আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রিয় গোলাপের সাথে আপন কথন!!



গ্রীষ্মের কোন সুন্দর সকালে বাড়ির পিছনের বারান্দায় বসেছিলাম। সকালের ঝিলিমিলি রৌদ্রটার সাথে ঝিরিঝিরি বাতাস আর ছোট ছোট পাখিদের আসা যাওয়া আর আনা-গোনা, এই সব দেখে কেমন যেন মগ্ন হয়ে গিয়েছিলাম। বসে বসে অবাক আর মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম, আমার বাগানের সবুজ ঘাস, সবজি আর ফলের গাছ-গাছালি। এবং তারই পাশে থাকা তিন রকমের গোলাপ গাছ, গোলাপী গোলাপ, লাল গোলাপ আর ক্রীম গোলাপ। এই সবগুলো গাছের গোলাপগুলো দেখতে কিযে অপূর্বইনা লাগছিল! হঠাৎ দেখি, গোলাপগুলো সব মৃদুমন্দ বাতাসে নড়ছে এবং কিছু একটা যেন বলছিল।

মনে হচ্ছিল, ফুলগুলো সব কে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং সবচেয়ে বেশি সৌন্দর্য্যের অধিকারী সেটাই একজন আরেকজনকে জানান দিচ্ছিল।

গোলাপী গোলাপগুলো বলছিল: আমরা হলাম বাগানের শ্রেষ্ঠ ফুল। কারণ, আমরাই বসন্তের প্রথম প্রস্ফুটিত ফুল এবং আমাদের সুদৃশ্য গোলাপী রঙের মাধ্যমে সুখ এবং আনন্দটাকে প্রকাশ করে থাকি। আমরা হলাম গভীর আনন্দের, সুখের এবং গর্বের প্রতীক। এবং আমরাই সবার হৃদয়ে অনুভূত কৃতজ্ঞতার ইঙ্গিত করে থাকি।



তখন ক্রীম গোলাপগুলো বলছিল: মোটেও ঠিক নয়, বরং আমরাই হলাম বাগানের শ্রেষ্ঠ ফুল। কারণ, আমরা সারাটা গ্রীষ্ম ধরে প্রস্ফুটিত হতে থাকি এবং আমাদের এই সৌন্দর্য্যমাখা ক্রীম রঙের মাধ্যমে যাদুমন্ত্র করা সুচিন্তার এবং কমনীয়তার প্রকাশ করে থাকি। আমরা হলাম ঐশ্বর্য বা সমৃদ্ধি এবং পরিপূর্ণতার প্রতিনিধিত্বকারী। এবং আমরাই সবার মনের উপলব্ধিটাকে চারুতা এবং সুচিন্তা পূর্ণ ধন্যবাদ জ্ঞাপনের ইঙ্গিত করে থাকি।

অবশেষে লাল গোলাপগুলো বলছিল: মুর্খের মত বলোনা, বাগানের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সুবাসিত ফুল হলাম আমরাই।

কারণ আমরাও সারাটা গ্রীষ্ম ধরে প্রস্ফুটিত হতে থাকি আর সমস্ত আশপাশ আমাদের সুবাসে মুখরিত করে রাখি, এবং আমাদের মুগ্ধকরা চোখ জুড়ানো লাল রঙের মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী ভাবে প্রেম, ভালবাসা আর রোমান্সটাকে প্রকাশ করে থাকি। আমরা হলাম, সারা বিশ্ব জুড়ে দীর্ঘ সৌন্দর্য্য এবং ভালবাসার প্রতীক হিসেবে পরিচিত। এবং আমরাই একমাত্র সবার অন্তরের গভীর অনুভূতিটাকে তাদের প্রিয়জনদের কাছে প্রকাশ করার জন্য উপযুক্ত উপায় হিসেবে ইঙ্গিত করে থাকি।

এমনি করে প্রতিটি ফুল যখন নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে তর্ক করছিল, ঠিক তখনই আমি বাগানের কাছে যেতেই ওরা সব একেবারে নিশ্চুপ হয়ে গেল। কিন্তু সমস্ত ফুলগুলোর শান্ত-সুন্দর আর মনোহারী রূপসমন্বিত সৌন্দর্য্য দেখে সত্যিই তখন, যে কেউ খুব গর্ব করেই বলে উঠবে “ফুল সবগুলোই শ্রেষ্ঠ”।

তেমনটি আমিও অনুভব করেছি যতবার আমি আমার ফুলের বাগানে গিয়েছি, এমনকি সেইদিনের সেই মুহূর্তেও।

