পূর্ণ হতে চাইনি তাই পূর্ণতার খোঁজ করি, অপূর্ণতাই থেকেছে পাশে তাই অপূর্ণতার কাছে ঋণী আমি আমার প্রতিটা অশ্রুর রাতে,
প্রতিটা কষ্টের বেলাতে,
এক একটা ভাবনার জন্ম দেই।
একটি বেদনাতীত প্রসব যন্ত্রণার মধ্যে মা যেমন জন্ম দেন তাঁর সন্তানকে, যে হতে পারে সমগ্র মানুষের জন্য কল্যাণ। আমিও চাই আমার যন্ত্রণাগুলো তেমনি সর্বকল্যাণময় ভাবনার জন্ম দিক!
একজন নারী তার ঘরের লক্ষ্মী। একটি পরশমণির মত, যাকে পুরুষের মত দৈহিক শক্তি দেয়া হয়নি। কিন্তু মানসিক শক্তি দেয়া হয়েছে অফুরান।
সে অবলীলায় পারে পরশপাথরের মত ছুঁয়ে কারো জীবন অগ্রসরে উৎসাহ দিতে। আবার নিমিষেই পারে সবকিছু ধ্বংস করতে। বলতে দ্বিধা নেই। নিজে যখন এক নারী, নিজেকে জানি। জানি এই নারীত্বের ক্ষমতাকে, অক্ষমতাকে।
এটাও জানি যেখানে আমার অক্ষমতা, সেখানে আমার পাশে আছে একজন পুরুষ। যে বা যারা আমাকে সহায়তা করবে পথ দেখাতে। এটাই মিতালী, সৃষ্টির এবং সত্যের।
কিন্তু মিতালী চাইলেই হয়না, তা এই জীবন আমাকে বুঝতে শিখিয়েছে। সব মানুষরা মূল্যায়নের রীত বঝেনা, ধর্ম বোঝেনা।
ধর্মে মানুষের ভয়, রীতে মানুষের পরাধীন হবার আশংকা। তাই, কেউ সহসাই চায় না সেই ভয়কে ডিঙ্গাতে বা ভাঙতে। কিংবা ধর্মকে জানতে। মানুষের সময় এখন অনেক যান্ত্রিক এবং এই সময় বিনিময় ছাড়া আর কিছুই চায় না! যেখানে সময় দেবার বিনিময়ে বৈষয়িক বা দৈহিক কিছু লাভ করা যায় না, সেখানে মানুষ তার একান্ত সময় ব্যয় করতে অপ্রস্তুত, উপর্যুপরি অজুহাতনির্ভর! মিতালী কীভাবে বজায় রবে তাহলে!?
মানুষকে যতই পাঠ পড়ানো হোক না কেন, নিজ উপলব্ধি না আসা পর্যন্ত সে মূর্খেরই সমান একজন। কোন তফাৎ নেই তাদের।
তাই নির্দ্বিধায় বলতে পারি, আমরা মূর্খ। আমাদের মূর্খতা দূর হতে অনেক দেরি। দেরির চেয়ে বলবো, কোন কোন মূর্খতা আমাদের নেই তা খুঁজে পাওয়া যাবে না! আমাদের মূর্খতা দিনদিন আলোর মুখ দেখছে!
