আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! নীলা বিবর্ন একটা খোলা মাঠে হাটছে ।
একা !!
নীলা অবাক হয়ে সব লক্ষ্য করছে ! সবকিছু এমন রঙ হীন কেন ? এমন তো হবার কথা না । তাহলে ?
-আম্মু ?
নীলা পিছন ফিরে তাকাল । একটা ফুটফুটে বাচ্চা ওর দিকে দৌড়ে আসছে ! নীলা আর একটা ব্যাপার লক্ষ্য করে দেখল সব কিছু বিবর্ণ হলেও ছোট্ট বাচ্চাটা বিবর্ণ নয় !
লাল রংয়ের একটা ফ্রগ পরে আছে ! পায়ে লাল মোজা ! পোষাক দেখে তো মনে হচ্ছে বাচ্চা টা একটা মেয়ে বেবি ! পিচ্চি মেয়েটার হাতে একটা নীল রংয়ের টেডি বেয়ার ।
নীলা টেডিবেয়ার নীলার কাছে পরিচিত মনে হল ।
আরে এটা তো ওরই টেডিবেয়ার ।
নীলার বয়স যখন ছয় বছর ওর ছোট মামা ওকে টেডিবেয়ারটা কিনে দিয়েছিল । টেডিবেয়ারটা মেয়েটি পেল কিভাবে ?
আর পিচ্চি মেয়েটি ওকে আম্মু বলে ডাকছে কেন?
নীলা কিছু বুঝতে পারে না !
পিচ্চি মেয়েটি নীলার কাছে এসেই ওকে জড়িয়ে ধরলো !
-আম্মু আমার ক্ষুদা লেগেছ তো !!
নীলা কিছুক্ষন অবাক হয়ে পিচ্চি মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলো ! মেয়েটার চোখ দুটো একদম ওর নিজের মত ! আর চুলের রংটাও খানিকটা ওর মত ! নীলা আস্তে আস্তে আবিষ্কার করে পিচ্চি মেয়েটার সব কিছুই ওর নিজের মত !
তাহলে কি এটা ওর মেয়ে ??
ওর নিজের মেয়ে !!
নীলা কেন জানি খুব মায়া অনুভব হল এই মেয়েটার জন্য !!
মনের ভিতর একবার এক ধরেন আকুলতা সৃষ্টি হল মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরার জন্য !
নীলা যখন পিচ্চি মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরতে যাবে ঠিক তখনই চারপাশ কেমন অন্ধকার নেমে এল । কোথা থেকে যেন কিছু জন্তুর চিৎকার ভেসে এল । সেই আওয়াজ এই পৃথিবীর কোন প্রাণীর হতে পারে না ।
নীলার মনে হল তার মেয়েটা নিশ্চই ভায় পাবে ! ওকে একটু জড়িয়ে ধরা উচিৎ !
কিন্তু পিচ্চি মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরতে গিয়েই নীলা আবিষ্কার করলো মেয়েটা ওর কাছে নেই !
চারি পাশে কেমন ঘুরঘুটে অন্ধকার ! নীলা অন্ধের মত হাত রাতে লাগলো তার মেয়েটার জন্য ! কিন্তু কোথাও পেল না !
তারপর হঠাৎ করে যেমন কারেন্ট চলে আসে তেমনি যেন আলো ফিয়ে এল । নীলা কেবল দেখতে পেল তার পিচ্চি বেবিটা দৌড়াচ্ছে ! তার পিছনে দোপেও সাদা মত কেউ দৌড়াচ্ছে !
কিন্তু সেটা মানুষ না !
পিচ্চি মেয়েটা চিৎকার করছে ! বারবার বলছে
-আম্মু আমাকে বাঁচাও ! আম্মু আমাকে মেরে ফেলতে দিও না !
কিন্তু নীলার যেন কিছুই করার নাই !
কেবল চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া !!
কিন্তু আম্মু আমাকে বাঁচাও এই লাইনটা যেন নীলার কানের কাছে বাজতেই লাগলো !
