আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জার্মানির জার্নাল ২

সকালে হোটেলের রিসেপসনে ডাক পড়লো। ওলফ ওয়ান্ডারস নামে সিমেন্স থেকে একজন ভদ্রলোক এসেছেন। ওলফের সাথে রাতে কথা হয়েছিল। নিজেকে পরিচয় দিয়েছিলেন লিয়াজো অফিসার হিসাবে। রিসেপসনে এসে জানা গেল তিনি শুধু লিয়াজো অফিসারই নন, সিমেন্স ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের এক জন শিক্ষকও বটে।

তিনি আমাদের শেখাবেন হাইকম টেলিফোন এক্সচেঞ্জের নেট ওয়ার্কিং। ওলফের চেহারায় একটা সারল্য আছে, আর আলাপ চারিতায় আছে বন্ধুতা। পরিচয় পর্বের পর প্রত্যেককে একটি করে রেল পাশ আর পাতাল রেলের রূট ম্যাপ ধরিয়েদিলেন। রেলের পাশ বলার চেয়ে এটিকে যানবাহনের পাশ বলা ভালো কারণ এই পাশ দিয়ে পাতাল রেল সহ মিঊনিখ সিটি কর্তৃপক্ষ পরিচালিত যে কোন বাহনে একমাস যাতায়াত করা যাবে। ওলফ বলল ক্লাশ কাল থেকে শুরু হবে, আজ শুধু তোমাদের কে আমাদের ট্রেনিং সেন্টারটা চিনিয়ে দেব।

আমাদের ট্রেন ধরতে হবে সিলভারহর্ন স্ট্রাস থেকে। হোটেল থেকে দুই মিনিটের হাটার দূরত্বে সিলভার হর্ন স্ট্রাস। পাতাল রেলে আগে কখনও চড়িনি। প্ল্যাট ফর্মে নেমে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। জার্মানরা অত্যন্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।

তেমন ভীড় নেই। ট্রেন আসবে সাড়ে নয়টায়। হাতে মিনিট পনর সময় ছিল। ওলফের সাথে প্ল্যাটফর্মের বেঞ্চেবসলাম ট্রেনের অপেক্ষায়। বললাম তেমন কোন ভিড় দেখছিনা, এদিকে মানুষ কম আসে নাকি? ওলফ বলল, আমি ইচ্ছে করেই ভিড়ের সময়টা এভয়েড করেছি।

যদি আরও ঘন্টা খানেক আগে আসতে, তাহলে বুঝতে মানুষ কাকে বলে। অফিস টাইম, স্কুল টাইম কাছাকাছি বলে সকালে ভিড়ের জন্যে ট্রেনে ওঠাও অনেক কঠিন। কিছুক্ষণ পর একটা ট্রেন এল ষ্টেশনে, সাড়ে নয়টা বাজতে তখনও মিনিট পাঁচেক বাকি। ডয়েচেবানের (জার্মান পরিবহন/রেল) সময়ানুবরতিতার কথা শুনেছিলাম। তাই বলে পাঁচ মিনিট আগে ট্রেন আসবে ভাবি নি।

ট্রেনে ওঠার জন্যে তাড়াহুড়ো করে ঊঠে দাঁড়িয়ে দেখি ওলফ বসে আছে, ঠোঁটের কোনে রহস্যময় হাসি। বললো তোমাদের একটা কথা বলতে ভুলে গেছি, মিউনিখে গাড়ি বা ট্রেনে চড়ার আগে অবশ্যই দেখে নেবে তার রিখটুং (ডাইরেকশন) কোন দিকে। এই ট্রেন টা এসেছে সেন্ডলিঙ্গা টোরের দিক থেকে যাবে গিজিং, আর আমরা যাবো সেন্ডলিঙ্গা টোর। এই ট্রেনে ওঠা মানে উল্টো দিকে চলে যাওয়া। কোথাও রিখটুং চোখে পড়ল না।

দু এক জায়গায় জ্বলা নেভা করছিল আখতুং, সেদিকে ওলফের নজর ফেরাতেই মুচকি হাসলো সে, আখতুং!মানে এটেনশন!এর আসে পাশেই পাবে রিখতুং অথবা অন্যকোন সতর্ক বার্তা। ট্রেন এল ৯টা ২৯এ। দুই স্টেশন পর সেন্ডলিঙ্গা টোর। সিলভার হর্ন স্ট্রাসের মত দুই লাইনের নির্জন স্টেশন নয়। চার দিক থেকে পাঁচটি রেল লাইন এখানে এসে পাঁচদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ভিন্ন ভিন্ন উচ্চতার বেশ কয়েকটি প্লাটফর্ম, প্রতিটি তলায় আলো ঝল মল দোকাণ পাট, মানুষের ভিড়, শ্বাসের উত্তাপ সব কিছু নিয়ে সেন্ডলিঙ্গাটোর সিলভার হরণের চেয়ে অনেকই আলাদা। ওলফ জানালো সেন্ডলিঙ্গাটোরের মানে হচ্ছে সেন্ডলিঙ্গা গেট। আল্টস্টাড বা পুরনো মুঞ্চেনের দক্ষিণের তোরণ সেন্ডলিঙ্গাটোর। রাজা লূডউইগ ১৩১৮ সালে মুঞ্চেন নগরীর চারিদিকে নতুন করে প্রাচীর নিরমান করেন। সেন্ডলিঙ্গাটোর সেই প্রাচীরের দক্ষিন দ্বার।