এইখানে আলো বলতে ভাবার্থে বুঝাতে চাচ্ছি যে, মানুষের কাণ্ডজ্ঞানহীনতা এখন প্রকাশ্য। যা সহসাই দেখতে হয় রাস্তাঘাটে, অলিতে-গলিতে আর জীবনের সব স্তরে। অপরাধের রকমারি এখন সর্বজনবিদিত।
অপরাধ কী আসলে? একটি 'অভাব' থেকেই কি অপরাধ জন্ম নেয় না! কোন অভাব? অভাব, সেটা অনেক কিছুরই হতে পারে। আমি যা বুঝি, ভাল'র বিপরীত কখনও খারাপ হতে পারে না। একটা ভাল কত ভাল হতে পারে বা পারবে তা বলা যায় না। তেমনি আবার একটি খারাপ কত দূর পর্যন্ত খারাপ হতে পারবে তা-ও বলা যায় না। এগুলো নির্ভর করে সুযোগের ওপর।
একটি পরিবেশ যতটুকু পারবে এদেরকে উসকে/উৎসাহ দিতে, ততটুক ফোর্স বা শক্তি নিয়েই এই ভাল-খারাপের মাত্রা বাড়বে। তাহলে বলতেই পারি, পরিবেশের ভূমিকা কত বড়। ঠিক এমন একটা পরিবেশের যদি অভাব হয় কারো জীবনে, যা কাউকে সত্য এবং সর্বকল্যাণের পথে এগোতে উৎসাহ দিতে পারতো তাহলে সেই পরিবেশটাই কি 'অভাব' নয়? হ্যাঁ, তাই। এই পরিবেশ প্রতিদিনের, প্রতি মিনিটের। এমন নয় যে তা জীবনে একবারই আসবে।
এর মানে হল, আমরা যারা সুন্দরকে খুঁজি, তাদের সবসময়ই একটা সুযোগ আছে অভাবে থাকা কাউকে এরকম একটা পরিবেশের সন্ধান মিলিয়ে দেবার। অভাবী মানুষ নিজেরা অভাবে থেকে থেকে এই পরিবেশের খোঁজ থোড়াই পাবে, এটাই স্বাভাবিক। হাজারে বা লাখে একজন অথবা দুজন পায়, আর বাকিরা? কিন্তু ওই যে বললাম, মানুষ বিনিময় খোঁজে! অবলীলায় সুন্দরকে খোঁজা আর কাউকে এর সন্ধান দেয়া, এগুলো এইসব বিনিময়নির্ভর মানুষের পক্ষে যদিও অসম্ভব নয় কিন্তু তারা তা করবে না। লজ্জা হয়, যখন মানুষ সক্ষম থেকেও অক্ষমের মত আচরণ করে! মিতালী কীভাবে হবে?!
ফেসবুক, ব্লগ আর সমস্ত ভার্চুয়াল জগত এখন এক একটা তড়িৎ মাধ্যম হয়ে গেছে যেগুলো মুহূর্তেই মানুষের অনুভুতি-কথা পৃথিবীর এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে নিয়ে যায়! আমরা এতটাই সময়প্রেমিক যে, নির্দ্বিধায় মনের কথাগুলো সময়ের কাছে ছেড়ে দেই। সময় কতক্ষণ সেগুলোকে নিয়ে খেলা করে, তারপর ধীরে ধীরে সেগুলোকে তার অতীতের গহ্বরে নিয়ে যায়।
আমরা মনে করি, সময়কে আমরা ব্যস্ত রেখে দিচ্ছি কোনো একভাবে। কিন্তু প্রকৃত কি এটাই? না! গতানুগতিক হতে হতে এই ভ্রম আমরা নিজেরাই তৈরি করে নিয়েছি। প্রকৃত তো, সময় আমাদের ব্যস্ত রাখছে! আর তা-ও অধিকাংশ কীসব কাজে? যেগুলোর কোন যুতসই ফলাফল নেই! অন্ততপক্ষে কথার সম্মানে চেষ্টা করা, সেটাও নেই। আমরা হইহই করে দেশ, ধর্ম, রাজনীতি, সংসার, সমাজ -সবকিছু নিয়ে আপডেটের পর আপডেট দিচ্ছি। কমেন্ত-পাল্টা কমেন্ট করছি, গ্যাঁজাচ্ছি।
এই হয়ে গেল রে! মানুষ কেন এরকম রে! - কতকথা! 'কেন?' পর্যন্তই সমস্ত কথা শেষ, লেখা শেষ। কিন্তু কাজের বেলায় কলা গাছ অথবা উটপাখি! সবাই যদি প্রশ্নই করি তবে 'উত্তর' কার অপেক্ষায়? কে দেবে? ভিনগ্রহবাসী, পরী-জ্বীন-ভূতেও আবার আমাদের কেমন গা ছমছম করা বিশ্বাস! ওরা দেবে উত্তর!? আমরা আসলে কোনটাকেই ছাড়ি না!
আমার হাসি পায়। মানুষ এতো অযৌক্তিকতাকে জন্ম দেবার সময় কীভাবে পায়?! যার কোন সাংগঠনিক ফল নেই, যা মানুষকে নতুন কিছু শেখাতে পারে না -তাতে মানুষের এতো কেন আগ্রহ!? ওই যে, আমরা আবার রসিকও বটে! জীবনকে নিয়ে 'মহাভারত' এর পর 'রসগোল্লা' তৈরি করতে যাচ্ছি। আমাদের প্রাপ্তি শূন্য করতে আমরাই ব্যস্ত!
