বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বাড়িভাড়া দিতে না পারা নিয়ে মন্ত্রিসভার সাপ্তাহিক বৈঠকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা কঠোর সমালোচনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশ্ন- উনি (খালেদা জিয়া) কালো টাকা সাদা করেছেন, সে টাকা কোথায়? এখন তার সব অ্যাকাউন্ট প্রকাশ করা হবে। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের সমালোচনার পর প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বৈঠকসূত্র জানায়, গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনে 'অর্থের অভাবে বাড়িভাড়া দিতে পারছেন না খালেদা জিয়া' শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ব্যাপক আলোচনা হয়। আলোচনায় অংশ নিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ বেশ কয়েকজন খালেদা জিয়ার তীব্র সমালোচনা করেন। মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা বলেছেন, পত্রিকায় খালেদা জিয়ার বাড়িভাড়া নিয়ে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। খালেদা জিয়া নিজেকে আবারও প্রমাণ করতে চাচ্ছেন যে তার স্বামী ভাঙা স্যুটকেস আর ছেঁড়া লুঙ্গি ছাড়া কিছুই রেখে যাননি। একজন মন্ত্রী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, খালেদা জিয়া সরকারের কাছ থেকে নামমাত্র মূল্যে এক বিঘা আট কাঠা বাড়ি নিয়েছেন। সেই বাড়ি তিনি ভাড়া দিয়েছেন। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা প্রশ্ন রেখে বলেন, সেই ভাড়ার টাকা যায় কোথায়? বৈঠকসূত্র জানায়, আইনমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার এ ধরনের বক্তব্যের ভিন্ন অর্থ বা উদ্দেশ্য থাকতে পারে। এ বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে আমাদের উচিত তার সে উদ্দেশ্য খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া।
সংসদে তুমুল আলোচনা : খালেদা জিয়ার মাসে সাড়ে ৫ লাখ টাকা আয়ের বিবরণ দিয়ে জাতীয় সংসদে দুজন মন্ত্রী জানতে চেয়েছেন_ তিনি বাড়িভাড়া দিতে পারেন না, নাকি ভাড়া পরিশোধ করতে চান না? প্রতি মাসে খালেদা জিয়ার কত টাকা প্রয়োজন, সে প্রশ্নও তুলেছেন তারা। এ সময় সংসদকে জানানো হয়, এরশাদের কাছ থেকে পাওয়া গুলশানের ৩০ কাঠার ছয় তলা বাড়ি থেকে বেগম খালেদা জিয়া ভাড়া পান ৩ লাখ টাকা এবং ব্যাংক থেকে উত্তোলন করতে পারেন প্রতি মাসে আড়াই লাখ টাকা। তার দুই ছেলে থাকেন দেশের বাইরে। একা একজন মানুষ হিসেবে চলতে প্রতি মাসে তার কত টাকা লাগে? সংসদে গতকাল পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে এ প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইাঞ্জনিয়ার মোশাররফ হোসেন। গণপূর্তমন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত একটি রিপোর্টের প্রসঙ্গ তুলে বক্তব্য শুরু করেন। তিনি সংসদকে জানান, ১৯৮২ সালের ১৬ জুন খালেদা জিয়াকে ১০১ টাকার বিনিময়ে গুলশান এভিনিউতে ৩০ কাঠার জমিসহ একটি বাড়ি দেওয়া হয়। বর্তমানে এ বাড়ির দাম ৪৫০ কোটি টাকার বেশি। গুলশানের সেই বাড়ি থেকে প্রতি মাসে অফিশিয়ালি ৩ লাখ টাকা ভাড়া পান খালেদা জিয়া। নন-অফিশিয়ালি কত পান জানা নেই। মতিয়া চৌধুরী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া বাড়িভাড়া দিতে পারেন না, নাকি ভাড়া দিতে চান না? শুনেছি বিদ্যুৎ বিল ও ওয়াসার বিলও দেওয়া হয় না। তিনি বলেন, ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের সময় অনেক দামি পাথর ও হীরা বসানো নেকলেস পাওয়া গেছে। তার পরনের শাড়ির এক মিটারের দাম হিসাব করা হয়েছে ৫০০ ইউএস ডলার। ফ্রান্স শিপনের একেকটি শাড়ির দাম ৫ লাখ টাকা। এসবের পেছনেই কি সব টাকা শেষ হয়ে গেল? এ জন্য কি তিনি অর্থকষ্টে আছেন?
নিজের বাড়ি ভাড়া দিয়ে অন্যের বাড়িতে থাকেন : বেগম খালেদা জিয়া বাড়িভাড়া নিয়ে জাতির সঙ্গে প্রতারণা করছেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার গুলশানে ৩৮ কাঠার একটি বাড়ি রয়েছে। ওই বাড়িটি তিনি বিদেশি একটি কোম্পানির কাছে ভাড়া দিয়েছেন। এ বাড়ি থেকে প্রতি মাসে ১০ লাখ টাকার বেশি ভাড়া আসে। অথচ বর্তমানে তিনি নিজের বাড়িতে না থেকে অন্যের বাড়িতে বিনা পয়সায় থাকেন। সেগুনবাগিচার খাজা নিজামুদ্দিন মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু একাডেমি আয়োজিত আলোচনা সভায় গতকাল এ কথা বলেন ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কাছ থেকে মাত্র ১ টাকায় ৩৮ কাঠার ওপর একটি বাড়ি নিয়েছিলেন খালেদা জিয়া।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।