আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে নেওয়া বর্ধিত ঋণসুবিধার (ইসিএফ) অর্থ নিয়ে কোন খাতে কীভাবে ব্যয় করা হচ্ছে, এর ব্যাখ্যা চেয়েছে সংস্থাটি। বিশেষ করে আর্থিক খাতের সংস্কারের বিষয়ে যেসব চুক্তি করা হয়েছিল, সেগুলোর বাস্তবায়ন নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে আইএমএফ। কেননা বর্তমান সরকারের মেয়াদ রয়েছে আর মাত্র কয়েক দিন। এরপর সরকার পরিবর্তন হলে পলিসির পরিবর্তন হতে পারে এমন আশঙ্কা করছে সংস্থাটি। এ জন্য ইসিএফের আওতায় নেওয়া ঋণের অর্থ খচরের বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়েছে সংস্থাটি। অর্থ মন্ত্রণালয়ও এর ওপর ভিত্তি করে একটি প্রতিবেদন তৈরির কাজ করছে, যা চলতি মাসের মধ্যেই পাঠানো হবে আইএমএফ সদর দফতরে।
২২ সেপ্টেম্বর থেকে আইএমফের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করছে। দলটি বৃহস্পতিবার তিন দফায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছে। আজ আবারও বৈঠকের কথা রয়েছে তাদের। ৮ অক্টোবর দলটির ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে। এদিকে ইসিএফের অধীনে নেওয়া এক বিলিয়ন ডলার ঋণের তিন কিস্তি ছাড় করেছে আইএমএফ। এর চতুর্থ কিস্তি নভেম্বরে পাওয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছে সফররত প্রতিনিধি দল। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মেয়াদের শেষ প্রান্তে এসে জনতুষ্টিমূলক কর্মকাণ্ডে অর্থ খরচের জন্য 'কঠিন শর্তে ঋণ' বা হার্ড টার্ম লোন নিতে চাইছে সরকার।
এ জন্য এ ধরনের ঋণ নেওয়ার সীমা বাড়াতে আইএমএফকে অনুরোধও করা হয়েছে। তাই আইএমএফ ইসিএফ ঋণ দিলে সরকার কোন কোন খাতে তা ব্যয় করবে তার একটি প্রতিবেদন চেয়েছে। এ ছাড়া এ ব্যাপারে বেশ কিছু দিকনির্দেশনাও দিয়েছে সংস্থাটি।
আইএমএফের সঙ্গে ইসিএফ নামক তিন বছর মেয়াদি (২০১২-১৪) চুক্তিতে আবদ্ধ রয়েছে সরকার। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী সরকার বিভিন্ন বিদেশি উৎস থেকে তিন বছরে সর্বোচ্চ ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার হার্ড টার্ম লোন নিতে পারবে। কিন্তু জুলাই পর্যন্ত সরকার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ও দেশ থেকে ২৮০ কোটি ডলার হার্ড টার্ম লোন নিয়ে ফেলেছে। এখন এ সীমা ৩০০ কোটি ডলার থেকে ৪০০ কোটিতে উন্নীত করার জন্য আইএমএফকে অনুরোধ জানিয়েছে সরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি ব্যাংকসহ দেশের ব্যাংকিং খাত নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আইএমএফ। বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আইএমএফ এমন উদ্বেগ জানায়। ব্যাংকিং সচিব এম আসলাম আলমের সভাপতিত্বে বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগসহ সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে সরকারি ব্যাংকগুলো নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংককে বেশ কিছু দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপারভিশন বাড়াতে বলেছে সংস্থাটি। সরকারি ব্যাংক নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরও ক্ষমতা দিতে বলা হয়েছে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, ব্যাংক কোম্পানি আইনে যেভাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক সেভাবেই সরকারি ব্যাংকগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করছে। সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইনে, বাংলাদেশ ব্যাংককে এ ব্যাপারে দেওয়া হয়েছে বিশেষ ক্ষমতা।
এ ছাড়া রিভাইজড এমওইউ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আইএমএফ বলেছে, এমওইউর মাধ্যমে সরকারি ব্যাংকগুলোর পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করতে হবে। পাশাপাশি সরকারি ব্যাংকগুলোর আর্থিক দুর্বলতা কাটাতে সরকারি ব্যাংকগুলোর এনপিএল (নন-পারফরম্যান্স লোন) নিচের দিকে রাখতে।
সংস্থাটি বলেছে, ব্যাংকগুলোর বর্তমান দুর্দশা থেকে রক্ষা করতে মূলধন ঘাটতি পূরণের বিকল্প নেই। অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা এ জন্য বাজেটে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে। তবে ব্যাংকগুলোকে তারা এ অর্থ একসঙ্গে দেবে না। এ বছর কিছু অংশ দেওয়া হবে। আগামী বছর বাকিটা ধীরে ধীরে ছাড় করা হবে। এ ছাড়া এ বছর মূলধন ঘাটতি পূরণে যে টাকা দেওয়া হবে, তা কীভাবে দেওয়া হবে সে বিষয়েও জানতে আগ্রহী আইএমএফ। মন্ত্রণালয় বলেছে, ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এটা দেওয়া হবে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।