আমি বলি খারাপ কেউ নয়। যাকে খারাপ বলি, সে হয়ত কোনো এক অভাবে আছে।
'বিপরীত' বলতে আমি কিছু বিশ্বাস করছি না আর। আলোই সত্য ও চিরন্তন। আলোর বিপরীত আঁধার হতে পারে না। আলোর অনুপস্থিতি বা অভাবকে আমরা 'আঁধার' বলে ডাকি। হ্যাঁ, বিপরীত তখনই হয় যখন একে উদাহরণ হিসেবে প্রয়োগ করা যায় বা যখন দুটি জিনিসের ভিত্তি এক হয়েও তারা নিজ নিজ গুণে আলাদা।
অর্থাৎ, একজন একটি পরিবেশের মধ্য দিয়ে ভাল হলে ঠিক একই পরিবেশের মধ্য দিয়েই অন্যজনকে খারাপ হতে হবে। তাহলেই প্রকৃতই 'বিপরীত' শব্দটির অস্তিত্ব থাকে। তা না হলে, আমি বলতে পারি আমার এখনও সুযোগ আছে ওই অভাবে থাকা মানুষটিকে সুন্দর একটি জীবনের তাগিদ দেয়ার। এরপরও সে যদি তাগিদ না পায় তাহলে আমি তাকে কোনো জন্মেই ভাল করাতে পারবো না। বরং বলবো সে সজ্ঞানে খারাপ।
যেমন, ফেরাউনকে বলি। তাকে সুযোগের সন্ধান দেয়া হয়েছিল, কিন্তু তা সে গ্রহণ করেনি।
আলোর অভাবেই নীল আকাশটা ধূসর-কালো রুপ ধারণ করে। আবার জানি আলো আসবেই আগামীকাল। সেই প্রত্যাশায় যেমন কোনো সন্দেহ আমরা রাখি না, ঠিক তেমনি ভয়-দ্বিধা-সংশয়কে দূর করার ক্ষেত্রেও আমাদের আপোষ করা উচিত, সাহস করা উচিত।
নিজের ক্ষমতার ওপর সন্দেহ থাকলে অপরের সাহায্য আমরা নিতেই পারি! ময়লাকে দূর করতে চাইলে ময়লার কাছেই যেতে হয়। ধর্মকে ভয় করে বা উপরে উপরে জেনেই বসে থাকলাম আর গালিগালাজ করলাম ফতোয়ার বিরুদ্ধে, এতে কিছু আদায় হবে না। মানুষের কথায় বা তালে আর কতক্ষণ?
একটু depict করি। ভাল লাগে। বুঝাতেও সুবিধা।
ছবিটাতে দেখাতে চাচ্ছি, 'সত্য' একটাই, যা অবিকৃত থেকে মানুষকে সমানভাবে জানান দেয়। সত্য অবিকৃত থাকার নির্ভরতা তাই তাদের হাতে যারা সত্য জেনেছে এবং সত্যের কাছে আছে। তাই সত্যকে বিকৃত কেবল তারাই করতে পারে। অধিকাংশই আমরা(কম-বেশি সবাই যারা সত্য খুঁজি) সত্য খুঁজি এরটা-ওরটা শুনে শুনে, কান-মন ভরিয়ে। কারণ এভাবে খুব কম সময়ে ব্যাপারগুলো জানা যায়, বেশ একটা ঘাটাঘাটি করতে হয় না।
কিন্তু যা শুনছি তা আদৌতে কি সত্যি? হাজার মানুষের হাজার কথা। সেটা যাচাই করার সময় আমাদের নেই। কারণ তাতে কালক্ষেপণ হয়, তা সময়সাধ্য। মানুষের মুখনিঃসৃত সত্য আমরা নির্দ্বিধায় শুনতে থাকি অথচ প্রকৃত সত্য থেকে যে আমরা অনেক দূরে চলে যাচ্ছি সেটা আমলে আনি না। আস্তে আস্তে আঁধার ঘিরে ধরে আমাদের, আমরা তখন অনুমানের ওপর সবকিছু বিচার করতে শুরু করি।
এটা ধ্বংসাত্বক! এটাই ভয় সৃষ্টি করে।
আগে তো ০+১=১ তারপর ১+১=২, তার মানে নিজের কিছু চেষ্টা থাকলে তারপরেই অন্যজন আমাকে আরও কিছু দিতে পারবে। আমি যদি ১ না হয়ে শুধু শূন্যই হয়ে রই, তাহলে মানুষ আমাকে নতুন কিছুই দিতে চাইবে না। বলে রাখি, একজন মঙ্গলপ্রত্যাশী মানুষ যখন নিজে সচেতন থাকে তখনই সে সমাজের আর দশটা মানুষকে কল্যাণের আন্দোলনে নিজের সাথে পায়। কথাটি মনে পড়ে, 'যে নিজেকে সাহায্য করে, বিধাতাও তাকে সাহায্য করেন।
' আমরা এই বিশ্বসংসারে সূর্যের মত হতে পারবো না। সূর্য তার দায়িত্ব একাই পালন করে। কিন্তু কিছু কিছু কোণাও আছে যেখানে সূর্যের আলো পৌছায় না। বিশ্বসংসারকে যদি আমাদের 'ঘর' মনে করি তবে দেখি যে ঘরের কিছু কিছু কোণায় সূর্যের আলো যায় না। সূর্য যেহেতু আমরা হতে পারবো না, তাহলে কি অন্তত সেই ঘরের কোণার পিদিম হতে পারি না!? মনে হয় পারি! সমাজকে সুন্দর করার আগে, নিজের ঘরকে আগে সুন্দর করি, তার আগে করি নিজেকে!