সাদা মত যন্তটা যখনও পিচ্চি মেয়েটাকে ধরতে যাবে ঠিক তখনই নীলা চিৎকার করে উঠল ! চিৎকার করতে করতেই নীলার ঘুম ভেঙ্গে গেল !
ওহ গড !!
এতোক্ষন তাহলে ও স্বপ্ন দেখছিল !
কিন্তু এতো বাস্তব ! নীলার বুকটা এখনও ধড়ফড় করছে !
-কি হয়েছে ?
নীলা শূন্য দৃষ্টিতে সুমির দিকে তাকাল । সুমি ওর রুমমেইট । নীলার চিৎকার শুনে ওর কাছে এসেছে !
সুমি আবার বলল
-কি হয়েছে ? খারাপ কিছু দেখেছিস ? নে পানি খা !
সুমি এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিল নীলার দিকে । এক চুমুকে পানিটা খাওয়ার পর নীলা খানিকটা সুস্থির হল !
সুমি নীলার সামনে বসতে বসতে বলল
-কি দেখেছিস স্বপ্নে বল? খারাপ কিছু ?
নীলা মাথা ঝাকালো ! বলল
-সে আগের স্বপ্নটাই !
সুমি একটু অবাক হয় ?
-আগেরটাই ?
-হুম !
নীলা কিছুক্ষন চুপ করে থাকে ।
সুমি বলল
-রাফাত ভাইকে বলেছিস কিছু ?
-ওকে কি বলব ? এটা নিয়ে ওকে কিছু বলার নাই ! আর ও বুঝবে না !
-আরে এটা নিয়ে না ! আজকে বিকেলে কথা !
নীলা মাথা নিচ করে বলল
-না !
সুমি একটু অবাক হয়ে বলল
-কেন বলিস নাই ?
-কেন বলবো ? বল কেন বলবো ?
-দেখ তোর পারসোনার ব্যাপারে আমি নাক ঘামাতে চাই না ! কিন্তু একবার বলে দেখতিস ! কি বলে ?
নীলা কিছুক্ষন সুমির দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
-আমি সারা জীবন কখনও কারো অনুগ্রহ নিয়ে বেঁচে থাকত চাই নি ! আমি তাকে বলব তারপর সে আমাকে করুনা করবে ! সেই করুনা আমি চাই না !
-দেখ লীলু মেয়েদের এমন হলে চলে না ! তুই রাফাত ভইকে বল দেখ সব ঠিক হয়ে যাবে ।
-আমি ওকে বলেছিলাম । কিন্তু সে এখন ব্যস্ত তার ক্যারিয়ার নিয়ে !
সুমি একটু ভয়ে ভয়ে বলল
-তুই ঐটার কথা বলেছিলি ??
-কেন বলবো ? ঐটা কি বলার দরকার আছে ? ঐটা যদি বলি তাহলে তার কাছে আমি করুনার পাত্র হয়ে যাবো না ? আমি ঠেকেছি !! আমাকে উদ্ধার কর !
সুমি বলল
-কিন্তু এটার জন্য সে তো নিজেও দায়ী !
-হতে পারে । কিন্তু আমিই কি বেশি দায়ী না ? আমি ঠিকই জানতাম আমি কি করছি ! জেনেশুনেই আমি সব করেছি !
সুমি কিছু ক্ষন চুপ করে থেকে বলল
-তো ঠিক করলি ? আজকে যাবি ?
-তুই যাবি আমার সাথে ?
-চল যাই !
নীলা কি হল সুমিকে জড়িয়ে ধরলো ! ওর কেন জানি স্বপ্নের বেবিটার কথা খুব মনে পড়ছে !
কি সুইট করে বেবি টাওকে আম্মু বলে ডাকছিল !
আর বেবিটা প্রান ভয়ে দৌড়াচ্ছিল তখন ও চুপ করে দেখছিল !
