আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যৌথ অভিযানে গ্রেফতার চলছে দেশজুড়ে

প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ২৯ ডিসেম্বরের কর্মসূচি সামনে রেখে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সাঁড়াশি অভিযানে নেমেছে পুলিশ, বিজিবি, র্যাবের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনী। এর অংশ হিসেবে রাজধানী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২৬ জনকে। বাইরের জেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গ্রেপ্তার হয়েছে যশোরে ৫৬ জন। সারা দেশে মোট গ্রেপ্তার তিন শতাধিক। এদের প্রায় সবাই জামায়াত-শিবির এবং বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মী। বিভিন্ন জেলার পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। নিজস্ব প্রতিবেদক ও জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর_

ঢাকা : রাজধানীতে কম্বিং অপারেশন শুরু করেছে যৌথ বাহিনী। পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর সদস্যরা বুধবার রাত থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন অংশে এ অভিযান শুরু করে। দেশের বিভিন্ন অংশে আগেই এ অভিযান শুরু হয়েছিল। মূলত ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের টার্গেট করেই এ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। গত রোববার বিরোধী জোটের মার্চ ফর ডেমোক্রেসির আগে অভিযানের তীব্রতা আরও বাড়ানো হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। গত বুধবার রাতে যাত্রাবাড়ি, সায়েদাবাদ, গেন্ডারিয়া, কদমতলী, শ্যামপুর, শনির আখড়া, রায়েরবাগ, ওয়ারী, সূত্রাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ যৌথবাহিনীর নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী ছাড়াও বিভিন্ন মামলার আসামি রয়েছে। তবে পুলিশ বলছে অভিযানের প্রথম দিনে মোট ২৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ডিএমপির উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, বুধবার মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তালিকাভুক্ত ২৬ জন অপধারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, যাদের নামে মামলা আছে, যারা সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারী তাদের বিরুদ্ধে যৌথবাহিনীর এ অভিযান। রাতে যাদের আটক করা হয়েছে তাদের নাম-পরিচয় যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। মূলত থার্টিফাস্ট নাইট এবং নির্বাচনকে ঘিরে যেকোনো প্রকার নাশকতা প্রতিহত করতে যৌথবাহিনীর এ অভিযান চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। যৌথ বাহিনীর এ অভিযানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), পোশাকধারী পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যরা অংশ নিয়েছেন। তবে বিরোধী দলের নেতাদের ধারণা, বিরোধীদলীয় জোটের ডাকা ২৯ ডিসেম্বরের মার্চ ফর ডেমোক্রেসিকে প্রতিহত করতে এ ধরণের গ্রেফতার অভিযান চালানো হচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশের মতো রাজধানীতেও নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করতে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে তাগিদ দেয়া হয়। এরপর নাশকতাকারী এবং নাশকতার ইন্ধনদাতা হিসেবে প্রায় ২ হাজার ৩শ' জনের একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়। এ তালিকা ধরেই গ্রেফতার অভিযান চলছে। দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও ১ জানুয়ারি থেকে এ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত ছিলো। কিন্তু গত মঙ্গলবার বাংলামোটরে পেট্টোলবোমা নিক্ষেপ করে পুলিশ সদস্যকে হত্যার পর অভিযানের সময় এগিয়ে আনা হয়েছে। রাজধানীতে চোরাগোপ্তা হামলার আশঙ্কায় বিশেষ অভিযানের সময় এগিয়ে আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অপর একটি সূত্র। যশোর : বুধবার রাত থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৫৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এ ছাড়া বিকেলে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাস্টার নূরুন্নবীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শহরের রেল রোড এলাকা থেকে থানাপুলিশ ও ডিবির একটি টিম তাকে গ্রেফতার করে। অন্য আটকদের মধ্যে মনিরামপুর সদর ইউপি চেয়ারম্যান নিস্তার ফারুক ও খেদাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক হোসেনসহ বিএনপির ১০ ও জামায়াত-শিবিরের চার নেতা-কর্মী রয়েছেন। সিরাজগঞ্জ : সদর উপজেলার বিএনপি-অধ্যুষিত সয়দাবাদ ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে যৌথ বাহিনী ২৫ জনকে এবং ডিবি পুলিশ তিনজনকে আটক করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা সবাই বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মী। বিজিবির প্লাটুন কমান্ডার মেজর আরিফ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোক্তার হোসেন ও র্যাব-১২ ক্যাম্প কমান্ডার এএসপি অশোক কুমার পালের নেতৃত্বে যৌথ বাহিনীর দেড় শতাধিক সদস্য গতকাল সকাল এ অভিযান পরিচালনা করেন। সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোকতার হোসেন জানান, ইউনিয়নের সয়দাবাদ, মুলিবাড়ী, মোহনপুরসহ কয়েকটি গ্রামে আভিযান চালিয়ে ২৫ জনকে আটক করা হয়। চাঁদপুর : বিএনপি-জামায়াতের ১৭ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। দিনব্যাপী জেলার আটটি উপজেলায় অভিযান চালিয়ে জামায়াতের এক, শিবিরের দুই ও বিএনপির ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদের মধ্যে মতলব উত্তর পৌর যুবদল সভাপতি টিপু ফরাজী রয়েছেন। ১৭ জনের মধ্যে সদর ও হাইমচর থেকে একজন করে, মতলব উত্তর ও দক্ষিণ এবং হাজীগঞ্জ থেকে দুইজন করে, ফরিদগঞ্জ থেকে তিনজন ও শাহরাস্তি থেকে ছয়জনকে আটক করা হয়। নারায়ণগঞ্জ : জেলায় গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রেখেছে যৌথ বাহিনী। বুধবার রাত থেকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৩ জনকে। এর মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জে চারজন ও ফতুল্লায় নয়জন। জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক (ডিআইও-১) মঈনুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। দিনাজপুর : জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অভিযান চালিয়ে চিহ্নিত সন্ত্রাসীসহ আটজনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। পুলিশ জানায়, পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনী বুধবার দিবাগত রাতে জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। মধ্য রাতে তারা আটজনকে আটক করতে সক্ষম হয়। ফেনী : জেলার বিভিন্ন উপজেলায় যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে জামায়াত-শিবির সন্দেহে বুধবার রাতে নয়জনকে আটক করেছে। আটকদের মধ্যে ছয়জনকে সদর, দুজনকে পরশুরাম ও একজনকে সোনাগাজী উপজেলা থেকে আটক করা হয়। পরে তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানো হয়েছে। এদিকে সোনাগাজীর মতিগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. হুমায়ুন চৌধুরীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে দলীয় নেতা-কর্মীরা ফেনী-সোনাগাজী সড়ক ৩০ মিনিট অবরোধ করে রাখে। ঝিনাইদহ : মহেশপুরে অভিযান চালিয়ে বুধবার রাতে ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে যৌথ বাহিনী। হরতাল-অবরোধে সহিংস ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করা হয়। চট্টগ্রাম : লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ও বড় হাতিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে অভিযোগে জামায়াত-শিবিরের ছয় কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। আটকদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানানো হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। বুধবার রাতে অভিযান চালানো হয়। নীলফামারী : সদরে জামায়াত-শিবিরের দুজন ও ডোমারে যুবদল নেতাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে যৌথ বাহিনী। গতকাল ভোরে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। নীলফামারী সদর থানার ওসি বাবুল আকতার জানান, এদের মধ্যে দুজনকে সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূরের গাড়িবহরে হামলা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। গাজীপুর : নাশকতার অভিযোগে বিএনপি নেতা মো. আজহারুল ইসলাম মোল্লাহকে আটক করেছে বিকেলে জয়দেবপুর থানা পুলিশ। তিনি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার। বাগেরহাট : পৌর জামায়াতের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মোস্তাইন বিল্লাহকে আটক করেছে সদর মডেল থানা পুলিশ। বান্দরবান : জেলা যুবদলের সহসভাপতি আবু বক্করসহ তিন বিএনপি নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। অন্যরা হলেন জেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম-সম্পাদক নাছির উদ্দিন ইউসুফ ও যুবদল নেতা মোহাম্মদ জসিম। মেহেরপুর : মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সাবদার আলীকে আটক করেছে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.