লে রাজনৈতিক হাঙ্গামা হবে, বিরোধীরা ইস্যু পেয়ে যাবে, তাদের হাতে আন্দোলনের হাতিয়ার তুলে দেয়া হবে বিশ্বব্যাংক প্যানেলের কাছে এমন যুক্তিই তুলে ধরেছিলেন দুদক কর্মকর্তারা। দুদক কর্মকর্তাদের ওই যুক্তির সঙ্গে একমত হতে পারেননি বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলের প্রধান গ্যাব্রিয়েল ওকাম্পো দুদকের যুক্তির পর সাফ জানিয়ে দেন- সরি, এটা আপনাদের ঝামেলা, আপনাদের বিষয়। আলোচনা ভেঙে যায় এখানেই। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে আসামির তালিকায় অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে তাদের যুক্তি ও মনোভাব বদলায়নি দুদক, অবস্থান পরিবর্তন করেননি বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধিরাও।
দুদক সূত্রে আরও জানা গেছে, ওই একটি নাম নিয়ে মূলত দুদকের সঙ্গে বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধি দলের দুই দিনে তিন বার বৈঠক হয়েছে। দু’পক্ষই অনড় থেকেছে শেষ পর্যন্ত। মীমাংসা হয়নি। ‘উই আর লিবিং’ বলে বাংলাদেশ ছেড়েছেন বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধি দলের প্রধান ওকাম্পো। পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির বিষয় তদন্ত করতে গঠিত দুদকের তদন্ত দল দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে গত ৪ঠা ডিসেম্বর তাদের অনুসন্ধান প্রতিবেদন জমা দেয়।
সূত্র মতে, অনুসন্ধান প্রতিবেদনে সৈয়দ আবুল হোসেনকে অভিযুক্ত করে মামলার সুপারিশ করা হলেও তা নাকচ হয়ে যায় কমিশনে গিয়ে। আবুল হোসেনকে আসামি করা না করা নিয়ে দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়ে কমিশন। কর্মকর্তাদের সুর বদল হতে থাকে। কেউ কেউ বলা শুরু করেন সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে দালিলিক কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সূত্র মতে, বিশ্বব্যাংক প্যানেলের বিশেষজ্ঞরা তাদের যুক্তি তুলে ধরে জানিয়ে দেন, পরামর্শক হিসেবে কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনের কর্মকর্তা রমেশ সাহার ডায়েরিতে যাদের নাম পাওয়া গেছে ওইসব নামের ভেতর প্রথম নামটিই সৈয়দ আবুল হোসেনের।
রমেশ সাহাও সেটা স্বীকার করেছেন। এছাড়া সৈয়দ আবুল হোসেন চার বার মূল্যায়ন কমিটি বদলের পেছনে কাজ করেছেন। বিশ্বব্যাংক প্যানেলের পক্ষে বলা হয়, এখানে মন্ত্রণালয় চালান মন্ত্রীরা, তারাই মন্ত্রণালয়ের প্রধান। এখানে মন্ত্রীদের কথা ছাড়া তার দপ্তরে কোন কাজ হয় না। সে কারণে যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে সৈয়দ আবুল হোসেন দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের দায় এড়াতে পারেন না।
অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, এসএনসি লাভালিন কিভাবে পরামর্শক হিসেবে কাজ পেল? এর পেছনে কারা কলকাঠি নেড়েছে তার সব কিছু সম্পর্কেই অবগত হয়েছে বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধি দল। সেখানে সৈয়দ আবুল হোসেনের ভূমিকাও তাদের নখদর্পণে। দুর্নীতির বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে বিশ্বব্যাংকের কাছে অভিযোগ পাঠানো হয়েছিল বাংলাদেশে ব্যবহৃত একটি মেইল থেকে। সূত্র মতে, মূল্যায়ন কমিটি এসএনসি লাভালিনকেই প্রথম পছন্দ করেছিল এটা ঠিক নয়, দরপত্র বাছাইয়ে তাদের প্রথম পছন্দের প্রতিষ্ঠান ছিল হালকো গ্রুপ। কিন্তু মূল্যায়ন কমিটি তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকতে পারেনি।
জানা গেছে, কি কারণে এবং কার জন্য মূল্যায়ন কমিটি তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকতে পারেনি সে বিষয়গুলোও উঠে এসেছে অনুসন্ধানে এবং সেটা জানা আছে বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধি দলের। একটি ফোন কলে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের হাওয়া বদলে যায়। বদলে যান মন্ত্রণালয়ের প্রধান ব্যক্তিও। অসহায় হয়ে পড়েন মূল্যায়ন কমিটির লোকেরাও। দুদকের সঙ্গে বৈঠকে হাসতে হাসতে সে বদলে যাওয়ার অভাসও দিয়েছেন ওকাম্পো।
ম্যাসেজটি অনেকটা ক্লিয়ার করে আরও কয়েকটি নাম উচ্চারণ করে ওকাম্পো বলেছেন, আমরা তো তাদেরকে আসামি করতে বলছি না। সৈয়দ আবুল হোসেনকে কেন আসামি করবেন না?
সূত্র মতে, নানা যুক্তি অকার্যকর হওয়ার পর বলা হয়েছে রাজনৈতিক যুক্তি। বলা হয়েছে, আবুল হোসেনকে আসামি করা হলে বিরোধীরা রাজনৈতিক ইস্যু পেয়ে যাবে। তাদের হাতে কথা বলার হাতিয়ার তুলে দেয়া হবে। দেশে রাজনৈতিক হাঙ্গামার সৃষ্টি হবে।
তাদের ওই সব যুক্তির সঙ্গে একমত না হতে পেরে গুডবাই জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধি দল।
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।