আমি আমার চলার পথে নিজের কিছু ইথিক্স তৈরি করে নিয়েছি।
একটা এরকম, (যখন সমস্ত চেষ্টা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে দেখবো পরিপূর্ণভাবে সব ঠিক হচ্ছে না তখন হতাশ না হয়ে এটাই ভাববো) - 'একটি পার্কে, রাস্তায় বা ফুটপাথের কোথাও যদি বসতে যাই তখন একটু ঝেড়ে নেই জায়গাটা। পুরোটা কিন্তু ঝাড়ি না। বরং ততটুকুই, যতটুক জায়গা আমার কিংবা আমার বন্ধুর দরকার হবে। ' এটা থেকে একথাই বোঝাবো যে, সবকিছুকে সুন্দর করতে আমরা পারবো না। আমরা পারলেও পরিবেশ কিছু বাঁধা দেবে যেগুলো থেকে চোখ এড়ানো যাবে না।
তাই অন্তত, আমাদের সাধ্যের মধ্যে থাকা মানুষ ও পরিবেশকে আমরা অবশ্যই সুন্দর করার চেষ্টা করবো।
ধর্মকে আমি একটি 'ম্যানারিজম' মনে করি যা আমাদেরকে সঠিক জিনিসটি চিনতে সহায়তা করে। সুশীল করে আমাদের। এখানে পরাধীন হবার ভয় কোথায়?
আর স্বাধীনতা কি শুধু পোশাক-আশাকেই, চেহারা ফুটিয়ে তোলাতেই? স্বাধীনতা তো আত্মার! সে অস্তিত্বে মিশে থাকে! ছোট ছোট-টাইট টাইট পোশাকে আমি স্বাধীনতা দেখি না। মডার্নিজম দেখি না।
বরং ঢিলেঢালা পোশাকেই তিড়িংবিড়িং করতে আমরা সুবিধা, সেখানে আমি স্বাধীনতার হাওয়া পাই! মুভমেন্ট সহজ হয়!
মানুষ পারফেক্ট নয়। অভাবকে জয় করতে করতে সে পারফেকশনের কাছাকাছি চলে যেতে পারে। তাই কেউ ভুল করবে, এটাই স্বাভাবিক। আমরা সেই ভুলকে আঙ্গুল দিয়ে না দেখিয়ে বরং তার কাছে গিয়ে সাহস করে বলি, তোমার ভুল হচ্ছে। এবং তাকে সঠিকটা জানিয়ে দেই।
এতে শান্তিই পাওয়া যায়। অযথা, ফেসবুক-ব্লগে আজেবাজে প্রশ্ন রেখে এগুলো পয়েন্ট আউট না করি। এতে দেখি, অন্য মানুষকেও আমরা আমাদের সাথে কথা চালাচালিতে ব্যস্ত রাখছি। হতাশা এক গুণ থেকে তিন গুণ করছি। লাভ নেই!
কারণ বিনা কার্য হয়না।
তাই উচিত আমরা আমাদের সাথে হওয়া ভাল-মন্দ ঘটনাগুলোর কারণ খুঁজি। ভাল অভিজ্ঞতাকে চেপে না রেখে শেয়ার করি। মন্দ অভিজ্ঞতা থেকে যদি নিজের ভুল থাকে তবে সেগুলো খুঁজে বের করি ও সাবধান হই। এবং ক্ষমা করতে শিখি, যদি বিশ্বাস করি জন্মগত খারাপ কেউ নয়!
পরিশেষে এটা মাথায় ও মনে রাখা উচিত যে, যে যেটার প্রয়োজন বোধ করে সে সেটারই খোঁজ করে।
- পেন আর্নার
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।