দ্বিতীয়বারের মতো বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান হিসেবে সম্প্রতি নিয়োগ পেয়েছেন এম শেফাক আহমেদ। অ্যাকচুয়ারি ডিগ্রিধারী এই চেয়ারম্যান দেশের বিমা খাতের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে
প্রথম আলো: বিমা খাতের সার্বিক পরিস্থিতি কী? দ্বিতীয়বারের মতো আইডিআরএর চেয়ারম্যান হওয়ায় এই খাত কীভাবে উপকৃত হতে পারে?
শেফাক আহমেদ: বিমা খাতের সার্বিক পরিস্থিতি খুব ভালো বলা যাবে না। তবে বিমা গ্রাহকদের স্বার্থ সংরক্ষণে আইডিআরএর বেশ কিছু পদক্ষেপে তিন বছরে পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। অনেক বিশৃঙ্খল ছিল এই খাত। কিছু শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে, আরও আসবে।
দাবি পরিশোধে দীর্ঘসূত্রতা ছিল বিমা খাতে। এটা অনেক কমেছে। বেশ কিছু সংস্কার গ্রহণ করা হয়েছে। আরও অনেক কিছু করতে হবে। দীর্ঘ বছরের পুঞ্জীভূত অচলায়তন ভাঙা ছিল সময়ের দাবি।
আগের তিন বছরে যত দূর সম্ভব তা ভাঙার চেষ্টা করেছি। এবার আরও বলিষ্ঠ হব। কারণ, আইডিআরএর সদস্য হিসেবে এবার দুজন অভিজ্ঞ বিমা ব্যক্তিত্বকে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। তাঁদের সহায়তায় শিগগিরই প্রয়োজনীয় সংস্কারকাজে হাত দেব। আমি চাই দেশের বিমা খাতের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে।
প্রথম আলো: আগেরবার কিছু পদক্ষেপ নিয়েও পরে হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন বলে অনেকে মনে করেন। বিষয়টা আসলে কী?
শেফাক আহমেদ: সত্যি বলতে কি, আগের মেয়াদে একেবারে শুরু থেকে শুরু করতে হয়েছিল। সহকর্মীরাও বিমাশিল্পের লোক ছিলেন না। তবু বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছিল। এতে ফলও আসছিল ভালো।
কিন্তু পরে আমার তৎকালীন সহকর্মীরা কী কারণে যেন উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। প্রয়োজনীয় জনবল না থাকার অজুহাতে নতুন কোনো সংস্কারকাজ তো দূরের কথা, চলমান কাজেও তখন অনীহ থাকেন তাঁরা। সংগত কারণেই তখন অনেক সংস্কারমূলক পদক্ষেপই মুখ থুবড়ে পড়ে। তবে বর্তমান সদস্যরা বিমা খাতে অভিজ্ঞ। আমি খুবই আশাবাদী যে, ভবিষ্যতে যেকোনো পদক্ষেপই বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হব।
প্রথম আলো: বিমা খাতের অভিজ্ঞরাই বলেন যে এই খাতের প্রধান বিষফোড়া বাকি ব্যবসা ও বেআইনি উচ্চ কমিশন। আপনি কি এটা স্বীকার করেন?
