বুকশেলফ ঘেটে হঠাৎ সেদিন হুমায়ুন আহমেদের "বোতল ভূত" বের করলাম। এই বোতল ভূত দিয়েই কৈশরের এক স্বর্ণসময়ে আমার বই পড়ার এক ঘোর লাগা নেশা শুরু । কোত্থেকে এক বোতলভূত এসে যেন আমাকে নিয়ে গেল কৈশরের এক অনন্য দিনে যেদিন আমি তাকে প্রথম দেখি।
ক্লাস সেভেনে বা এইটে পড়ি তখন। বইমেলা শুরু হয়েছে আমার "বিভাগীয় মফস্বল" শহর রাজশাহীতে।
খবর পেলাম আমার স্বপ্নের মানুষ এসেছেন সেখানে। বই কেনার থেকে বড় চাওয়া ছিল তাকে একনজর দেখা। যেহেতু বইয়ের ফ্ল্যাপে এখনকার মত লেখকের ছবিও সহজলভ্য ছিলনা। তাই তাকে ছবিতেও তেমন একটা দেখিনি। প্রথম দেখাই একেবারে লাইভ!
মাটির ব্যাংক ভাঙলাম।
সাকুল্লে ৭০ টাকা হলো। ভাবলাম,যাক! মেলায় যাওয়া আসা খরচ মিটিয়ে অন্ততঃ একটা বই তো কেনা যাবে।
সাইকেল চেপে দুই বন্ধু হাজির হয়ে গেলাম মেলায়। ভীষন ভীড় দেখলাম একটা স্টলের সামনে। সাথে থাকা বন্ধু জানাল ডিসি সাহেব আসার কথা মেলা উদ্বোধনে।
বুঝে গেলাম সেক্ষেত্রে সামনের অল্প ভীড়ের মাঝেই মধ্যমনি হয়ে আছেন আমার স্বপ্নের লেখক। "আমার ছেলেবেলা" বইটা কিনে সেই ভীড়ের মাঝে মাথা গলিয়ে দিলাম বাসনা অটোগ্রাফ নেয়ার সুপ্ত বাসনা নিয়ে । আর সুযোগ বুঝে বইটা এগিয়ে দিয়ে বললাম,
"স্যার,আপনার লেখা আমার খুব ভাল লাগে। "
"এ জন্যই বুঝি হুমায়ুন আহমেদের বই কিনেছেন। "-আমার হাতের বই দেখে বললেন স্বপ্নপুরুষ!
"স্যার, আপনার বহুব্রীহি নাটকটাও যা ছিল না।
" গদগদ হয়ে গেলাম আরো।
আশপাশের লোকজন মুখ চেপে হাসা হাসি শুরু করল।
"আসলে হয়েছে কি,আমিতো হুমায়ুন আহমেদ না। আমি ইমদাদুল হক মিলন। তুমি কি আমাকে চেন?" নির্বিকার হয়ে জানালেন "ভুল হুমায়ুন আহমেদ।
"
"হ্যাঁ চিনি। "- ঘটনার আকষিমকতায় থ' মেরে গেলাম। লজ্জায় মাটির নিচে ঢুকে যেতে পারলেই যেন বাঁচি। এটাও বলতে পারলাম না যে আপনার "ও রাধা ও কৃষ্ন"সহ আরো ক'টা বই পড়ে ফেলেছি। পাছে আবার লজ্জা পাই এই বয়সেই বড়দের বই পড়েছি বলে।
তারপরও মিলন নির্বোধ এক কিশোরের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে অটোগ্রাফ দিলেন। লিখলেন:
"হুমায়ুনের পাগল ভক্তের জন্য শুভেচ্ছা"-ইমদাদুল হক মিলন।
শয়তান বন্ধুটা পাশে এসে বলল, শোন, দুই রাইটারের স্মৃতি এক বইতেই থাকল, দুঃখ কিসের! যা এবার সামনে যা। পারলে দেখে আয়। আপাতত রাগ ভুলে আমি আবষ্কার করলাম তার কথিত "বড় জটলার ডিসি সাহেবই" আসলে হুমায়ুন স্যার।
একটামাত্র বই অটোগ্রাফড্ হয়ে যাওয়ায় ব্যাথিত হৃদয়ে বড় জটলার দিকে এগিয়ে চললাম।
(অপরবাস্তব-৭ এর জন্য লেখা) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।