গ্রাহকদের মাঝে আস্থার সংকট সৃষ্টি হতে পারে। সোনালী ব্যাংকের এমডিকে সরিয়ে দেওয়া হবে কিনা-এমন প্রশ্নের সরাসরি কোনো জবাব দেননি তিনি। তবে আসলাম আলম বলেন, এটা সরকারের সিদ্ধান্ত। এক্ষেত্রে ব্যাংকিং বিভাগের কোনো কাজ নেই।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।