আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নাগরিক গল্পঃ-০১ বিষন্ন কবি-মরা গাং আর উলটো জোয়ার

সবুজ বকুলগাছের ছায়ায় বসে আছে একা একা সাদা বিড়াল। আশে-পাশে ফ্লাটের দঙ্গল আর সুর্য দিন দুপুরেও দেখা যায়না। জানালার পর্দায় ঘেরা ঘরে কবি একা বসে; কবিতার খাতা সামনে না বলে বলা উচিত কবি বসে আছে কম্পিউটারের সামনে। বামে একটা ষ্ট্রে আর প্যাকেটে ভরা বেনসন পড়ে আছে অবহেলায়। বেজে উঠলো সেল ফোন সাথে সেই গানঃ জাগরনে যায় বিভাবরী-----আঁখি হতে ঘুম নিলো হরি-------মরি মরি--------------!! মনে মনে ভাবতে থাকে, এই রিং টোনটা পালটানো দরকার।

এখন হলো সকাল আর রিংটোন বাজছে রাতের গান। অবশ্য রবির গানের অনেকরকম অর্থ করা যায়। এ হলো এক মজা কিংবা এক সমস্যা। জ্বল জ্বল করছে কঙ্কনা নাম। -কি করছো? -কিছুনা; বসে বসে ঝিমাই! -অফিসে যাও নাই? -না কবিদের সব সময় অফিসে যেতে নেই।

-ওহো আমি তো আবার ভুলে যাই তুমি কবি!তুমি কবি কেন? কবিতার বই মানুষ কম কেনে! তুমি গল্প লিখো- কড়া কড়া রগ রগে গল্প। কঙ্কনা হাসতে থাকে। -আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি। বলেই হা হা করে হাস্তে থাকে। -কবিরা রেগে গেলে দুনিয়া তো আঁধার হয়ে যাবে কবি! হঠাত লাফ দিয়ে উঠে কবি।

আরে আজকেই তো আবার মিটিং আছে। থ্যাবড়া নাকের ফিলিপিনো মিঃ রনের সাথে। আরে সব তো রেডী থাকার কথা। অফিসে কল করা দরকার। এইদিকে আবার কঙ্কনা ফোনে।

এইসব সে আবার লক্ষী মেয়ে। বললেই ফোন রেখে দেবে। -শুনো; অফিসে কথা বলতে হবে। আমি পরে তোমাকে ব্যাক করছি। -বাই বলেই টুপ করে বন্ধ হয়ে গেলো সেল ফোন! ধুপ ধাপ সিড়ি টপকে অফিসের পথে কবি।

কুচকুচে কালো এম ডি সাহেব বসে আছেন। ঘুম ঘুম চোখে। দুই ল্যাপ্টপ খোলা। কবিকে দেখেই চেয়ে থাক্লো অবাকচোখে; তারপর চোখ টিপে বললেনঃ -কি আবার মিটিং? -হুম স্যার- মিঃ রনের সাথে। -চলো যাই, ব্যাটা রাজী হইছে? -হইছে স্যার! গাড়িতে উঠতে উঠতে সেল ফোন ভাইভ্রেশনে নিয়ে পকেটে চালান করে দিলো; আর বেন্সন হাতে নিয়ে নাড়া-চাড়া করতে থাকলো।

কবি জানে এই এসি গাড়িতে এম ডি স্যারের সামনে সিগারেট জালানো ঠিক হবেনা। না জালিয়ে চুপ চাপ হাতে ধরিয়ে বসে আছে কবি! এ সময়টা হলো ষ্ট্র্যাটেজিক চিন্তার সময়। কিভাবে কথা এগুবে কেউ জানেনা! কিন্তু কঠিনভাবে ঠোটে ঠোট চেপে ভাবছে কবি, আজকের মিটিংটা ভালোভাবেই শেষ করতে হবে। জিন্স আর টি-শার্টে কর্পোরেট জগতের মিটিং! নিজে নিজেই হাসছে কবি। কারন, সে নিজেও এই জগতের কেউ না।

