শাহবাগে বাস পোড়ানোর ঘটনায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১৮-দলীয় জোটের ১৭ নেতার বিরুদ্ধে খুনের মামলা হয়েছে। পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) সোহেল রানা বাদী হয়ে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত পোনে ১২টায় শাহবাগ থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন। এ ছাড়া ককটেল হামলা চালিয়ে পুলিশ হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে পল্টন থানায় পুলিশ আরও দুটি মামলা করেছে। গতকাল দায়ের করা মামলা দুটির মধ্যে একটি ঘটনায় হুকুমের আসামি করা হয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে। এদিকে অবরোধ চলাকালে সারা দেশে অর্ধশতাধিক মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় ১৮ দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
শাহবাগ থানায় দায়ের করা খুনের মামলার আসামিরা হলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও মির্জা আব্বাস, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবদুস সালাম, বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু ও সালাহউদ্দিন আহমেদ, ছাত্রদলের সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়া, ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক নাসির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি মাহিদুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা, ঢাকা মহানগর উত্তরের ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির রওশন, যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম ওরফে নিরব, যুবদলের মহানগর উত্তর সভাপতি মামুন হাসান এবং জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা ও শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি শফিকুল ইসলাম মাসুদ। এছাড়া অজ্ঞাত আরও দুজনকে আসামি করা হয়েছে। এজাহারে বলা হয়, আসামিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উসকানি, পরিকল্পনা, ষড়যন্ত্র, সহায়তা ও অর্থায়নে দুর্বৃত্তরা মানুষ পুড়িয়ে হত্যার জন্য যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা হামলা চালায়। অবরোধের সমর্থনে এ ঘটনা সংঘটিত করা হয় বলেও এজাহারে উল্লেখ রয়েছে। মামলার বাদী এসআই সোহেল রানা জানান, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বাসটি জব্দ তালিকা প্রস্তুত করে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। অবরোধের সমর্থনে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার উদ্দেশে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পরিকল্পিতভাবে মানুষ হত্যা, গুরুতর জখম, জানমালের ক্ষতিসাধনসহ জনমনে ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছে, যা পেনাল কোডের ৩২৬/৩০৭/৩০২/৩৪/১০৯/১১৪/৪৩৫/৪২৭ ধারাসহ ১৯৯৮ সালের বিস্ফোরক উপাদানাবলী আইনের ৩/৬ ধারার অপরাধ।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিহঙ্গ পরিবহনের একটি বাস শাহবাগ শিশুপার্কের সামনে যাওয়ার পরই বাইরে থেকে কে বা কারা বাসটি লক্ষ্য করে পেট্রলবোমা ছুড়ে মারে। এতে আগুন মুহূর্তেই ভেতরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে সাংবাদিক, ব্যাংকার, ব্যবসায়ী, গাড়িচালকসহ ২০ জন দগ্ধ হন। গতকাল দুপুর পর্যন্ত এ ঘটনায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে ককটেল হামলা চালিয়ে পুলিশ হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে হুকুমের আসামি করে পল্টন থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল ও যুবদলের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে পল্টন থানায় আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়। গতকাল শুক্রবার ভোরে পল্টন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনিবুর রহমান ও জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেন। পল্টন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তোফায়েল আহমেদ বলেন, ১৮-দলীয় জোটের অবরোধ চলাকালে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম-উত্তর) এর পুলিশ কনস্টেবল সোহেল রানাসহ কয়েক পুলিশ সদস্য, কয়েকজন পথচারী ও একজন সিএনজি অটোরিকশার চালক আহত হন। এ ঘটনায় পল্টন থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে ৩৫৩/৩৩২/৩৩৩/৩০৭, ৩৪ ও ১০৯ ধারা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ৩-এর ৬ ধারায় মামলাটি দায়ের করেন। যার নং-৫০। মামলায় ককটেল নিক্ষেপের হুকুমের আসামি করা হয়েছে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদকে। মামলায় কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, মহানগর যুবদল ও ছাত্রদলের ১১ নেতার নাম উল্লেখ থাকলেও ২০/৩০ জন রয়েছেন অজ্ঞাতনামা আসামি। এদিকে বিএনপি মহানগর কমিটির সাইফুল আলম নিরব, জাহাঙ্গীর আলমসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২৫/৩০ জনকে আসামি করে উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) মনিবুর রহমান মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নং-৪৯। পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোরশেদ আলম জানান, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের অবরোধ চলাকালে পুলিশের দায়িত্ব পালনে বাধা, পুলিশ সদস্যদের ওপর ককটেল নিক্ষেপ করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা দুটি দায়ের করা হয়। এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো এ সংক্রান্ত খবর :
