২৩ শে নভেম্বর, ২০১২ থেকে আমার ব্লগিং শুরু আমলা মানেই জনগনের কামলা। তারা তো আর মন্ত্রী এমপিদের মতো জনগনের সেবক নয়। মন্ত্রী আবুল হোসেনের সাথে মিলিয়ে ঝিলিয়ে চুরি চামারি করার সময় হতভাগা সচিব সাহেবের এ বিষয়টা কি একটু ভেবে দেখা উচিৎ ছিলোনা? যাহোক যা হবার তা তো ঘটেই গেছে।
এখন অবশ্য স্কেপগোট (বলির পাঁঠা) হিসাবে তাকে খারাপ দেখাচ্ছে না। অনেকে অবশ্য রসিকতা করে বলছে নিজের পছন্দের সরকারের হাতে ওএসডি হওয়ার মজাই আলাদা।
বিএনপি জামায়াত পন্থি আমলারা (যাদের ইতিমধ্যে এটি চেখে দেখার সুযোগ হয়েছে) অবশ্য এই মজা থেকে বঞ্চিত। কেননা তাদের ক্ষেত্রে ওএসডি লাড্ডুর পরিবেশনটা এতো সোহাগী ছিলোনা। ঐ ক্ষেত্রে সরকারের মনোভাব ছিল অনেকটা ধর তক্তা মার পেরেক টাইপের। হাতে না পাইতেই মুখে লাড্ডু গিলা সারা। তাই সে স্বাদ উপভোগের ফুসরৎটি তাদের কোথাই।
এক্ষেত্রে সম্মানিত সচিব মোশাররফ সাহেবের ব্যাপারটি একেবারেই আলাদা। ফাইনাল ঢোক দেওয়ার আগে মুখের মধ্যে রাখার অনেক সময় পেয়েছেন তিনি। প্রসঙ্গক্রমে আমাদের গ্রামের ফজো শাহ’র কথা মনে পড়ে গেলো। বেচারা খুব মিষ্টি পছন্দ করতো। তবে মিষ্টি কিনে কখনোই সে এক ঢোকে সাবাড় করতো না।
ঘন্টা দুয়েক মুখের মধ্যে রেখে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে অনর্থক সময় ক্ষেপন করতো। এ সময় পারত পক্ষে কারও সঙ্গে কথা বলতো না। তারপর ঢোক গিলে আমাদের দিকে মুখ ভেংচিয়ে বলতো “গেলো গেলো এবার স্বাদটা একেবারেই গেলো! তয় বুঝলে তো সময় ক্ষেপনের স্বার্থকতা টা কোথায়। ”
যাহোক ফজো শাহের মিষ্টি খাওয়ার পদ্ধতিটা আমরা আমজনতা ঠিক মত বুঝতে না পারলেও অনেক দিন ছুটি কাটিয়ে এই পর্যায়ে এসে আমাদের সম্মানিত সচিব সাহেব হয়তো ওএসডি খাওয়ার মজাটা ঠিকই ঠাহর করতে পেরেছেন। যাহোক ব্যাপার না।
অনেক রসিক পুরুষের কাছে নাকি প্রিয়তমার হাতের থাপ্পড়ও মধুর লাগে। তাই মন খারাপ না করে আবুলের মতো সবসময় চওলের উপর রসবোধের ভাব ফুটিয়ে রাখুন দেখবেন আপনাতেই সব ঠিক হয়ে যাচ্ছে। অবশ্য আবুলের সেন্স অব হিউমারের উপর আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া দেশপ্রেম খেতাবের একটা প্রছন্ন প্রভাব আছে। অনেকটা মেন্ডেলের বংশগতির প্রথম সূত্রের মত ( the law of segregation of characteristics)।
আমাদের গ্রামের আরও একটা মজার ঘটনা বলি।
