আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জার্মানির জার্নাল ৩

হাসান ভাই ১ হাসান ভাইকে দেখে মনে হচ্ছিল তিনি খুশি হননি। তাঁর নিমন্ত্রণেই আমাদের মুঞ্চেনার ফ্রিহিইটে আসা। আমাদের রিসিভ করতে তিনি ষ্টেশনেও এসেছেন অথচ আমাদের সাথে দেখা হবার পর থেকেই তাঁর মুখে রাজ্যের অন্ধকার। আমাদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী রুমন। সে বললো হাসান ভাই এর মন খারাপ নাকি? সে কথার উত্তর না দিয়ে হাসান ভাই বললেন আপনাদের সার্ট-টাই পরে আসতে বলেছিলাম না! মনে পড়লো হাসান ভাই বলেছিলেন, টিশার্ট টারট সাধারণ মানুষ পরে।

আপনারা কিন্তু ভাই সার্ট-টাই পরে আসবেন। আমার দেশি বন্ধু বলে কথা। এ ম্যান ইজ নন বাই দ্য কম্পানী হে কিপস। কথাটা সিরিয়াসলি নেওয়া হয়নি। হাসান ভাই এটাকে দেখছেন প্রেস্টিজ ইস্যু হিসাবে।

পরিবেশ হালকা করার জন্যে বললাম আপনিই তো বলেছেন মুঞ্চেনার ফ্রিহিইট মানে ফ্রিডম অব মিউনিখ। এখানে এসে একটু পোষাক আশাকের স্বাধীনতাও পাব না? ঝলমলিয়ে হেসে উঠলেন হাসান ভাই, কালো স্যুট পরা প্রায় শ্যমলা হাসান ভাইএর দাঁত গুলি ঝিক মিকিয়ে ঊঠল(মায়েদের চোখে ছেলে মেয়ে কালো হয় না, হয় উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণ)। - আপনার সাথে পারি না, কিসের সাথে কী ! একথা ঠিক ১৯৪৫এ নাতসী বিরোধীএকটি দল এখানে দুটি রেডিও স্টেশন দখল করে মুক্ত মিউনিখ ঘোষণা করেছিল। তাদের স্মরণেই ফেলিটজ প্লাটজের নাম বদলে রাখা হয় মুঞ্চেনার ফ্রিহিইট। পোষাকের কথা কেন বলে ছিলাম একটু পরে বুঝবেন বলতে বলতে আমাদের নিয়ে ওয়াগনারস্ট্রাসের দিকে রওনা দিলেন।

হাসান ভাইকে প্রথম দেখি টিটোর বাসায় ( সে গল্প শোনানো যাবে অন্য কোন সময়। ) টিটোদের চেয়ে বয়সে অনেক বড় হাসান ভাই। পোড় খাওয়া লোক, অনেক ঘাটের জল ঘেটে মিঊনিখে থিতু হয়েছেন প্রায় ৮ বছর। নাটকীয়তায় ভরা তাঁর জীবন, কথাও বলেন নাটকের সংলাপের মত। এক সময় আন্ডার গ্রাউন্ড রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।

সর্বহারাদের হয়ে অনেক অপারেশনেও অংশ নিয়েছেন। এখন মুঞ্চেন স্টাডসে (মিউনিখ সিটি কর্পোরেশন) কাজ করেন সপ্তায় ৫দিন, আর দুই দিন ফুল গোলাপ বেচেন মুঞ্চেনার ফ্রিহিটের নামকরা ডিস্কো পোডিয়ামে। টিটোর বাসায় পরিচয়ের দিনেই তিনি আমাদের দাওয়াত দিয়েছেন তার দ্বিতীয় কর্মস্থলে। ওয়াগনারস্ট্রাসে খুব দূরে নয়। তবে হেটে যেতে একটু সময় লাগল ক্রিসমাসের মেলার কারণে।

অনেক কাল আগে থেকেই প্রতি ডিসেম্বরে হস্ত শিল্পের মেলা বসে এই স্টেশনের বাইরের চত্বরে। হাসান ভাই পোডিয়ামে সবার পরিচিত সম্ভবতঃ তার চমতকার ব্যবহার আর ব্যক্তিত্বের কারণে। প্রথমে তিনি আমাদের নিয় গেলেন জ্যাকেট খুলে রাখতে সেখানে যেয়ে তাঁর মন খারাপের কারণ আরও বিষদ ভাবে বোঝা গেল। বললেন জ্যাকেট পরে আসবে সাধারণ মানুষ। আমার বন্ধুরা আসবে স্যুট পরে।