সিলেট : সিলেট নগরীর হুমায়ুন রশীদ চত্বরে অবরোধকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপি ও জামায়াতের তিন শতাধিক নেতা-কর্মীকে আসামি করে থানায় মামলা হয়েছে। গতকাল দক্ষিণ সুরমা থানার এসআই সোহেল রানা বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম জালালী পংকীসহ ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বরিশাল : বরিশালে ৪৮০টি এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বোঝাই একটি সহ দুটি ট্রাকে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ১৮ দলীয় জোটের অজ্ঞাতনামা ২৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। বৃহস্পতিবার রাতে ক্ষতিগ্রস্ত একটি ট্রাকের মালিক নগরীর মুসলিম গোরস্থান রোডের বাসিন্দা এসএম জাকির হোসেন বাদল বাদী হয়ে কোতোয়ালী মডেল থানায় এই মামলা দায়ের করেন। এতে তার ৬০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
কুমিল্লা : কুমিল্লা সদরের অশোকতলায় রেললাইনে নাশকতার ঘটনায় অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে লাকসাম জিআরপি থানায় মামলাটি দায়ের করেন রেলওয়ের ঊধর্্বতন সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী (কুমিল্লা) হামিদুল হক।
কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) : কেরানীগঞ্জে অবরোধের সময় কয়েকটি স্থানে গাড়ি ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগের ঘটনায় বিএনপির পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ৪টি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় ৩টি ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় অপর মামলাটি করা হয়। প্রথম ৩টি মামলায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দিন, ঢাকা জেলা ছাত্রদল সভাপতি রেজাউল কবির পলসহ আসামি করা হয়েছে ৩০০ নেতা-কর্মীকে। নামীয় ৪১ ও অজ্ঞাত ৩০/৪০ জনকে আসামি করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় অপর মামলাটি করা হয়।
পটুয়াখালী : দায়িত্ব পালনে বাধার সৃষ্টি ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতের ৩৭ নেতা-কর্মী এবং অজ্ঞাতনামা আরও দেড় শতাধিক আসামির বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়া মোটর সাইকেলে অগি্নসংযোগের ঘটনায় আরও ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে অপর একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মোটরসাইকেল মালিক অপর মামলাটি দায়ের করেন।
বাগেরহাট : মঙ্গলবার বাগেরহাটের ফকিরহাটে গাড়ি ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগের ঘটনায় জামায়াত-শিবিরের ৩৯৫ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। ফকিরহাট থানার দারোগা এসএম ফিরোজ আলম বাদী হয়ে বিশেষ আইনের ১৬ (২) ধারায় গত রাতে এই মামলা দায়ের করেন। মামলায় উপজেলা জামায়াতের আমির মাও. তৈয়বুর রহমান, রাজনৈতিক সেক্রেটারি অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দারসহ ৯৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এই মামলায় আরও ৩০০ জনকে অজ্ঞাত অভিযুক্ত করা হয়েছে। ফকিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মামলা রেকর্ডের পর আসামিদের আটকের চেষ্টা করা হচ্ছে।
বগুড়ায় গ্রেফতারকৃত যুবদল নেতার বিরুদ্ধে ১৮ মামলা : বগুড়ায় গ্রেফতারকৃত শহর যুবদল সভাপতি মাসুদ রানা মাসুদকে ডিবি পুলিশ ১৮টি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করেছে। গতকাল ১৮টি মামলার মধ্যে ২টি মামলায় ১০ দিন করে ২০ দিনের রিমান্ড চেয়েছে বগুড়া ডিবি পুলিশ।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে বগুড়া শহরের মালতিনগর এলাকার একটি বাড়ি থেকে গোয়েন্দা পুলিশ বগুড়া শহর যুবদল সভাপতি ও ১৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাসুদ রানাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকালে বাড়িতে তল্লাশি করে ৪০টি ককটেল, ২টি চাপাতি, ২টি বড় চাকু ও ৫ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করে। এসব ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে ১টি, বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে ১টি এবং মাদকদ্রব্য আইনে ১টি মামলা দায়ের করে। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গত মঙ্গলবার অবরোধের প্রথম দিনে শহরের ফুলদীঘি এলাকায় পুলিশ কনস্টেবল রমজান আলীকে ছুরিকাঘাতের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে মাসুদ।
বগুড়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মিজানুর রহমান জানান, মাসুদ রানার বিরুদ্ধে গতকাল পর্যন্ত ১৮টি মামলা খুঁজে পাওয়া গেছে। এসব মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এরমধ্যে ৪টি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। এছাড়াও রেলওয়ে থানার ২টি মামলা রয়েছে। পুলিশের দায়ের করা অস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে মামলায় গতকাল মাসুদ রানাকে ১০ দিন করে ২০ দিনের রিমান্ড আবেদন জানিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও জানান, কনস্টেবল রমজান আলীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বুধবার ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার আগে তাকে ছুরিকাঘাতের জন্য যুবদল নেতা মাসুদ ওরফে মাসুদ কমিশনারের নাম কাগজে লিখে দেয়।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।