আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্বজিতের অদেখা পৃথিবী

কাজ করি সত্তিকারের মানুষের তরে । ৮ই ডিসেম্বর ২০১২, বিশ্বজিত নিয়মিত কাজ শেষে বন্ধুদের সাথে গল্প করতে করতে ফিরছিল; গল্পের বিষয় আরকিছু নয়, তার কচি মনে কাচাঁ প্রেমের গল্প । কাল হরতাল কাজের তেমন চাপ নেই তাই কাল আর ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানটি খোলবেনা বলেই মনস্থির করল, কাল বরং দেখা করবো জোছনার সাথে । কথা গুলি বলতে বলতে সে তার মুটু ফোনে নিশ্চিত করেনিল জোছনার সাথে দেখাকরার স্থান ও সময় । সারা দিনের খাটুনি শেষে এই পবিত্র ভালবাসা টুকুই প্রেরণা যোগায় আগামী দিনে কাজ করার ।

পাশাপাশি বসা, নিবিরে দুটি কথা বলার মধ্যে দিয়েই মিঠিয়ে নেয় বিনোদনের পর্ব বিশ্বজিতের মত হাজারও যোবক। সমাজের উচুতলার মানুষ গুলির মত সে পারেনি হোটেলে মদ্যপানে গা ভাসিয়ে হাজারও নারীর স্পর্শ নিয়ে বিনোদন করতে, হয়তো তার নেই সামর্থ অথবা নেই তাদের মত কু-রুঁচি । রাতে বেলায় বিছানায় গা ভাসিয়ে জোছনাকে নিয়ে ছোট্র একটা নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেছিল, একদিন দু-জনে মিলে পারিদিবে জীবনের বিশাল সমুদ্র, সুখে-দুঃথে দুজনে থাকবে পাশাপাশি; ছোট্র এটা সংসার হবে, যেখানে থাকবে কিছু অভাব, কিছু অভিমান কিন্তু ভালবাসা থাকবে কানায় কানায় পরিপুর্ণ । এসব স্বপ্নের ফাঁকে দেখেছিল আগামী দিনের বিকেলের মৃদু বাতাসে ছড়িয়ে যাওয়া জোছনার চুলের গন্ধের আবেশ; পরন্ত আলোয় জোছনার তামাটে সুন্দর মুখ খানি । ভোর বেলায় ঘুম থেকে জেগে মায়ের সাথে গল্প করছিল ফোনে-" মা তোমায় ছেড়ে ঢাকায় থাকতে আমার ভিষন কষ্ট হয়, কিন্তু কি করব মা এখানে তুমি একা থাকতে পারবেনা , মা হাসঁতে হাসঁতে বলেন " তাহলে আরেক জনকে নিয়ে আসলেইত আমি তুর কাছে এসে থাকতে পারি, মায়ের কথায় সায় দিয়ে বিশ্ব বলছিল হ্যা মা আজ সে খুজেঁই যাব, মা বিশ্বজিৎকে বাড়ী যাওয়ার কথা বললেন, ছেলেকে রেখে মা, বোন কেউই শিতের পিঠা খাননি, এইতো আর ক'টা দিন মা আমি বাড়ী আসছি দেখবে তোমার জন্যে আরোকিছু নিয়ে আসব ।

এই মূহুর্থেই আরও একটি কল আসল; বিশ্ব মায়ের কাছে বিদায় নিয়ে ফোনটি ধরল, তার ব্যাবসার একজন ক্রেতার ফোন, খুব জরুরী দরকার তাই পোষাকটা ডেলিভারী দিতে হবে । ক্রেতার অনুরোধ রাখতে বিশ্বজিৎ তাড়াতাড়ি করে গোসল শেষ করে গত পুঁজুয় মায়ের দেয়া লাল টকটকে সার্টটি পড়ল । গায়ে একটু সু-গন্ধ মেখে বের হল, আজ দেখা করবে তার স্বপ্নের মানুষটির সাথে। বাসার গলি পথটি পেরিয়ে মনের আনন্দে গুন গুন করে গান করতে করতে মূল রাস্তায় উঠল । রাস্তা ফাঁকা মাঝে মধ্যে দু-একটা রিক্সা টুংটাং বেল বাজিয়ে চলাচল করছে ।