টোর মানে দরজা। মাঝে মধ্যে সংস্কার হলেও তোরণটির নকসার তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে তোরণটিও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌছে গিয়েছিল । ১৯৮০ সালে নগর কর্তৃপক্ষ তোরণটি নতুন করে নির্মাণ করে। আমরা ইউ টু মানে ২ নম্বর লাইনের একটি ট্রেনে সেন্ডলিঙ্গাটোরে এসেছিলাম।

মেসাসেডাটওশট থেকে ফিল্ডমোচিং পর্যন্ত এই ট্রেনের যাওয়া আসা। সেন্ডলিঙ্গাটোর থেকে ফিল্ডমোচিং উত্তরে আর আমরা যাবো দক্ষিণের ষ্টেশন ওবারসেন্ডলিং। মোয়াস্ক হতে একটি লাইন সেন্ডলিঙ্গাটোর হয়ে যায় ফুয়েস্টেন্রিড ওয়েস্ট, ইউথ্রি হিসেবে পরিচিত এই লাইনটিই ছুঁয়ে যায় ওবারসেন্ডলিং। পাঁচটি স্টেশন পেরিয়ে আমরা ওবারসেন্ডলিং পৌছালাম মিনিট পচিশ পর। এটাকে বলা যায় দক্ষিণের শেষ স্টেশন।

এখান থেকেই পশিচমে ঘুরে লাইনটি শেষ হয়েছে দক্ষিণ পশ্চিমের ফুয়েস্টেন্রিড ওয়েস্টে। ওবারসেন্ডলিং নেমে অবাক হয়ে গেলাম। পুরো এলাকাটিই সিমেন্সময়। একটি বাস স্টপেজ আছে নাম সিমেন্সওয়েরক, আর আছে সিমেন্স হেডকোয়ারটারস, সিমেন্স ট্রেনিং ইন্সটিটিঊট, সিমেন্স জিম্নেসিয়া, সিমেন্স আবাসিক এলাকা, সিমেন্স রিসার্চ সেন্টার সহ কোম্পানিটির কয়েকটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। তিন মিনিট হেটে আমরা পৌছলাম সিমেন্স ট্রেনিং সেন্টার।

আমাদের ক্লাশ তিন তলায় ৩০২ নম্বর রুমে। ওলফের পিছে পিছে আমরা ১৪ জন ক্লাশে ঢুকলাম। ১৪ জোড়া টেবিল চেয়ার ছাড়াও রুমের চারিদিকের দেয়াল ঘেষে লম্বা টেবিল, সেখানে কম্পিঊটার এবং আনুষাঙ্গিক। টেলিফোন এক্সচেঞ্জের ৭টি প্যানেলও আছে রুমের একদিকে। সব কিছু স্বত্বেও রুমে হাটা চলার জন্যে যথেষ্ট জায়গা আছে, রুমটি এত বড়।

প্রতিটি টেবিলের ওপর একটি করে ম্যানুয়াল, ২টি ছাতা,১টি মগ আর কয়েকটি নোট বুক রাখা। ম্যানুয়াল আর নোট বুকের কারণ অনুমান করতে কষ্ট হবার কথা নয়, মগ আর ছাতার মাজেজা বোঝা গেলনা। হঠাত করেই ক্লাশের সামনে চলে গেল ওলফ, গম্ভীর মুখে বলল আজ আমরা শিখতে যাচ্ছি সবচে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তার কথায় মন খারাপ হয়ে গেল প্রায় সবার, একজন বলেও বসল তুমিতো বলেছো আজ ওরিয়েন্টেশন হবে, আবার পড়ানোর কথা আসছে কেন? ওলফের চোখের কোনে ঝিলিক দিয়ে ঊঠলো হাসির রেখা। বলল লেখা পড়ার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ তেমন কিছু নেই, তবে আমার ক্লাশে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হচ্ছে কফি মেশিনটা কোথায় আছে সেটা জানা।

টোমাদের টেবিলে কফির মগ দেওয়া আছে কফি খেতে চাইলে মগ নিয়ে আমার সাথে এস। আর হোটেলে ফিরে যাবার সময় ছাতা নিতে ভুল না। শীত শুরু হয়েছে, যখন তখন বৃষ্টি হবে। তখন ছাতাই তোমার বন্ধু। টেবিলের ওপরের বই খাতা কোন কজে আসবে না।

(অসমাপ্ত) [  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।