সেখানে কারও বিয়ে হলে বিয়ের অন্তত ১৫ দিন আগে থেকেই শুরু হতো মজার মজার সব ইভেন্ট। সেগুলোর একটিও এখনকার শহুরে সমাজের মোজ মাস্তির সাথে মেলেনা। ঐ ইভেন্ট গুলো ছিলো একেবারেই নিজদের বা পূর্বপুরুষদের তৈরী সাদামাটা ধরণের কিন্তু দারুন উপভোগ্য। এই যেমন বিয়ে উপলক্ষে একত্রিত হওয়া ছোট ছোট পিচ্ছি পাচ্ছা ছেলে মেয়েদের নিয়ে পুকুরের জল ঘোলা করে একঙ্গে হোলি খেলা। আর আইবুড়াদের কাদাখেঁড় খেলাটা ছিলো দারুন।
বিশাল এলাকা নিয়ে মাটি কেটে তাতে পানি ঢেলে তৈরী করা হতো কাদাখেঁড়ের মাঠ (স্টেডিয়াম)। তারপর যে যার মতো যাকে পারে ধরে জোর পূর্বক ফেলে দিত ওই কাদার মধ্যে। শুধু তাই নয়, দু’তিনবার গড়াগড়ি না খেয়ে ঐ মাঠ থেকে কেউ কখনো উঠতে পেরেছে এমন নজির একেবারেই নেই বললে মিথ্যা হবেনা। আর রাত হলে তো কথাই নেই। পাড়ার মেয়েদের দল বেঁধে গান গাওয়ার ঢং এবং তা শোনার রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার কাছে এখনকার রক বা হিপহপ একেবারেই ফালতু।
আর এসব আয়োজনের শেষ গিয়ে মিলতো একেবারে ঠিক বর-কনের বহু প্রতীক্ষিত বিবাহ বন্ধনের মুহূর্তটিতে।
যাহোক গাঁও গ্রামের এত রঙ, ঢং আর কাদাখেঁড়ের পর অবশেষে প্রতীক্ষিত সানাইয়ের বাদ্যটি সাধারণত বেজে থাকলেও আমাদের জাতীয় পর্যায়ের পদ্মা ব্রীজ নির্মাণের শুরুর কাঙ্খিত মুহূর্তটি কিন্তু এখনো জাতির অধরাই রয়ে গেছে। তদন্তের নামে কত জল ঘোলা হয়েছে। মন্ত্রীত্ব ও পদবী কেড়ে নিয়ে ছুটিতে পাঠানোর এই কাদাখেঁড়ের খেলায় অনেককেই গড়াগড়ি দেওয়ানো হয়েছে। দুদকের বিন্দুমাত্র দূর্নীতি না হওয়ার গানও তো কম বাজানো হয়নি।
কিন্তু হায় জাতির কপালে পদ্মা সেতু এখনো জুটলো না। জুটবে কি করে বিয়ের আসরে হবু বধুর সামনে বরের স্যাকা খাওয়া প্রেমিকা বাধ সাধলে যা হয়। তাই স্রেফ রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারের স্যাকা খাওয়া (দায়ীত্ব খুয়ানো) মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রীদের যদি এখনই মামলার শিকলে আটকানো না হয় তাহলে শেষ মুহূর্তে এরাই যে ঐ রূপটি পরিগ্রহ করবেনা সেই আশংকা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায়না। আর যদি তেমনটিই হয় তবে এতদিন জনগণকে সামনে রেখে যেসব নাটকের মঞ্চস্থ করা হলো সেগুলোর তাৎপর্য সবই ফিকে হয়ে যেতে বাধ্য।
পরিশেষে বলি, আমাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেছে।
মান সম্মান অনেক খুঁইয়েছি। দিনের পর দিন লজ্জার মাথা খেয়ে এখন আর সরকারের কাছে নতুন কিছুই শুনতে চাই না। তাই তাদের কাছে এখন একটাই দাবী পথের বাকী কাঁটা গুলো অনতিবিলম্বে সরিয়ে তৈরী করা হোক আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতুর নির্মাণের নিশ্চয়তার পথ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।