আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্বজিতের দেহে চাপাতির কোপ খুঁজে পায়নি ফরেনসিক বিভাগ !!!

পুলিশের পথ অনুসরণ করেছে হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও এবং স্থিরচিত্রে হামলাকারীরা শনাক্ত হলেও পুলিশের রিপোর্টে তারা ছিল ‘অজ্ঞাত’। ঠিক একই ভাবে রড, লাঠি দিয়ে পেটানো ও চাপাতি দিয়ে কোপানোর দৃশ্য দেখা গেলেও হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা নিহত বিশ্বজিতের শরীরে ওইসব অস্ত্রের কোন আঘাত খুঁজে পাননি। ধরা পড়েনি কিল-ঘুষি ও লাথির জখম!! বিস্ময়কর হলেও এমন প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছেন মিটফোর্ড হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের একজন চিকিৎসক। অথচ ভিডিও চিত্রে অসংখ্যবার দেখা গেছে, চাপাতি শাকিল উপর্যুপরি কোপাচ্ছিল বিশ্বজিতের শরীরে।

রাশেদুজ্জামান শাওন পেটাচ্ছিল রড দিয়ে। তার সঙ্গে ছিল মাহফুজুর রহমান নাহিদ, নূরে আলম লিমন, রাজন, ওবায়দুল কাদের, তাহসিন কাদের ও ইউনুছ। তাদের সবাইকে রড ও লাঠি হাতে বিশ্বজিৎকে পেটানোর দৃশ্য গণমাধ্যমে ধরা পড়েছে। এছাড়া শনাক্ত হওয়া বেশির ভাগ আসামি গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রড, লাঠি দিয়ে পেটানো ও চাপাতি দিয়ে কোপানোর কথা স্বীকার করেছে। কিন্তু চিকিৎসকের পোর্স্টমর্টেম রিপোর্টে সেই শাকিলের চাপাতির আঘাত খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মিটফোর্ড হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের একজন চিকিৎসক বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে বিশ্বজিতের শরীরের ২০-২৫ জায়গায় আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। রক্তাক্ত ক্ষত স্থানসহ অসংখ্য ফোলা-জখমের দাগ ছিল লাশের দেহে। এ সংক্রান্তে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পুলিশের প্রাথমিক সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল। এছাড়া লাশ কাটায় নিয়োজিত কর্মচারীরা (ডোম) বিশ্বজিতের শরীরে পৃথক অস্ত্রের পৃথক আঘাত শনাক্ত করেছিলেন। কিন্তু ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকের চূড়ান্ত ময়না তদন্তের প্রতিবেদনে তা গোপন করা হয়েছে।

তার ধারণা, হামলাকারীদের বাঁচাতেই এমন তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। গতকাল মিটফোর্ড হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের পোস্টমর্টেম রিপোর্টের নথিপত্র অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, বিশ্বজিৎ দাসের ময়না তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছেন ডা. মাকসুদুর রহমান। রিপোর্ট নম্বর ৪৬৭/১২। রিপোর্ট তৈরির তারিখ ১৫ই ডিসেম্বর/২০১২। রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন, পিঠের ডান পাশে ৩ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য ও দেড় ইঞ্চ প্রস্থের একটি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

বাম পা থেঁতলে গেছে। মৃত্যুর কারণ অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ। এর বাইরে আর কোন তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিটফোর্ড হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক ডা. মাকসুদুর রহমান কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। পরে কয়েক দফায় মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ‘পরে কথা বলবো’ বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এ প্রসঙ্গে ওই হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক বলেন, চাঞ্চল্যকর যতগুলো হত্যাকাণ্ডের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে এগুলোর মধ্যে বিশ্বজিতের প্রতিবেদনটি সবচেয়ে সংক্ষিপ্ততম। এ রিপোর্টে বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। রিপোর্টের বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদারক কর্মকর্তা ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বলেন, ময়না তদন্তের রিপোর্ট মাত্র হাতে পেয়েছি। রিপোর্টে উল্লেখ করা বিষয়গুলো এখন নিবিড়ভাবে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। সূত্রমতে, শুরু থেকেই হামলাকারীদের বাঁচাতে বিশেষ মহল মরিয়া।

ঘটনাস্থলের অল্প দূরেই লালবাগ জোনের ডিসি হারুন-অর রশীদ তার পুলিশ বাহিনী নিয়ে উপস্থিত থাকলেও হামলাকারীদের হাত থেকে বিশ্বজিতের প্রাণ বাঁচাতে এগিয়ে যাননি। গুরুতর আহত ও রক্তাক্ত বিশ্বজিৎকে যখন এক রিকশাচালক হাসপাতালে নিয়ে যান, তখনও চিকিৎসকরা কার্যকর চিকিৎসাসেবা দেননি। এর প্রতিবাদে জড়িত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, নিহতের স্বজনদের ফিরিয়ে দিয়ে মামলার বাদী হন সূত্রাপুর থানা পুলিশের কর্মকর্তা। প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে আসামিদের সবাই চিহ্নিত হলেও পুলিশের এজাহারে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।

অজ্ঞাত হিসাবে ২০-২৫ সংখ্যা উল্লেখ করেন। সর্বশেষ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে কর্মরত চিকিৎসকদের মনগড়া রিপোর্ট নিয়ে এখন তোলপাড় শুরু হয়েছে। মামলার বাদী সূত্রাপুর থানার এসআই জালাল উদ্দিন বলেন, বিশ্বজিতের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা ও ফোলা জখমসহ অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন ছিল। সুরতহাল প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী মামলার এজাহার লেখা হয়েছে।

সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন এসআই জাহেদুল হক। তিনি বলেন, লাশের সুরত (চেহারা) যেমন দেখেছি তেমনই রিপোর্টে উল্লেখ করেছি। নিহতের সারা শরীর ছিল রক্তাক্ত। মাথা, হাত, পা ও পিঠসহ সারা শরীরেই অসংখ্য ফোলা ও কাটা জখমের দাগ ছিল। মানবজমিন ডা: মাকসুদ আপনার সন্তানকে যদি এভাবে কোপানো হতো তাহলে আপনি কি বলতেন জানতে ইচ্ছে করছে ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৪ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।