শেফাক আহমেদ: আলবত স্বীকার করি। ২০১২ সালের মাঝামাঝি থেকে বাকি ব্যবসা ও উচ্চ হারে কমিশন বন্ধে শাখা কার্যালয়সহ বিভিন্ন কোম্পানি নিয়মিত পরিদর্শন শুরু করা হয়েছিল। যেসব শাখায় অনিয়ম ও বেআইনি কার্যকলাপের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছিল তখন। ফলে বাকি ব্যবসা ও উচ্চ কমিশন অনেকটা কমে এসেছিল।
এতে কোনো কোনো কোম্পানির পর্ষদ সদস্যরা নাখোশ হলেও একবাক্যে সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন বিমা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা। কিন্তু ২০১২ সালের শেষের দিকে আমার সহকর্মীরাই হঠাৎ আবিষ্কার করলেন যে বিমা আইনে আইডিআরএকে জরিমানা আরোপের ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। আইনি মতামত নিয়ে পরে তা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হয়েছে। সেটিকেও বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। তিন বছরই আইডিআরএকে চলতে হয়েছে ভেতর-বাইরের দুষ্টচক্রকে এড়িয়ে।
বলা যায়, অভ্যন্তরীণ বিরোধিতার কারণেই অতি প্রয়োজনীয় এই কার্যক্রমটি বন্ধ হয়ে যায়। সমস্যা নেই, এখন আবার তা শুরু হবে।
প্রথম আলো: যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রায়ই বলেন, বিমা খাতে অনেক বেশি দুর্নীতি রয়েছে, সেই অর্থমন্ত্রীই আইডিআরএর চেয়ারম্যান হিসেবে আপনাকে নিয়োগ দিয়েছেন।
শেফাক আহমেদ: অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিমত করার কোনো অবকাশ নেই। সামগ্রিক অর্থনীতির বলিষ্ঠ অংশ হিসেবে এই খাতেও দুর্নীতি আছে।
তবে এই খাতের দুর্নীতি অনেকাংশে কমিয়ে আনার পদক্ষেপ শিগগিরই শুরু হবে। গোটা বিমা খাতকে আনা হবে নিবিড় নজরদারির আওতায়। এই খাতের সব কার্যক্রমকেই ডিজিটালাইজড করা হবে। প্রযুক্তির উৎকর্ষ বিমা খাতের দুর্নীতির সুযোগ সংকুচিত করবে।
প্রথম আলো: দেশের বিমা কোম্পানিগুলোকে নতুন নতুন পণ্য আনার ব্যাপারে আইডিআরএ কি সহযোগিতা করতে পারে?
শেফাক আহমেদ: উন্নত বিশ্বে বিমা এক নতুন মাত্রায় উন্নীত খাত।
আইডিআরএর চ্যালেঞ্জ হলো বাংলাদেশেও তা করা। বহির্বিশ্বে ব্যক্তিজীবনের সময়ের বাস্তবতাকে লক্ষ্য রেখে জীবনবিমার ক্ষেত্রে চালু হয়েছে বিনিয়োগবান্ধব নতুন নতুন প্রকল্প। বাংলাদেশেও তা হবে। বিমা কোম্পানিগুলোকে এ জন্য কারিগরি সহায়তা দেওয়া হবে। আর সাধারণ বিমার ক্ষেত্রে (নন-লাইফ) স্বাস্থ্যবিমার দুটি প্রকল্প এই মুহূর্তে আইডিআরএর বিবেচনাধীন আছে।
ব্যক্তি ও অর্থনীতির চাহিদা অনুসারে আরও নতুন নতুন প্রকল্প চালু হবে।
প্রথম আলো: আগামী দিনের বিমা খাত সম্পর্কে কিছু বলুন।
শেফাক আহমেদ: বিমা খাত জাতীয় অর্থনীতির একটি বলিষ্ঠ অংশ এবং আগামী দিন বিমা খাতের। অর্থনীতির উন্নতির জন্যই এই খাতকে তার নির্ধারিত ভূমিকা পালনে প্রস্তুত করতে হবে। এই খাতের জন্য দরকার এখন প্রশিক্ষিত জনবল।
বিমা খাতের অনেক দুর্গতির জন্য প্রশিক্ষিত জনবলের অভাবও অন্যতম কারণ। অন্য যেকোনো খাতের তুলনায় এই খাত বেশি বিশেষায়িত। একসময় অন্য কোথাও ভালো কিছু করতে না পেরে অনেকে এই খাতে চাকরির জন্য আসত। সেই দিন এখন নেই। আমি দেখতে পাচ্ছি, মেধাবীরা চাকরির জন্য প্রথম পছন্দের খাত হিসেবে বিমাকে বেছে নেবে।
সেই দিন খুবই নিকটতর। এই মেয়াদে বিমা খাতের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরির জন্য মনোযোগী হব। আগেরবার যেমন বিরক্ত করেছে, কিছু দুষ্টলোক এবারও তা করতে পারে জেনেও আমি বিমা খাতের জন্যই কাজ করে যাব।
[সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফখরুল ইসলাম]
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।