আরেকদিন আমি বাগানে গিয়েছিলাম গাছগুলো সব দেখতে, সেইদিনও গোলাপ গাছগুলোর সম্মুখে এসে দাঁড়িয়ে মুগ্ধনয়নে দেখছিলাম। তখন ক্রীম গোলাপগুলো তাদের শ্রেষ্ঠত্ব দেখানোর জন্য, তাদের পাঁপড়িগুলো স্ফীত করে ছড়িয়ে দিয়ে বড় বড় হয়ে ফুটেছিল, যেন আনন্দে হাসছিল। গোলাপী গোলাপগুলো তাদের শ্রেষ্ঠত্ব দেখানোর জন্য, তারা সব প্রস্ফুটিত হয়ে আকাশপানে মুখ করে এমনভাবে নড়ছিল যেন জোরে জোরে হাসছিল। এবং লাল গোলাপগুলোও তাদের শ্রেষ্ঠত্ব দেখানোর জন্য, তারা প্রস্ফুটিত হয়ে সূর্যের আলোক রশ্মিটাকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যেন খেলছিল আর হাসছিল।

আর আমিও তখন তাদের সবার আনন্দ দেখে একটু হেসেছিলাম এবং নিজের অজান্তেই বলে উঠেছিলাম, ” দেখো দেখো, কি সুন্দর আমার বাগানের ফুলগুলো”।

তারপর ঘরে এসে একটা ঝুড়ি আর একটা কাঁচি নিয়ে আবারও বাগানে গিয়ে, কয়েকটা গোলাপী গোলাপ ঝুড়িতে তুলে নিয়েছিলাম। আর প্রথমেই তাদের নিয়েছিলাম, তাই গোলাপী গোলাপগুলো স্পেশাল ছিল বলেই তারা নিশ্চিত ছিল। কিন্তু তখনই ক্রীম গোলাপ আর লাল গোলাপ গুলো হাসাহাসি করছিল এবং বলছিল, ” হাহাহা, দেখেছ তোমরা যথেষ্ঠ সুন্দর নও তাই বাগানে থাকতে আর পারছনা”। এর পরে কয়েকটা ক্রীম গোলাপ ঝুড়িতে তুলে নিতেই লাল গোলাপগুলো তখন উপহাস করছিল এবং বলছিল , ” বলেছিলাম না, আমরাই শ্রেষ্ঠ ফুল, তাইতো আমরাই শুধু রয়ে গিয়েছি বাগানে”।

সবশেষে আমি কয়েকটা লাল গোলাপ তুলে নিয়েছিলাম ঝুড়িতে। তখন সমস্ত গোলাপগুলো নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে আবারও তর্ক শুরু করে দিয়েছিল।

অবশেষে গোলাপগুলো সহ নিয়ে ঘরে গিয়ে, একটা সুন্দর ফুলদানিতে ফুলগুলো একটা একটা করে রাখছিলাম। প্রথমে ফুলদানিতে রেখেছিলাম গোলাপী গোলাপগুলো, এই মনে করে যে, তারা ছিল বসন্তের প্রথম প্রস্ফুটিত সুন্দর ফুল তাই। তারপর ফুলদানিতে রেখেছিলাম ক্রীম গোলাপগুলো, এই ভেবে যে, প্রতিদিন যখন বাগানে যেতাম কি সুন্দর লাগত তাদের দেখতে তাই।

সবশেষে ফুলদানিতে লাল গোলাপগুলো যখন রাখছিলাম, তখন খুবই উৎসাহিত হয়েছিলাম আমার সুবাসিত সুন্দর ফুলগুলো রেখে দেখতে। কারণ, তারা ছিল আমার বাগানে সারা গ্রীষ্ম ধরে প্রস্ফুটিত হয়ে থাকা ফুল। পরিশেষ ফুলদানিতে সব গোলাপগুলো রাখা হয়ে গেলে, টেবিলের উপর যখন ফুলে ভরা ফুলদানিটা রাখলাম, কিযে অপূর্ব লাগছিল! তাই মহা আনন্দে বলে উঠেছিলাম, ” এই হলো আমার সবচেয়ে সুন্দর ফুলের তোড়া, যদিও প্রতিটা ফুলেরই তার নিজস্ব সৌন্দর্য্যের শ্রেষ্ঠত্ব আছে, কিন্তু সবগুলো ফুল একসঙ্গে তারা সত্যিই পরিপূর্ণ এবং অনিন্দ্যসুন্দর”।

হঠাৎ দেখা গেল, গোলাপগুলো সব তখন বুঝতে পেরেছিল যে, তাদের নিজস্ব সৌন্দর্য্যের শ্রেষ্ঠত্ব হয়ত ছিল। কিন্তু বিশেষ কোন স্পেশাল তো হতে পারেনা যতক্ষণ না তাদের একসাথে করে তোড়া বানানো হয়।

পরিশেষে গোলাপগুলো সব খুবই খুশি হয়ে গিয়েছিল।

মূলতঃ একা আমি কেবল বলতে পারি কিন্তু একসাথে আমরা সবাই হইচই করতে পারি। একা আমি হাসতে পারি কিন্তু একসাথে আমরা সবাই আনন্দ উৎসব করতে পারি। একা আমি বাঁচতে পারি কিন্তু একসাথে আমরা সবাই সুখে জীবনযাপন করতে পারি। আর এটাই হলো মনের মিলন, একাত্বতা, সুসম্পর্ক এবং বন্ধুত্ব।

সোর্স: http://prothom-aloblog.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.