শুধুই অতিথি! কিছু কাজ করে শুধুই টাকার জন্য। আহা! যদি অনেক আগে জন্ম নিতো তাহলে হয়তো দুঃখু মিয়ার মতো রুটি দোকানে রুটি বেলতে হতো। হঠাত কি ভেবে হো হো করে হেসে উঠলো কবি! অবাক চোখে চেয়ে থাকেন এম ডি সাহেব। তেল তেলে কালো! ঝুলে আছে ঠোঁট!চোখগুলো একটু লাল-লাল। কবি ভাবতে থাকে-এই অবাক লোক্টার সাথে তার ইউনির ভিসি আর ডঃ মুহাম্মদ জাফর ইকবালের লেখা সেই সফদর আলী’র কথা মনে পড়ে।

আর সেই ছাত্র জীবনে ভিসিকে মজা কইরা বলতো বিচি। কারন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বৃন্দ আসলেই ক্ষমতাসিন দলের বিচি হিসেবে কাজ করতেন কিংবা করেন। আর শুধুমাত্র ক্ষমতার জন্য তাঁরা আসলেই ক্ষমতাসীনদের বিচি হিসেবে কাজ করেন। সেই পাকিস্তান আমল থেকে যা চলছে তা আজো চলছে। শুধু কিছু রাজনৈতিক চাপাবাজি।

এই এক আজব সমস্যা কবি কিছুতেই ভুলেনা যে সে একদিন ছাত্র ছিলো; একদিন কবিতা লিখেছিলো-সমাজ পরিবর্তনের কিংবা স্বপ্নে দেখেছিলো যৌথখামারের স্বপ্ন আর কিছু সবল সুন্দর শিশু। মিটিং চলছে! আর কবির মাথায় ঘুর পাক খাচ্ছে কবিতার লাইনঃ আকাশ নীল-নীল পাখি আর লাল তার উড়ান, চকিতে চকিতে তাকায় নীল চোখ তার ভাসান। আর ফাঁকে ফাঁকে বের হয়ে আসছে কিছু ম্যাজিক্যাল শব্দ। দেয়ার ইজ নো পোর্ট ইন হারারে সো উই হ্যাভ টু এরেঞ্জ ট্রাক ফ্রম ডারবান টু হারারে। থ্যাবড়া নাক উইঠা কইলোঃ ডান।

গাড়িতে উঠতে উঠতে কালা ঠোঁট কইলোঃ তুমি এতো অমনোযোগ নিয়ে এতো ভালো কাজ কিভাবে করো? কবি আকাশের দিকে চেয়ে থেকে কোনো উত্তর দিলোনা। মাথায় ঘুরছে শুধুই কবিতা। কবিতায় পরিবর্তন? হবে? না হবেনা! আবারো কথা বলে উঠলোঃ -চলো ক্যাপ্টেন কুপার্সে যাই; লাঞ্চটা সেরে নেই! -চলেন। -তুমি আজ কি দেখাইলা? কাজটা তো হয়ে গেলো কবি! -কবি? কবি কে? -তুমি কবি; মিঃ রনের সাথের সেই মেয়েটা কি বললো শুনোনি? -না- কি বলেছে? -তোমার চোখ নাকি পোয়েট আই মানে কবির চোখ! তখনি আমার মনে হইছে ডিলটা হয়ে যাবে। -আমি খেয়াল করি নাই! টোটাল ভ্যালু কতো বস? -ভ্যালু যাই হোক আমাদের দুইবছরের কাজ হয়ে গেলো।

কুত কুতে চোখের লোভী দৃষ্টিতে বললো। আবার লাফ দিলো;লাফ দিয়ে ছয় নম্বর গাড়িতে উঠতে উঠতে বল্লোঃ বস আমি একটু যাই, মতিঝিলে কাজ আছে। কালকে দেখা হবে। জানালার পাশে বসে দেখতে থাকলো ফুটপাতের মানুষদের চলা-ফেরা আর ভিতরে কন্ডাক্টরের হাঁক ডাকঃ ভাই ভাড়াটা দেন!ভাংতি দিয়েন। হারিয়ে যায় কবি, কোনো নদীর কিনারে কিংবা কংকনার উঠানে।

আহা বিষন্ন কংকনা। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.