কেন দেখছিল !!
ওর কি কিছুই করার ছিল না !
নীলার চোখ দিয়ে কেবল কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো !
বিকালবেলা ওরা দুজন যখন রিক্সায় উঠল তখন সূর্যের তাপ অনেকটাই কমে গেছে । রিক্সা যখন এগিয়ে চলেছে গন্তব্যের দিকে নীলার কানের কাছে কেবল ঐ একটা কথাই বাজতে ছিল !
"আম্মু আমাকে বাঁচাও ! আম্মু আমাকে মেরে ফেলতে দিওনা"
আর কিছুই যেন নীলা শুনতে পাচ্ছে না !
-এই নীলু ? এই !!
নীলা কেমন ঘোর লাগা চোখে সুমির দিকে তাকালো ! সুমি আবার বলল
-কি ভাবছিস ? চলে এসেছি তো !
নীলার প্রথমে মনে কিছু সে বুঝতে পারে নি !
তারপর সাইনবোর্ডটার দিকে তাকিয়ে দেখলো !
এইতো সপ্তা খানেক আগেই নীলা এখানে এসেছিল ! একাই ।
সকাল থেকে যখন শরীরটা ভাল যাচ্ছিল না তার উপর থেকে বমি বমি ভাব হচ্ছিল এখনই নীলার মনে খানিকটা সন্দেহ দেখা দেয় ! তখনই একবার নিজে নিজে একবার টেষ্ট করে দেখে যে টেষ্টে পজেটিভ আসছে । তবুও সোপর হওয়ার জন্য এই অখ্যাত ক্লিনিকে এসেছিল টেষ্ট করার জন্য । তখনও পজেটিভ !
ক্লিনিকের নার্স মনে হয় নীলার মুখ দেখেই বুঝেছিল যে আসছে সে অনাকাঙ্খিত । নার্স নিজে থেকেই নীলাকে অফার টা দেয় যে এখানে সহজেই সব কিছু করা হয় ! কোন সমস্যা হবে না ।
লীলার কাছে একবার মনে হয়েছিল রাফাত কে বলবে কথা টা ।
কিন্তু এই কথা বলে রাফাত কে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়াটা নীলার কাছে ঠিক মনে হয় নি ! যা হয়েছে তার জন্য রাফাত যেমন দায়ী তার বেশি সে নিজেই দায়ী ! তাহলে কেন রাফাত কে এর ভিতর টেনে আনবে !
নীলা সেদিনই সিদ্ধান্ত নেয় যে যে আসছে তাকে আর আসতে দেবে না সে !!
কিন্তু সন ঝামেলা পাকিয়ে দেয় এই স্বপ্নটা ! যেদিন থেকে নীলা সিদ্ধান্ত নেয় সেদিন থেকেই স্বপ্নটা দেখতে শুরু করে ।
নীলা কিছুতেই পিচ্ছি বেবিটার মুখটা ভুলতে পারছে না । ভুলতে পারছে না বেবিটার মা বলে ডাকা টা !
আদর করে জড়িয়ে ধরা আর আম্মু আমাকে বাঁচাও, বাঁচাও এই কথাটা !!
বারবার মনে হচ্ছে বেবিটার তো কোন দোষ নাই ! তাহলে ওকে কেন মেরে ফেলা হবে ?
কেন ?
-ফিরে চল !
নীলা নিজেই বিশ্বাস করতে পারলো যে ও নিজেই কথাটা বলেছে ! সুমি বলল
-কি বললি ?
-বললাম ফিরে চল ।
-তাহলে ?
-তাহলে কিছু না !
-রাফাত ভাইকে বলবি ?
-না । জানি না ! চল এখান থেকে ! আমার মেয়ে ভয় পাচ্ছে !
সুমি কিছু বলতে গিয়েও বলল না ! কেবল চেয়ে রইলো নীলার দিকে ! তারপর রিক্সায়ালা কে রিক্সা ঘোড়াতে বলল !
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।