‘পুষ্প আপনার জন্য প্রস্ফুটিত হয় না’—কথাটা মিলে গেছে বারিছন বেগমের জীবনের সঙ্গে। বারিছন নিজের পরিশ্রম আর মমতা দিয়ে ফুটিয়ে চলেছেন গোলাপ, গ্ল্যাডিওলাস; আর এই ফুলগুলো সাফল্যের সৌরভ ছড়িয়েছে বারিছনের জীবনে।
একটা সময় ঘরের চালে টিনও ছিল না। বৃষ্টি ঠেকাতে খড়ের চালে দিতে হতো পলিথিন। দুবেলা দুমুঠো খাবার জোটাতেই চলত নিরন্তর চেষ্টা।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার পটুয়াপাড়া গ্রামের বারিছন বেগমের সেই দিন আর নেই। ফুল চাষ করেই পেয়েছেন সফলতা, পাকা বাড়ি হয়েছে। নিজের চার বিঘা জমিতে রয়েছে হরেক রকম ফুল আর দুই বিঘাতে ধান-মুগকলাই। জমিতে চাষ দেওয়ার জন্য নিজস্ব ট্রাক্টর।
বারিছনের নিজের বাড়িতে তাঁর মুখ থেকেই জানা গেল তথ্যগুলো।
বললেন, ‘গোলাপ-গ্ল্যাডিওলাস আর গাঁদা ফুল চাষে বদলে গেছে জীবন। ’ স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৭ সালে পেয়েছেন সিটিব্যাংকের সেরা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা পুরস্কার।
বারিছন বেগমের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, আঙিনাজুড়ে গ্ল্যাডিওলাস ফুলের বীজ। কয়েক দিন পরেই এগুলো রোপণ করা হবে। ছেলের বউ মিলে বীজ বাছাই করছেন।
লেখাপড়া না জানা বারিছন বেগম জীবনের নানা গল্প শোনান, ‘২৫ বছর আগে রাঙা একখানা শাড়ি পরে বউ হইয়ে এই বাড়িতে আসি। তিন কাঠা জমিতে একখান খুপরি ঘর ছাড়া আর কিছু ছিল না। স্বামী ভ্যান চালাতেন। ঠিকমতো সংসার চলত না। এর মধ্যেই তিন মেয়ে আর দুই ছেলে জন্ম নেয়।
ওই এক ঘরেই গাদাগাদি করে সবাই থাকতাম। ’
শুরুটা স্থানীয় ফুলচাষি শের আলীর হাত ধরে। তাঁর কাছ থেকে রজনীগন্ধার বীজ এনে ইজারা নেওয়া ১০ কাঠা জমিতে ফুলচাষ শুরু করেন। স্বামী লোকমান হোসেনও শ্রম দেন। খেতের ফুল ফুটল, বিক্রি শুরু হলো।
লাভের টাকায় পরের বছর এক বিঘা; তার পরের বছর তিন বিঘা জমিতে চাষ শুরু করলেন বারিছন।
বারিছনের ভাষায়, ‘ওই যে লাইন পাইয়ে গিলাম। আর পিছনে তাকাতি হয়নি। এখন লাখ লাখ টাকা আয় করতি পারি। খরচও করতি পারি।
’
বারিছন জানান, স্থানীয় গদখালী পাইকারি ফুলের বাজারে সারা বছর অন্তত দুই লাখ টাকার ফুল বিক্রি করেন তিনি। ফুল উৎপাদন করতে যে টাকা খরচ হয়, তার তিন গুণ লাভ হয় বলেও তিনি জানান। এ বছর ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ৮৫ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেছেন। আশা করছেন, সামনে পয়লা বৈশাখেও ভালো ব্যবসা করতে পারবেন।
বারিছনের সাফল্য দেখে গ্রামের অনেকেই ফুল চাষ পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
বারিছন বেগমের জীবনে এখন ফুলের সুবাস বইছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।