বুঝলেন না আভিযাত্যের একটা ব্যাপার আছে? হাসান ভাই এর কথা শুনে এনায়েত বলল ঠিক আছে আপনাকে আর ভাবতে হবে না, আমরা চলে যাচ্ছি। এনায়েতের কথায় বিব্রত হয়ে পড়লেন আমাদের মেজবান। বললেন ভাইরে আমার কাছে আভিযাত্যের চেয়ে বন্ধুত্ব অনেক দামি। আসেন ভিতরে যাই। পোডিয়ামে বেশ কয়েকটি রুম আছে।

একটি মঞ্চ আছে হল রুমে। প্রায় প্রতিদিনই সেখানে কোন না কোন নাম করা ব্যান্ড পারফরম করে। হালের বিখ্যাত জার্মান ব্যান্ড মুঞ্চেনার ফ্রিহিইটের জন্মও এখানে। আমরা গিয়ে বসলাম স্টেজ থেকে বেশ খানিকটা দূরে। হাসান ভাই বললেন কি খাবেন? জার্মানির সবচেয়ে ভাল বিয়ার লরেনবাউ।

এছাড়া সাউথ আফ্রিকার ক্যাসেল আছে, যদি শক্ত ধরণের কিছু নিতে চান তাও আছে। তিনি কি খাবেন আমি জানতে চাইলাম। এরই মধ্যে এক লাস্যময়ী তরুণি হাতে কয়েক রঙ্গের গোলাপ নিয়ে হাজির হল আমাদের সামনে। টেবিলে গোলাপ রেখে প্রথমেই সে জড়িয়ে ধরলো হাসান ভাই কে। হাসান ভাই পিঠ চাপড়ে দিল তার।

পরিচয় করিয়ে দিল আমাদের সাথে। ইটালির মেয়ে সোফিয়া, ইংরেজি তেমন জানে না। মাস ছয়েক এসেছে মিঊনিখে। হাসানের সাথে পরিচয় পোডিয়ামেই। বললাম - মেয়েতো আপনার হাটুর বয়সী।

- আমি তো সেটা বলেও মেয়েটাকে খসাতে পারছি না। - আপনাকে দেখে তো খারাপ লোক মনে হয় না। বিয়েওতো করেছেন শুনেছি। হাসান ভাই গম্ভীর হয়ে গেলেন। “ ভাইরে বিদেশে কত কী যে করতে হয়, আমি তো সারাদিন মাথা খাটাই বলতে পারেন মাথা খাটয়েই টিকে আছি”।

আমার অবাক হয়ে যাওয়া চেহারা দেখে বললেন মেয়েটাকে কাজ দিয়ে ছিলাম, তার অসহায় অবস্থা দেখে। কিন্তু গতিক দেখে মনে হচ্ছে সে আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। তাকে সব সময়ই বলি তোর বয়সী একটা মেয়ে আছে আমার দেশে। মেয়েটা তবুও আমার সাথে লেপ্টে থাকে। আমি পরে চিন্তা করে দেখেছি ওর নিরাপত্তার জন্যেই সে এটা করে।

অন্যরা মনে করে আমার ফিয়াঁসে, তাই ডিস্টার্ব করে না। আমাদের মুখোমুখি এক জোড়া ছেলে মেয়ে বসে ছিল আরেকটি টেবিলে। ছেলেটিকে চেনা লাগছিল। পরে মনে হল একদিন তাকে আমাদের রুম পরিষ্কার করতে দেখেছি। ইরাকি কুর্দি।

মিউনিখে এসেছে ভাগ্যান্বেষণে। সোফিয়া গোলাপ নিয়ে হাজির ওঁদের কাছে। হাসান ভাই বললেন সব গোলাপ এক নয়। আমার মনে হয় ওঁরা নেবে লাল গোলাপ। আমাকে বিস্মিত করে দিয়ে সত্যিই লাল গোলাপ নিল তারা।

আমার বিস্ময় দেখে মৃদু হাসলো সোফিয়া। কাছে এসে বললো, হোয়াইট মিন ইউ আর জাসত নোন, ইয়েলো সেজ ইউ আর গুড ফ্রেন্দস বাত নো ডিনার টুগেথার। উইথ রেড ইউ ক্যান কল ইউর ফ্রেন্দ ফর দিনার এন্ড হ্যাভ ফান। ইরাকি ছেলেটিকে রেখে মেয়েটি উঠে এল আমাদের টেবিলে। বলল ইরাকিই ছেলেটির কথা সে বুঝতে পারছে না।

কারণ ইরাকি ছেলেটি জারমান বুঝলেও ইংরেজি বোঝেনা। আর মেয়েটি বোঝে না জার্মান। বললাম দেন হোয়াই ডিড ইয়ু চুজ রেড রোজ? (অসমাপ্ত)  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।