একটা রিক্সা করে বিশ্ব শাখারী বাজারের দিকে যাচ্ছে, বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে এসে দেখল কিছুটা জটলা, মনে হচ্ছে রিক্সা নিয়ে আর এগুনো যাবেনা, তাই হেঁটে যাওয়ার মনস্থির করে নেমে যাচ্ছিল, এমন সময় এক দল যোবক তাকে ধাওয়া করে । যোবকেরা বয়সে প্রায় তার সমপর্যায়ের, উচ্ছমহলের কাছে প্রিয়পাত্র হতে বা নিজেদের ক্ষমতাকে উপরের ক্ষমতাধরদের বুঝাতে প্রানপনে ছুঠল একটি নিরিহ ছেলের পিছনে । বিশ্ব ধর্মীয় মতাদর্শে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও প্রান বাঁচাতে ও আক্রমণকারীদের কাছে খোদার কছম করে চিৎকার করছিল তাদের বিশ্বাস করাতে যে সে কোন রাজনৈতিক দলের নয়; কিন্তু তার নিয়তী এতটাই খারাপ ছিল যে নিজেদের অবস্থান দেখাতে বিশ্বের অর্তনাত কানে যায়নি । অসহায় বিশ্বজিৎ বাঁচার জন্যে ছুঠে যায় পাশের বিউল্ডিং এর দু-তলায়, সেখানেও সে রেহায় পায়নি, পিটিয়ে নীচে নামানো হয়, নীচ থেকে দৌড়ে পালানোর সময়ও পিছন থেকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করা হয় । মায়ের উপহার দেয়া লাল শার্টটি যেন অরও রক্তিম হয়ে উঠে; কেউ এগিয়ে আসেনি হায়নাদের হাত থেকে রক্ষা করতে; এ যেন ৭১ এর প্রযন্ম, রক্তে রয়েগেছে সেই নারকীয়তা ।

৭১ এ ছিল রাজাকার যারা দিনের বেলায় জন সন্মুখে থুন, রাহাজানী করতো, আজ তার বিচার হচ্ছে, সমাজ, দেশ মুক্ত হচ্ছে কলংকের হাত থেকে কিন্তু যারা স্বাধীন দেশে থেকে স্বাধীন সরকারের মদদে সকলের সন্মুখে মিডিয়ার সন্মুখে খুন, রাহাজানি করছে তাদের বিচার কি আগে করা দরকার না? আর যারা এদের তৈরী করছে তাদের কি করা উচিত? তাদের মুখেই যখন ফেরেশাসদের হয়ে সাফাই গাইতে দেখা যায় তখন কি করা উচিত বলে মনে হয়? যাদের মদদে বিশ্বজিৎ পারেনি তার স্বপ্নে পৃথিবীকে দেখতে । পারেনি মায়ের হাতের পিঠা খেতে, পারেনি জোছনার হাতের স্পর্শ পেতে তাদেরকেই আমরা দেশের পতাকা দিচ্ছি পুনরায় আরেকজন বিশ্বজিৎকে হত্যা করতে। আজ বিশ্বজিৎ স্বর্গে ঃ বিশ্বজিৎ স্বর্গ থেকে তুমি তাকিয়ে দেখ, তোমার কল্পনায় সাজানো পৃথিবী আজ কেমন উত্তাল, রাত জেগে স্বর্গের জানালা দিয়ে একটু বাহিরে তাকিয়ে দেখ তোমার জোছনা আলো হয়ে তোমায় স্পর্শ করবে, এই স্বার্থবাদি সমাজতো তোমায় দেয়নি বাঁচতে, দেয়নি জোছনার স্পর্শ নিতে, তাই তুমি আজ স্বর্গ থেকে উপভোগ কর আমাদের করুন অবস্থা । তুমি ভাল থেকো, তোমার জোছনা তোমার জন্যে আকাশে তাঁরা হয়ে আছে । উক্ত লিখাটি বিশ্বজিৎকে নিয়ে একটি কাল্পনিক চরিত্র তৈরী করা হয়েছে মাত্র ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।